Categories: ভ্রমণ

অথৈ পানির মাঝে দাঁড়িয়ে দৃষ্টিনন্দন প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট

বর্ষায় নতুন যৌবন ফিরে পায় হাওরের নদীগুলো। নদীর চারপাশের নিচু জমিগুলো তখন পানিতে টই-টুম্বুর হয়ে ওঠে। দূর থেকে প্রতিটি গ্রামকে মনে হয়, জেগে উঠা এক একটি দ্বীপকুঞ্জ। আবার নীল আকাশের সঙ্গে অথৈ জলরাশির মিতালী। চন্দ্রিমা রাতে এক অপরূপ সৌন্দর্য‌্যে মুগ্ধ করে তোলে ভ্রমণপিয়াসীদের। মাঝিদের ছুটে চলা, আর জেলেদের মাছ ধরা। প্রকৃতির সকল সৌন্দর্য‌্য এক সঙ্গে দেখা মেলে হাওরে।

হাওরবেষ্টিত কিশোরগঞ্জ জেলা। ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম-নিকলী-তাড়াইল-বাজিতপুর উপজেলাগুলো নদী-নালায় ভরপুর। তাইতো বর্ষায় এসব উপজেলা গুলোতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য‌্য ফুঁটে উঠে প্রকৃতির নিয়মে। আর তা উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রকৃতি প্রেমীরা আসর জমায় হাওর পাড়ে।

বেশ কয়েক বছর ধরেই এসব এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য‌্য ভ্রমণপিয়াসীদের আকৃষ্ট করে তুলছে। তার সঙ্গে নতুন যুক্ত হাওরের অলওয়েদার রোড। যেখানে হাওরের বুক চিড়ে ছুটে বেড়ায় ইঞ্জিনচালিত গাড়ি নিজ গন্তব‌্যে। এ পথে মন ভেজাবে নীল আকাশের সঙ্গে মিতালী করা নীল জলরাশি।

তবে প্রকৃতির এত আয়োজনের মাঝেও একটি অভাব ছিল। সেটি পর্যটকদের রাত্রি যাপন। হাওরের উপজেলাগুলোতে রাত্রিযাপনের জন‌্য তেমন কোনো নান্দনিক হোটেল-মোটেল নেই। তাই দীর্ঘদিন ধরে ভ্রমণপিয়াসীদের দিনে এসে দিনেই ফিরতে হয়েছে।

তবে এবার পর্যটকদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য‌্য উপভোগের শতভাগ পূর্ণতা পাচ্ছে। হাওরে আসা পর্যটকদের থাকা-খাওয়া ও চন্দ্রিমা রাতে হাওরের অবিরাম সৌন্দর্য‌্যে উপভোগ করতে তৈরি হয়েছে প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট। হাওরের অবিরাম জলরাশির মাঝে গড়ে ওঠা দৃষ্টিনন্দন রিসোর্টটি সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুরে গড়ে তোলা হয়েছে এ রিসোর্টটি। জেলা সদর থেকে করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখলা ঘাট থেকে হাওরের ভরা যৌবনে নৌকা বা স্পিডবোটে পৌঁছাতে হবে সেখানে। যেতে যেতে পানি পথে দেখা মিলবে হাওরের নানারকম নৈসর্গিক সৌন্দর্য‌্য।

থাকা-খাওয়াসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গড়ে উঠেছে প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যাগ্রো লিমিটেড। প্রায় ৩০ একর জমির চারপাশে শুধু অথৈ পানি। মাঝে মাছ চাষের জন‌্য বিশাল একটি পুকুর। ওই পুকুরটির চারপাশ ঘিরেই সাজানো হয়েছে রিসোর্টের সমস্ত আয়োজন। পুকুরটির একপাশে পর্যটকদের থাকার জন‌্য ছোট ছোট বিভিন্ন কটেজসহ ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। অপরপাশে পর্যটকদের জন‌্য দেশি-বিদেশি খাবারের সুব‌্যবস্থা। চারপাশে সবুজ গাছপালার মনমুগ্ধকর সমারোহ।

রিসোর্টটি নির্মিত হয়েছে পানির ওপর। তাই পর্যটকরা কক্ষে বসেই উপভোগ করতে পারবেন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য‌্য। পানিতে পানকৌড়ির ডুব সাতার, চিলেদের মাঝ শিকার আর সাদা বকের ওড়াউড়ি।

তিনতারকা মানের রিসোর্টে রয়েছে— ডাবল ইউনিটের ১০টি কটেজ। যেখানে ৬০টি রুম ও একসঙ্গে ৪০টি পরিবার থাকার সুব‌্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ৪০০ মানুষের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আধুনিক আউটডোর পার্টি সেন্টার, ইনডোর রেস্টুরেন্ট। পর্যটকদের জন্য আরও রয়েছে—ওপেন কালচারাল সেন্টার, শিশুপার্ক, সুইমিংপুল, ওয়াটার বাইক ও প্যাডেল বোট।

রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যেহেতু এখনো রিসোর্টটি পুরোদমে প্রস্তুত নয়, তাই ভাড়া চূড়ান্ত হয়নি। রিসোর্টের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজে ডুপ্লেক্স কটেজগুলোর প্রতিটির ভাড়া উল্লেখ করা হয়েছ। যেখানে প্রতি রাতে কটেজ অনুযায়ী ৬ হাজার থেকে ২৮ হাজার পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

রিসোর্টে ঘুরতে আসা এক পর্যটক জনি রোজারিও রাইজিংবিডিকে জানান, হাওরে অথৈ জলরাশির মাঝে সৌন্দর্য‌্যে ভাগ বসিয়েছে এ রিসোর্টটি। এ স্থাপনার ফলে হাওরের সৌন্দর্য‌্য আরও বেশি স্বচ্ছ মনে হচ্ছে। এর চারপাশে শুধু পানি আর পানি। বহুবার এখানে ঘুরতে এসেছি, কিন্তু রাত্রিযাপনের সুব‌্যবস্থা না থাকায় ফিরে যেতে হয়েছে। এই প্রথম হাওরের মাঝে এমন ব‌্যবস্থা সত‌্যিই দারুণ। আশাকরি রিসোর্টটি পুরোদমে চালু হলে, প্রচুর দর্শনার্থীরা এখানে ভিড় করবে।

রিসোর্টের প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জহিরুল ইসলাম জুয়েল রাইজিং বিডিকে জানান, হাওরের মাঝে প্রাকৃতির সৌন্দর্য‌্য উপভোগ করতে হাজার হাজার মানুষ প্রতি বছর ভিড় করে। কিন্তু পরিবার নিয়ে রাত্রিযাপনসহ কোনো রকম সুযোগ সুবিধা না থাকায়, এ রিসোর্টটি তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। মাত্র আট মাসে আমরা এর প্রায় ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি। আশাকরছি খুব দ্রুত এর বাকি কাজ সম্পন্ন করতে পারব।

প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের ব‌্যবস্থাপনা পরিচালক ডা.এবিএম শাহরিয়ার রাইজিংবিডিকে জানান, হাওরে বর্ষার ভরা মৌসুমে প্রতিবছরই এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটকরা ভিড় করেন। কিন্তু হাওরে খাওয়া বা থাকার তেমন কোনো সুব‌্যবস্থা নেই। হাওরের দিনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য‌্য উপভোগ করার পাশাপাশি রাতের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য‌্য এবং পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার সুব‌্যবস্থায় প্রায় আটমাস ধরে উন্নতমানের এ রিসোর্টি তৈরির কাজ চলছে। বর্তমানে রিসোর্টের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। মুলত হাওরে ঘুরতে আসা ভ্রমণপিয়াসী মানুষদের উন্নত সেবা দিতেই রিসোর্টটি তৈরি করা হয়েছে।

এদিকে, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম রাইজিংবিডিকে জানান, হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারিভাবেও রেস্ট হাউজ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। মিনি সার্কিট হাউজের মতো ৩৫ কক্ষ বিশিষ্ট একটি রেস্ট হাউজ তৈরির জন‌্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ব‌্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেশ সচেষ্ট রয়েছেন।

banglaekattor

Recent Posts

আমরা দেখলাম, কীভাবে একজন ন’টীর জন্ম হয় : বন্যা মির্জা

নেটফ্লিক্সে আজ মুক্তি পাচ্ছে অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন অভিনীত প্রথম হিন্দি ওয়েব ফিল্ম ‘খুফিয়া’। এ…

৭ মাস ago

প্রকাশ্যে এলো রাজ-বুবলীর ‘গোপন’ রহস্য

বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় দুই অভিনয়শিল্পী শরিফুল রাজ ও শবনম বুবলী। কয়েক দিন আগে জানা গিয়েছিল,…

৭ মাস ago

পরীমণি এত টাকা কোথায় পান, জানালেন নিজেই

ক’দিন আগেই চিত্রনায়ক শরিফুল রাজের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ সেরেছেন নায়িকা পরীমণি। এখন পুত্র রাজ্যকে ঘিরেই…

৭ মাস ago

‘খেলা হবে’র পর নতুন সূচনা পরীমণির

মা হওয়ার সুবাদে দুই বছর কাজ থেকে দূরে ছিলেন। সেই বিরতি কাটিয়ে কাজে নিয়মিত হচ্ছেন।…

৭ মাস ago

শুভশ্রীর ৪০ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল

টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের ৪০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে…

৭ মাস ago

আল্লাহ বাঁচাইছে: পরীমণি

মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে তারকাদের নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল ‘সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ’ (সিসিএল)। সেখানে শুক্রবার (২৯…

৭ মাস ago