Categories: সারাদেশ

কাপাসিয়ায় বাংলাদেশের প্রথম উপাচার্য দম্পতিকে দেয়া হলো উষ্ণ-সংবর্ধনা

অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটন, কাপাসিয়া (গাজীপুর) থেকেঃ বাংলাদেশের শিক্ষার ইতিহাসে এই প্রথম স্বামী-স্ত্রী দুজনেই অধ্যপনা পেশার সর্বোচ্চ সম্মানজনক পদে নিযুক্ত রয়েছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক স্বামী- স্ত্রী দু’জনেই দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এ ঘটনা দেশের ইতিহাসে বিরল ও প্রথম। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একসাথে স্বামী-স্ত্রী উপাচার্য নিযুক্ত হওয়ায় আনন্দের ঢেউ লাগে কাপাসিয়ায় সচেতন মহলে। ইতিহাসের এ বিরল ঘটনার প্রেক্ষিতে ১৬ জুন,বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সনমানিয়া ইউনিয়নের ডা: আব্দুল আজিজ উচ্চ বিদ্যালয়ে এই সফল উপাচার্য দম্পতিকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে নাগরিক উষ্ণ সংবর্ধনা।

সনমানিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহাদাত হোসেন মাষ্টারের সভাপতিত্বে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ড. মো: সাইফুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মঞ্জুরুল হক মুকুল, উপজেলা আওয়ামীলীগ সদস্য আব্দুল হক, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন হান্নান, সাবেক ব্যাংকার আব্দুল আওয়াল, ডা: আব্দুল আজিজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান এবং স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি,সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।

এদিকে উপাচার্য দম্পতি এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সফল ও সুন্দর জীবন গড়তে বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।

চুয়াডাঙ্গার বেসরকারী ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’র উপাচার্য হিসেবে নিয়োজিত আছেন স্বামী অধ্যাপক ড. মো: হযরত আলী এবং স্ত্রী অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই উপাচার্য হওয়ায় দেশের প্রথম উপাচার্য দম্পতি হিসেবে তারা পরিচিতি পেয়েছেন।

১. অধ্যাপক ড.মোঃ হযরত আলীর বর্ণাঢ্য জীবনঃ অধ্যাপক ড মো: হযরত আলী বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি রাজধানীর শেরে-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) কোষাধ্যক্ষ, সিন্ডিকেট সদস্য, ডিন, কৃষি বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

অধ্যাপক ড.মো: হযরত আলী শেরে-ই-বাংলা (শেকৃবি) শিক্ষক সমিতির উইড সাইন্স সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি এবং জার্নাল অব এগ্রিকালচারাল সাইন্স এ্যান্ড টেকনোলজির সম্পাদনার দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় গবেষণামূলক কাজ করেছেন। ড মো: হযরত আলীর শতাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও ড.মো: হযরত আলীর কৃষিতত্ত¡ বিষয়ে ৫টি গ্রন্থ বের হয়েছে। তার তত্ত্বাবধানে অনেক ছাত্র-ছাত্রী স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। শিক্ষা ও গবেষণার কাজে তিনি ১৫টি দেশ ভ্রমণ করেছেন।

২.অধ্যাপক ড.হাফিজা খাতুনের বর্ণাঢ্য জীবনঃ অপরদিকে অধ্যাপক ড.হাফিজা খাতুন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরে গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কুমুদিনি কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজে শিক্ষকতা করার পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ৪০ বছরের শিক্ষকতা জীবনে অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করেছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে তার শতাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এবং অধিক গবেষণাকর্ম যা বিভিন্ন বইয়ের অধ্যায়ে প্রকাশিত হয়েছে। তার রচিত ৯ টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

তিনি দীর্ঘদিন ধরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এবং উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে দেশ-বিদেশে নীতিনির্ধারকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। ঢাবির দুর্যোগ গবেষণা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালকসহ পদ্মা সেতু, যমুনা সেতু,লালন শাহ সেতু,ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, চট্টগ্রাম রিংরোড, পাবত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন প্রকল্প,কর্নফুলী টানেলে পরামর্শকের কাজ করেছেন। সামাজিক সুরক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি নীতিনির্ধারণের অনেক সিদ্ধান্ত এবং উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে অবদান রেখেছেন। তিনি চীনের নানজিং-এর হোহাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনর্বাসন জাতীয় গবেষণা কেন্দ্রের একাডেমিক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। এছাড়াও তিনি বুয়েটের আর্কিটেকচার বিভাগের প্রতিবেশ জার্নালের সম্পাদকীয় বোর্ড সদস্য। তিনি ইতিমধ্যে ২৫টিরও অধিক দেশ ভ্রমন করেছেন। অধ্যাপক ড.হাফিজা খাতুন শিক্ষকতা ও গবেষণা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। কানাডার মাঠ পর্যায় থেকে ডাইনোসরের ফসিল সংগ্রহ করে তিনি বিনামূল্যে জাতীয় জাদুঘর ও বিজ্ঞান জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য দান করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ট্রাস্ট ফান্ডে তিনি ২০ লক্ষ টাকা দান করেছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ নদী বাচাঁও আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ নদী রক্ষা আন্দোলনের অগ্রপথিক তিনি। আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। দেশ ও সমাজের উন্নয়ন সাধনকল্পে বিভিন্ন গবেষনা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৭টি ট্রাস্ট ফান্ড প্রতিষ্ঠা করেছেন।

অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন ১৯৭১ সালে তার ভাই আবুল হাসান মাসুদের সেক্টর-৩ এর অধীনে সিলেট ফ্রন্টে সম্মুখযুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই করেছেন। আবুল হাসান মাসুদ সেক্টর-২ এর আওতাধীন ঢাকা মহানগরীর কোতোয়ালী থানার বংশালের গেরিলা কমান্ডার ছিলেন।

ড. হাফিজা খাতুন জার্নাল অব দ্য এশিয়াটিক সোসাইটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা ইউনিভার্সিটি জার্নাল অব আর্থ এ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স, ওরিয়েন্টাল জিওগ্রাফারসহ অনেক জার্নাল সম্পাদনা করেছেন।

banglaekattor

Recent Posts

মায়ের পথ অনুসরণ করে চলচ্চিত্রে দিতিকন্যা লামিয়া

ঢাকাই সিনেমার প্রবাদপ্রতিমা অভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতির মেয়ে লামিয়া চৌধুরী চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে তার মায়ের…

৫ ঘন্টা ago

আমরা দেখলাম, কীভাবে একজন ন’টীর জন্ম হয় : বন্যা মির্জা

নেটফ্লিক্সে আজ মুক্তি পাচ্ছে অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন অভিনীত প্রথম হিন্দি ওয়েব ফিল্ম ‘খুফিয়া’। এ…

৭ মাস ago

প্রকাশ্যে এলো রাজ-বুবলীর ‘গোপন’ রহস্য

বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় দুই অভিনয়শিল্পী শরিফুল রাজ ও শবনম বুবলী। কয়েক দিন আগে জানা গিয়েছিল,…

৭ মাস ago

পরীমণি এত টাকা কোথায় পান, জানালেন নিজেই

ক’দিন আগেই চিত্রনায়ক শরিফুল রাজের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ সেরেছেন নায়িকা পরীমণি। এখন পুত্র রাজ্যকে ঘিরেই…

৭ মাস ago

‘খেলা হবে’র পর নতুন সূচনা পরীমণির

মা হওয়ার সুবাদে দুই বছর কাজ থেকে দূরে ছিলেন। সেই বিরতি কাটিয়ে কাজে নিয়মিত হচ্ছেন।…

৭ মাস ago

শুভশ্রীর ৪০ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল

টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের ৪০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে…

৭ মাস ago