Categories: সারাদেশ

‘ঘরে এক মুঠো চাল নেই, মেয়ে শুকনো রুটি খেয়ে স্কুলে গেছে’

‘মেয়েটা সকালে একটা রুটি খেয়ে স্কুলে গেছে। স্কুল ছুটি হলেই বাড়ি এসে ভাত খেতে চাইবে। ঘরে এক মুঠো চাল নেই। তাই রাস্তায় বের হইছিলাম সাহায্যের আশায়। ১০০ টাকা পাইছি। এই দিয়ে চাল-ডাল কিনে বাড়ি যাব। দিনের পর দিন শুধু কচুশাক দিয়ে ভাত খাইছি। মেয়েটা একটু গোশ-মাছের আবদার করে। কেমন করে আমি তার সে আবদার পূরণ করব। দুই বছর ধরে অসুস্থ। অসংখ্যবার কেঁদেছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলেছি, তুমি আমারে সুস্থ করে দাও। আমি যেন আবার কাজ করতে পারি।’ আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন বাগেরহাট পৌর শহরের খারদ্বার এলাকার মো. ইখলাস শিকদার (৪২)।

জানা গেছে, ইখলাস শিকদার রংমিস্ত্রির কাজ করতেন। তার আয়ে বেশ ভালোই চলছিল সংসার। হঠাৎ এক দিন স্ট্রোক করেন। পরে আবারও স্ট্রোক করেন। তবে দুইবারের এই ধকল সামলে উঠতে পারেননি তিনি। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় কোনো রকম চিকিৎসা করালেও অর্থাভাবে এখন ওষুধও কিনতে পারেন না।

মঙ্গলবার দুপুরে বাগেরহাট সদরের দরগার মোড়ে এই প্রতিবেদককে ইখলাস শিকদার বলেন, বাড়িতে বাবা-মা, স্ত্রী ও ছোট মেয়ে রয়েছে। যখন কাজ করতে পারতাম, তিন বেলা খেয়ে-পরে ভালো ছিলাম। অসুস্থ হওয়ার পর ঠিকমতো হাঁটতেই পারি না। বাবা স্থানীয় মসজিদের খাদেম হিসেবে তিন চার হাজার টাকা পায়। স্ত্রী মানুষের বাড়িতে কাজ করে দুই-আড়াই হাজার টাকা পায়। এই টাকা দিয়ে কোনো রকম আমার সংসার চলে। আমি আজ বড় অসহায়। কিন্তু আমি তো চেয়ে চিন্তে খেতে চাই না। আমি সুস্থ হতে চাই, কাজ করে খেতে চাই। ডাক্তার বলেছে ৬০ হাজার টাকা হলে আমার বিভিন্ন টেস্ট আর চিকিৎসা করা যাবে। সাহায্যের আশায় সমাজসেবা অফিসে গেছি, উপজেলায় গেছি কিন্তু এখনো কিছু পাইনি।

স্থানীয় সংবাদকর্মী শেখ সোহান বলেন, অনেক আগে থেকেই ইখলাস ভাইকে চিনি। দেশের অনেক জায়গায় রংমিস্ত্রির কাজ করেছেন তিনি। সংসারে সংকট থাকলেও অভাব ছিল না তেমন। কিন্তু দুই বছর ধরে অসুস্থ থাকায় তিনি নিঃস্ব। এ অবস্থায় সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসতেন, তাহলে পরিবারটি বেঁচে যেত।

ইখলাস শিকদারের মা রাবেয়া বেগম বলেন, ভাঙাচোরা গোলের ঘরে কোনো রকম থাকি। আমাদের নিজস্ব কোনো জায়গা নেই। ছেলের চিকিৎসা করানোর টাকাও নেই। কতজন তো সরকারি বরাদ্দের ঘর পায়, আমরা এত অসহায় তবু পাই না।

প্রতিবেশী রেশমি আক্তার বলেন, পরিবারটি সত্যিই খুব অসহায়। সংসারই ঠিকমতো চলে না। চিকিৎসা করাবে কীভাবে? আমরা এলাকাবাসী মাঝে মাঝে একটু খাবার, সামান্য টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্যে করি। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল। এ অবস্থায় সমাজের বিত্তবানদের পরিবারটির প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, আপনার মাধ্যমে ওই ভদ্রলোকের অসহায়ত্বের কথা শুনলাম। আমরা দ্রুতই চেষ্টা করব তার খোঁজ-খবর নেওয়ার। খোঁজখবর নিয়ে ইখলাসকে যথা সম্ভব সহযোগিতার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা। ইখলাস শিকদারকে কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে ০১৪০৭-২১১৮৬২ এই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।

banglaekattor

Recent Posts

মায়ের পথ অনুসরণ করে চলচ্চিত্রে দিতিকন্যা লামিয়া

ঢাকাই সিনেমার প্রবাদপ্রতিমা অভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতির মেয়ে লামিয়া চৌধুরী চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে তার মায়ের…

১ সপ্তাহ ago

আমরা দেখলাম, কীভাবে একজন ন’টীর জন্ম হয় : বন্যা মির্জা

নেটফ্লিক্সে আজ মুক্তি পাচ্ছে অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন অভিনীত প্রথম হিন্দি ওয়েব ফিল্ম ‘খুফিয়া’। এ…

৭ মাস ago

প্রকাশ্যে এলো রাজ-বুবলীর ‘গোপন’ রহস্য

বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় দুই অভিনয়শিল্পী শরিফুল রাজ ও শবনম বুবলী। কয়েক দিন আগে জানা গিয়েছিল,…

৮ মাস ago

পরীমণি এত টাকা কোথায় পান, জানালেন নিজেই

ক’দিন আগেই চিত্রনায়ক শরিফুল রাজের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ সেরেছেন নায়িকা পরীমণি। এখন পুত্র রাজ্যকে ঘিরেই…

৮ মাস ago

‘খেলা হবে’র পর নতুন সূচনা পরীমণির

মা হওয়ার সুবাদে দুই বছর কাজ থেকে দূরে ছিলেন। সেই বিরতি কাটিয়ে কাজে নিয়মিত হচ্ছেন।…

৮ মাস ago

শুভশ্রীর ৪০ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল

টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের ৪০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে…

৮ মাস ago