বাংলাদেশের লোকেরা রোকেয়াকে মাথায় তুলে নাচেন, আর আমাকে পায়ের তলায় পিষে মারেন

বাংলাদেশের লোকেরা রোকেয়াকে মাথায় তুলে নাচেন আর একই রকম সত্য উচ্চারণের জন্য আমাকে পায়ের তলায় পিষে মারেন। কারণটি কী?
রোকেয়া ঘোমটা পরতেন, পর্দা করতেন। স্বামী পঙ্গু হলেও স্বামীকে ত্যাগ করেননি। আমি ঘোমটা পরি না, পর্দা করি না। স্বামী পঙ্গু না হলেও স্বামীকে ত্যাগ করেছি।

রোকেয়া মুসলিম মেয়েদের জন্য ইস্কুল খুলেছিলেন স্বামীর টাকায় স্বামীর পরামর্শে, স্বামী তাঁর লেখা পত্র পত্রিকায় ছাপানোর জন্য পাঠাতেন, লেখার জন্য প্রেরণা দিতেন। স্বামীর অধীনে থেকে নিজের স্বাধীন মত প্রকাশ করতেন রোকেয়া। আমি স্বনির্ভর, কারো অধীনে থাকি না, নিজের মত সে যত ভিন্নই হোক অন্যদের মতের চেয়ে, নির্দ্বিধায় প্রকাশ করি।

শুধু মুসলিম মেয়ে নয়, ধর্ম বর্ণ জাতি নির্বিশেষে আমি জগতের সকল মেয়ের সমানাধিকারের জন্য সরব হয়েছি। স্বামী জাতীয় কিছু আমাকে নিরাপত্তা দেয় না। কোনও পুরুষের পরামর্শে চলি না, আমার একার সিদ্ধান্তে একার চলাকে লোকে ঔদ্ধত্য বলে বিবেচনা করে।

ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে রোকেয়া লিখলেও রোকেয়ার বিরুদ্ধে ফতোয়া দেওয়া হয়নি, তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়নি। কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেনি, তাঁর বই নিষিদ্ধ করেনি কোনও সরকার। তাঁকে কোনও দেশ ব্রাত্য করেনি, নির্বাসনে যেতে বাধ্য করেনি। তাঁর দেশে-প্রবেশের দ্বার চিরকালের জন্য বন্ধ করে দেয়নি। সবই আমার বিরুদ্ধে হয়েছে, তাই বাংলাদেশের মুসলমানেরা আমাকে সগৌরবে চরম অসম্মান করে।

রোকেয়া পুরুষ-বন্ধুদের নিয়ে ক্যাফেতে আড্ডা দিতেন না, আমি পুরুষ-বন্ধুদের নিয়ে ক্যাফেতে আড্ডা দিই। রোকেয়া যদিও মনে করতেন কোরান পুরুষের লেখা কিন্তু কখনও বলেননি বা লেখেননি যে তিনি নাস্তিক। আমি শতবার বলেছি এবং লিখেছি যে আমি নাস্তিক।

পুরুষতন্ত্রের তীব্র সমালোচনা করতেন রোকেয়া কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক নিয়ম মেনে চলতেন । আমি পুরুষতন্ত্রের তীব্র সমালোচনা করি এবং পুরুষতান্ত্রিক নিয়ম মেনে চলিনা। রোকেয়া মৃত, আমি জীবিত। নারীবিদ্বেষী সমাজ মৃত নারীবাদীদের ভয় পায় না, তাদের মেনে নেয়। কিন্তু জীবিত নারীবাদীদের ভয় পায়, তাদের সহ্য করে না।