এ যেন এক থ্রিলার মুভি!

মায়ের গর্ভে থাকতেই বাবা ছেড়ে যান। পৃথিবীতে আসার কিছুদিনের মধ্যে মাও ছেড়ে যান কামনা খাতুনকে। খোঁজ খবর রাখেন না। তাই মাত্র ৪ বছর বয়সেই কামনার ঠাঁই হয় নানাবাড়িতে। তখন থেকে নানা সামশুল শেখই তার বাবা, তার মা, তার সব।

বাবা-মা হা’রানো কামনা ছিলেন সামশুল হকের চোখের মণি। তাকে কখনোই চোখের আড়াল হতে দিতেন না। চোখে চোখেই রাখতেন সবসময়। এমনকি রিকশা চা’লানোর সময় নাতনিকে সাথে নিয়েই রিকশা চালাতেন। রোদে পুড়লে নাতনি ক’ষ্ট পাবে তাই খাবারের টাকা উঠলেই বাড়ি ফিরতেন! পরিবারের সদস্যদের অন্ন জুটাতেই হিমশিম খাওয়া সামশুল নিজ স’ন্তানদের পড়াশোনা না করালেও নাতনিকে ঠিকই দিয়েছেন জ্ঞানের আলো।

দিন এগিয়ে গেলে দুঃখ পিছু ছাড়েনা কামনার। ‘গ্রামীণ নিয়মে’ ১৬ বছর বয়সেই তার বিয়ে হয় হাসান নামের একজনের সাথে। কিন্তু হাসানের নি’র্যাতনে সেই সংসার টেকে ১৮ মাস! হাসানকে তা’লা’ক দেন কামনা। শ্বশুর বাড়ি থেকে আবারও ফিরেন নানা বাড়ি। তিনমাস পরে দুইজনের মধ্যে সমঝোতা হলে ফের বিয়ে করেন পরস্পরকে। কামনাও ফিরেন শ্বশুর বাড়ি।

তবে এবার সংসার টেকে ৩ মাস! তাই আবারও নানা বাড়ি ফিরেন কামনা। কিন্তু নানা বাড়ি ফেরার পর আবারও তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন হাসান! শুধরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্তু এবার কামনার আর মন গলে না। এতে ক্ষেপে যান হাসান। মোবাইলেই গা’লিগা’লাজ করে, হ’’ত্যার হু’মকিও দেন!

গত ২৯ নভেম্বর রাতে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে হঠাৎ চি’ৎকার করে উঠেন সামশুল। সবাই ছুটে গেলে সামশুল বলে উঠেন, ‘হাসান আমাকে শেষ করে দিল’। সামশুলের ঘাড়ে তখন ই’নজেকশন পুশ করা! যন্ত্রনায় ছ’টফট করছিলেন তিনি। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও দুই দিন পরই মৃ’ত্যকোলে ঢলে পড়েন তিনি। নিজের শেষ আশ্রয়স্থল নানাকেও হা’রিয়ে ফে’লেন কামনা।

সামশুলের মৃ’ত্যুর সাথে সাথেই হাসানের বি’রুদ্ধে মা’মলা করে সামশুলের পরিবার। মৃ’ত্যুর আগে তার নামও বলে যান সামশুল। তাই গ্রে’ফতার করা হয় হাসানকে। কিন্তু কামনাকে নি’র্যাতন, হ’’ত্যার হু’মকির কথা স্বীকার করলেও হ’’ত্যার কথা অস্বীকার করেন হাসান। পরে নানা ঘটনা পরম্পরায় জি’জ্ঞাসাবাদ করা হয় কামনাকে। দফায় দফায় জি’জ্ঞাসাবাদে নাটকীয় মোড় পায় মা’মলা। কামনা স্বীকার করেন, ঘাড়ে ই’নজেকশন পুশ করে নানাকে নিজেই খু’ন করেছেন তিনি!

হাসানের সাথে ডি’ভোর্সের আগেই কামনা সম্পর্কে জড়ান রাশেদের সাথে। সেই ছেলের সাথে সম্পর্কের কথা জেনে যান নানা, বকাঝকাও করেন। পরে রাশেদের বুদ্ধিতেই ঘুমন্ত নানার ঘাড়ে কিটনাশক ভর্তি ই’নজেকশন পুশ করেন কামনা। নানা উঠেই রাশেদকে দেখেন। কিন্তু হাসানের চেহারার সাথে মিল থাকায় অন্ধকারে তাকে হাসানই মনে করেন। তাই হাসানের নামই বলতে থাকেন। পরকিয়া ভালবাসাকে বাঁচাতে নিজ হাতেই নানাকে খু’ন করেন কামনা! কিন্তু কোন ভালবাসাই জুটলোনা তার কপালে! কামনা এখন কা’রাগারে! প্রেমিক রাশেদও কা’রাগারে! আর তার মা ছুটছেন থানা থেকে কা’রাগারে!

কামনার শৈশব, কৈশোরের সংগ্রাম, নানার ভালবাসা, তার বিয়ে, বিচ্ছেদ, হ’’ত্যা, স্বামী আ’সামি হওয়ার পর নাতনিই খু’নী হিসেবে ধরা পড়া- সব মিলিয়ে থ্রিলার একটি সিনেমাই যেন দেখলাম গত পাঁচদিন ধরে। কিন্তু দিনশেষে সত্যটাই বের করে আনল টিম চুয়াডাঙ্গা। মূল অ’পরাধী ধরার পাশাপাশি একজন নিরীহের জীবনও রক্ষা করেছে টিম চুয়াডাঙ্গা।

বিশেষ ধন্যবাদ মুহাঃ মাসুদুর রহমান, পুলিশ পরিদর্শক (ত’দন্ত)
চুয়াডাঙ্গা সদর থানাকে।
মোহাম্মদ মহসিন পিপিএম মহোদয়য় এর ফেসবুক থেকে সংগৃহীত