নকশী কাঁথায় ভাগ্যবদল, শাপলার অধীনে কাজ করেন ১৫০ নারী

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শহরতলির দিগনগর গ্রামের মেয়ে শাপলা। বর্তমানে বয়স মাত্র ২০ বছর। কিন্তু এই বয়সেই নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি ১৫০ নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন শাপলা।

শাপলার স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শিখে বড় কোনো কর্মকর্তা হয়ে মানুষের সেবা করবেন। তবে দারিদ্রের কষাঘাতে ধুলিসাৎ হয়ে যায় সেই স্বপ্ন। মাত্র ১৭ বছরেই বিয়ে হয়। তবুও স্বামীকে বুঝিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন শাপলা। পরীক্ষায় ভালো ফলও করেন ভর্তি হন এইচএসসিতে। তবে সংসার সামলে লেখাপড়াটা আর শেষ করা হয়নি শাপলার।

এর মাঝে স্বামীও কাজ হারান। শাপলা আবারও নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন কিছু একটা করার। আর এরপরই নকশিকাথা তৈরির কাজ শুরু করেন। ছোটবেলায় মা ও প্রতিবেশি নারীদের কাঁথা সেলাই দেখে নিজেও মায়ের কাছ থেকে কিছুটা রেপ্ত করেছিলেন।

প্রবল ইচ্ছাশক্তি নিয়ে শাপলা এগিয়ে যেতে থাকেন স্বপ্ন পূরণের আশায়। এই স্বপ্ন নিয়েই ২০১৮ সালে স্থানীয় মহিলা বিষয়ক অধিদফতর থেকে প্রশিক্ষণ নেন। তারপর সেখান থেকেই ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে শুরু হয় শাপলার সুঁই-সুতোয় স্বপ্ন বুননের গল্প। শশুরবাড়িতে গড়ে তোলেন ‘শাপলা নকশী ঘর’। শশুর-শাশুড়ি আর স্বামীর বাঁধা উপেক্ষা করেই শুরু শাপলার উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা।

প্রথমে একটা দুইটা করে নকশী কাঁথা তৈরি করে তা গ্রাম, পাড়া-মহল্লা, উপজেলা ও জেলার বিত্তবানদের কাছে বিক্রি করতেন। নকশী কাথায় তার সুনিপুণ কারুকাজ ধীরে ধারে নজর কাড়তে থাকে সমাজের সৌখিন মানুষদের। এরই মাঝে স্থানীয় মহিলা অধিদফতরের এক মেলায় নিজেকে তুলে ধরার সুযোগ পান শাপলা।

সেখানে নিজের তৈরি নকশী কাথা নিয়ে হাজির হন তিনি। নকশী কাথায় তার সুনিপুণ কারুকাজ আর অকর্ষনীয় নানা রঙের ডিজাইন নজর কাড়ে অতিথিসহ মেলায় আগত দর্শনার্থীদের। সেখানেই তার ছয়টি নকশী কাথা ন্যায্যমূল্যে কিনে নেন অতিথি ও দর্শনার্থীরা।

এরপর মহিলা অধিদফতর থেকে আবার তাকে দেওয়া হয় ৩০ হাজার টাকা ঋণ। বর্তমানে তিনি এই পেশায় একজন সফল উদ্যোক্তা হতে প্রাণপণ লড়াই করছেন। জোর দিয়েছেন নিজের শাপলা নকশী ঘর প্রতিষ্ঠানের প্রতি। সরেজমিনে শাপলার নকশী ঘরে গিয়ে দেখা যায়, আপন মনে সেখানে সুঁই-সুতো দিয়ে নকশী কাঁথা সেলাই করছেন অনেক নারীরা। এখান তার অধীনে কাজ করছেন অন্তত ১৫০ নারী। এদের কেউ গৃহিনী, কেউবা স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় নারী।

সেখানে কাজ করেন অনেক শিক্ষার্থীরাও। এদের প্রত্যেকেই এখন স্বাবলম্বী। প্রতিমাসে এই নকশী কাথার সুই-সুতোর ফোড়নে শাপলার আয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। তার অধীনে কর্মরত নারীরাও প্রতিমাসে ৩-৪ হাজার টাকা আয় করেন।

শাপলা বলেন, “প্রথমে কাঁথা সেলাই করে আমি শহরে গিয়ে বিভিন্ন দোকানে রেখে আসতাম। আর তাদের বলতাম, আমার নকশী কাঁথা আপনাদের দোকানে রাখেন; বিক্রি করতে পারলে পরে আমাকে টাকা দিয়েন। কাঁথা বিক্রি হলে তারা বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিতেন। আমার এ কাজ একদিন এক মহিলা কর্মকর্তা দেখেন। তিনি পরে আমাকে ফোন দিয়ে তার অফিসে ডেকে ১০টি কাঁথা কিনে নেন।’

শাপলা প্রতিমাসে অন্তত ২০-২৫ টা নকশী কাঁথা তৈরি করি। প্রতিটি নকশী কাঁথার দাম ১০০০-৩০০০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে জেলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে মানুষ এসব নকশী কাঁথা কিনে নিয়ে যায়। শাপলা জানান, ‘আমাকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহযোগিতা করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং মহিলা অধিদফতর।’

Sub Editor

Recent Posts

মায়ের পথ অনুসরণ করে চলচ্চিত্রে দিতিকন্যা লামিয়া

ঢাকাই সিনেমার প্রবাদপ্রতিমা অভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতির মেয়ে লামিয়া চৌধুরী চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে তার মায়ের…

১ সপ্তাহ ago

আমরা দেখলাম, কীভাবে একজন ন’টীর জন্ম হয় : বন্যা মির্জা

নেটফ্লিক্সে আজ মুক্তি পাচ্ছে অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন অভিনীত প্রথম হিন্দি ওয়েব ফিল্ম ‘খুফিয়া’। এ…

৭ মাস ago

প্রকাশ্যে এলো রাজ-বুবলীর ‘গোপন’ রহস্য

বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় দুই অভিনয়শিল্পী শরিফুল রাজ ও শবনম বুবলী। কয়েক দিন আগে জানা গিয়েছিল,…

৮ মাস ago

পরীমণি এত টাকা কোথায় পান, জানালেন নিজেই

ক’দিন আগেই চিত্রনায়ক শরিফুল রাজের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ সেরেছেন নায়িকা পরীমণি। এখন পুত্র রাজ্যকে ঘিরেই…

৮ মাস ago

‘খেলা হবে’র পর নতুন সূচনা পরীমণির

মা হওয়ার সুবাদে দুই বছর কাজ থেকে দূরে ছিলেন। সেই বিরতি কাটিয়ে কাজে নিয়মিত হচ্ছেন।…

৮ মাস ago

শুভশ্রীর ৪০ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল

টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের ৪০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে…

৮ মাস ago