প্রেম করে বিয়ে, ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিলো স্বামী

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে কাজের সন্ধানে রাজধানী ঢাকায় এসেছিলেন এক তরুণী। কাজ শুরু করেছিলেন গার্মেন্টসে। কিন্তু কাজের এক পর্যায়ে এক বাসের হেল্পার তরুণের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। কিছুদিন পর বিয়েও করেন তারা।

বিয়ের পর তরুণীটি জানতে পারেন তার স্বামী নেশাগ্রস্ত। নিয়মিত কাজে যান না। তাই সংসারে অভাব লেগেই থাকতো। এর মাঝেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন তুরুণী। নতুন মুখের আগমনের সংবাদে পরিবর্তন আসে তার স্বামীর মাঝেও। নিয়মিত কাজে যেতে শুরু করেন। তরুনীর প্রতিও যত্নশীল হয়ে ওঠেন।

কিন্তু একদিন বাসে ডিউটি করার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। পরে প্রতিবেশীকে নিয়ে তিনি যাত্রাবাড়ী ট্রান্স-সিলভা বাস কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারেন, তার স্বামী রনি নিয়মিত বাসে উিউটি করছেন এবং থাকেন মিরপুরে বাবার বাসায়। কিন্তু শ্বশুরবাড়ি গেলে তাকে জানানো হয়, রনি সেখানে থাকেন না। অন্তঃস্বত্তা তরুণী তখন সেখানে থাকতে চাইলে শাশুড়ি নাকচ করে দেন।

পরবর্তীতে তরুণী যাত্রাবাড়ীর কাজলার বাসায় ফিরে আসেন। এর মাঝেই রনির বোন ফোন করে তাকে অনাগত সন্তান নষ্ট করে ফেলতে বলেন। এজন্য চিকিৎসা খরচ দেওয়ার কথাও জানানো হয় তাকে। পরবর্তীতে দারিদ্রতার কথা ভেবে সন্তান নষ্ট করতে রাজি হন তিনি। এ জন্য ননদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে আট হাজার টাকা নিয়প অপারেশন করে সন্তান নষ্ট করেন। এরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তিনি মোহাম্মদপুরে চাঁদ উদ্যানে নানীবাড়ি চলে যান।

কিছুদিন নানীর বাসায় থাকার পর সেই তরুণী শনির আখড়ায় এক বান্ধবীর বাসায় ওঠেন। আবার গার্মেন্টেসে কাজ নেন। তিন মাস পর রনি তাকে ফোন করে ক্ষমা চান। একপর্যায়ে আবার তারা ভাড়া বাসায় সংসার শুরু করেন। মাস চারেক পর সংসার ছেড়ে আবার চলে যান রনি।

১২ দিনের মাথায় বাসায় ফিরে স্ত্রীকে জানান, ভারতে একটা বৃদ্ধাশ্রমে ৩০ হাজার টাকা বেতনে একশ’ জন আয়া নেবে। স্ত্রীকে ভারতে চাকরি করার জন্য অনুরোধ করেন। চাকরি করলে তাদের আর অভাব থাকবে না বলেও জানান স্ত্রীকে। এরপর গত ২ জানুয়ারি রনি তার স্ত্রীকে হাতিরঝিলের মধুবাগে ভারতে চাকরিদাতা ‘লেডি অফিসার’ নদীর কাছে নিয়ে যান। নদী সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে নিয়ে গিয়ে যান এবং তাকে একটি আধার কার্ড দেওয়া হয়।

কিন্তু কলকাতা থেকে চেন্নাইয়ে নেওয়ার পর নির্যাতনের শিকার হন ওই তরুণী। বিউটি ও আজহারুল নামে দু’জন তাকে জানায়- রুমে গেস্ট আসবে, তিনি যেন রেডি থাকেন তরুণী তখন নদী ম্যাডামকে ফোন করলে তারা ফোন কেড়ে নেয়। বিবস্ত্র করে মোবাইলে ছবি তোলে ও ভিডিও করে। এরপর জানায় তাদের কথা মতো কাজ না করলে বাংলাদেশে মা-বাবা ও পরিচিতদের কাছে সেই ছবি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তরুনীকে এও জানানো হয় তাকে তার স্বামী নদীর কাছে ৪০ হাজার টাকায় এবং নদী তাকে তাদের কাছে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে।

পরবর্তীতে তিনি কলকাতার এক লোকের হাত-পা ধরে দেশে ফেরার কাকুতি-মিনতি করলে লোকটি তাকে গোপনে ২০ হাজার রুপি দেন এবং গত ৩ মে ওই তরুণীকে ১০ দিনের জন্য একটি ম্যাসেজ সেন্টারে পাঠানো হলে সুযোগ বুঝে একদিন ম্যাসেজ সেন্টারের জানালার কাঁচ ভেঙে পালান তরুণী। সেখান থেকে চলে আসেন কলকাতা এবং তারপর ১০ মে চলে আসেন বাংলাদেশে।

ভারত থেকে পালিয়ে আসার পর বৃহস্পতিবার রাতে ওই তরুণী তার স্বামী জাহিদুল ইসলাম রনিসহ পাচারকারী চক্রের ৯ জনকে আসামি করে হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা করেছেন। অন্য আসামিরা হলেন, নদী আক্তার ওরফে ম্যাডাম ওরফে ইতি, আনোয়ারুল, সুজন, জিয়া, সবুজ, সালমান, বিউটি ও আজহারুল।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের এডিসি হাফিজ আল ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তরুণীর স্বামী পাচারকারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে তাকে একটি চক্রের কাছে বিক্রি করে। ওই চক্রে যারা রয়েছে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।