নিজেকে ‘নবী’ দাবিকারী পাকিস্তানি নারীর মৃত্যুদণ্ড

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-কে শেষ নবী না মেনে নিজেকে নবী দাবি করার অভিযোগে পাকিস্তানে সালমা তানভির নামে এক নারীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে আদালত। সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) অতিরিক্ত জেলা ও সেশন জজ এই রায় প্রদান করেন। এ খবর প্রকাশ করেছে পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডন ও সামা টিভি। প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত সালমা ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তার নিজের এলাকায় লিখিত ডকুমেন্ট প্রকাশ করেন এবং তা বিতরণ করেন। এতে তিনি খতমে নবুওয়াতকে অস্বীকার করেন। নিজেকে নবী বলে ঘোষণা করেন। স্থানীয় অধিবাসীরা বিষয়টি আমলে নেওয়ার পর তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

এরপর তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্বলিত ডকুমেন্ট দাখিল করে নিশতার কলোনি পুলিশ। এতে তাকে দোষী দেখানো হয়। এ নিয়ে প্রায় দেড় বছর মামলা চলে। এ সময়ে অভিযুক্ত সালমার পক্ষে প্রথম যে আবেদন করা হয়, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। এ ঘোষণার পর একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। তারা সালমাকে বিচারের জন্য আনফিট বা যোগ্য নন বলে ঘোষণা করে। কিন্তু মামলা চলমান অবস্থায় থাকে প্রায় দুই বছর। শেষ পর্যন্ত তার মেডিকেল চেক করে জেল কর্তৃপক্ষ। এরপর তারা আদালতকে লিখিতভাবে জানায়, সালমা বিচারের মতো সুস্থ অবস্থায় আছেন।

আবার বিচারকাজ শুরু হয়। সেখানে বিবাদীপক্ষের দাবি তুলে ধরা হয় আবারও। বলা হয়, সালমা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন ঘটনার সময়। অন্যদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট গুলাম মুস্তাফা চৌধুরী যুক্তি তুলে ধরেন- একজন অভিযুক্তকে মানসিক ভারসাম্যহীন হিসেবে বিচার শুরুর দেড় বছর পরে আবেদন দাখিল করা যেতে পারে কিনা। তিনি প্রশ্ন রাখেন কিভাবে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন নারী একটি স্কুল পরিচালনা করেন এবং ক্লাসে শিক্ষা দেন।

তিনি আরও প্রশ্ন রাখেন, কীভাবে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন নারী বেশ কয়েকবার বিদেশ সফরে গিয়েছেন? এ ছাড়া বিচার চলার সময় অভিযুক্ত সালমা তার সহায় সম্বলের অধিকার তার স্বামীর কাছে আইনি প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করেছেন। অ্যাডভোকেট গুলাম মুস্তাফা চৌধুরী তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জানতে চান, একজন মানসিক ভারসাম্যহীন নারী কীভাবে তার পক্ষে দেশের শীর্ষ আদালতে আবেদন করতে পারেন এবং কীভাবে তার আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই আবেদন অনুমোদন করেন। বিবাদীপক্ষের আইনজীবী আবারও যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তার মক্কেল ঘটনার সময়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। পাকিস্তানের দণ্ডবিধির ৮৪ ধারা অনুযায়ী একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি যা কিছু করেন তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

জবাবে প্রসিকিউশনের আইনজীবীরা বলেছেন, তারা মৌখিক এবং ডকুমেন্টের ভিত্তিতে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছেন। পক্ষান্তরে অভিযুক্ত তার পক্ষে উপযুক্ত ডকুমেন্ট জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। সালমা তার রেকর্ডেড জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাস করেন। কিন্তু ২০১৩ সালে হজের আগে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিলেন। উভয়পক্ষের যুক্তি শুনে অতিরিক্ত জেলা ও সেশন জজ অভিযুক্ত সালমার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ও ৫০ হাজার রুপি জরিমানা করেন।

banglaekattor

Recent Posts

মায়ের পথ অনুসরণ করে চলচ্চিত্রে দিতিকন্যা লামিয়া

ঢাকাই সিনেমার প্রবাদপ্রতিমা অভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতির মেয়ে লামিয়া চৌধুরী চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে তার মায়ের…

২ সপ্তাহ ago

আমরা দেখলাম, কীভাবে একজন ন’টীর জন্ম হয় : বন্যা মির্জা

নেটফ্লিক্সে আজ মুক্তি পাচ্ছে অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন অভিনীত প্রথম হিন্দি ওয়েব ফিল্ম ‘খুফিয়া’। এ…

৭ মাস ago

প্রকাশ্যে এলো রাজ-বুবলীর ‘গোপন’ রহস্য

বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় দুই অভিনয়শিল্পী শরিফুল রাজ ও শবনম বুবলী। কয়েক দিন আগে জানা গিয়েছিল,…

৮ মাস ago

পরীমণি এত টাকা কোথায় পান, জানালেন নিজেই

ক’দিন আগেই চিত্রনায়ক শরিফুল রাজের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ সেরেছেন নায়িকা পরীমণি। এখন পুত্র রাজ্যকে ঘিরেই…

৮ মাস ago

‘খেলা হবে’র পর নতুন সূচনা পরীমণির

মা হওয়ার সুবাদে দুই বছর কাজ থেকে দূরে ছিলেন। সেই বিরতি কাটিয়ে কাজে নিয়মিত হচ্ছেন।…

৮ মাস ago

শুভশ্রীর ৪০ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল

টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের ৪০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে…

৮ মাস ago