উ’লঙ্গ মানুষ দেখতে সবচেয়ে সুন্দর : তসলিমা নাসরিন

| আপডেট :  ২২ মে ২০২২, ০৮:৪২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২২ মে ২০২২, ০৮:৪২ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের একজন অন্যতম আলোচিত ও সমালোচিত নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সম্প্রতি মানুষের পোশাক আসাক পরিধানের বি’ষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুকে’ কটাক্ষ করেছেন তিনি। গতকাল শনিবার (২১ মে )দিকে তিনি এই নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাস্টাস দেন।

স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষনারীরা ন্যাং’টো থাকতো। বন্য পশু হ’’ত্যা করে খেতো। কাঁচা খেতো, এরপর আ’গুন জ্বা’লাতে শেখার পর আ’গুনে পু’ড়িয়ে খেতো। পশুর চামড়া গায়ে পরে শীত নিবারণ করতো। লক্ষ লক্ষ বছর আমাদের পূর্বপুরুষনারীরা ওভাবেই জীবন কাটিয়েছে। আমরা তাদের বংশধর। আমরা কাপড় আবিস্কার করেছি মাত্র কয়েক হাজার বছর আগে।

আমরা ধর্মও আবিস্কার করেছি কয়েক হাজার বছর আগে। এক বা একাধিক সৃষ্টিকর্তাকে কল্পনা করেছি, তাদের নিয়ে গল্প রচনা করেছি। এখন আমাদের রচিত সেই সৃষ্টিকর্তাকে দিয়ে আমরা বলাচ্ছি আমাদের যৌ’নাঙ্গ অ’শ্লীল, আমাদের স্ত’ন অ’শ্লীল, আমাদের নিতম্ব অ’শ্লীল, আমাদের কেশ অ’শ্লীল, আমাদের সৌন্দর্য অ’শ্লীল , সেকারণে এসব আড়াল করে রাখতে হবে। শুধু তাই নয়, আমাদের এটা খাওয়া চলবে না, ওটা ছোঁয়া চলবে না। মোদ্দা কথা, স্বাধীনতায় আমাদের কোনও অধিকার নেই।

তিনি আরও লেখেন, বিশাল বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে মানুষ নামক প্রজাতি অতি অল্পদিনের আয়ু নিয়ে জন্ম নেয়। এই স্বল্প আয়ুর মানুষ শুধু মানুষের নয়, পৃথিবীর আরও সব প্রা’ণীর জীবন দুর্বি’ষহ করে ছেড়েছে। হিংসে, দ্বেষ, ঘৃণা, ব’র্বরতা মানুষের চরিত্রে প্রবলভাবে উপস্থিত। বৈষম্যে ভরপুর এক সমাজ তৈরি করেছি আমরা। রাষ্ট্রও তৈরি করেছি আমরা, যেটি অনেক সময় আমাদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। আমাদের জানতে তো বাকি নেই যে মানুষই মানুষের সবচেয়ে বড় শ’ত্রু।

তসলিমা আরো লেখেন, মানুষ উ’লঙ্গ ঘুরে বেড়াক। আর সব প্রা’ণীর মতো। যেদিন থেকে বস্ত্র পরিধান করেছে মানুষ, সেদিন থেকে কৃত্রিমতা আর কপটতা মানষের ছায়াসঙ্গী। মানুষের এখন সময় হয়েছে আর সব প্রা’ণীর মতো হওয়া। আর সব প্রা’ণী মানুষের চেয়ে সহানুভূতিতে, সহিষ্ণুতায়, সহজতায় সহস্র গুণ উন্নত। সত্যি কথা বলতে, উ’লঙ্গ মানুষ দেখতে সবচেয়ে সুন্দর। সেটিই মানুষের আসল পরিচয়।

মেকি একটি সমাজ তৈরি করে, সেই সমাজে মেকি একটি ধর্মকে দাঁড় করিয়ে , মানুষ যেভাবে ভ’য়ঙ্কর রকম মেকি হয়ে উঠেছে, বস্ত্রের মতো মেকি জিনিস নিয়ে ব’র্বরতা করছে, এর একটিই সমাধান বস্ত্র বাদ দেওয়া। কপটতা ঝরে যাবে বস্ত্র ঝরে গেলে। তারপরও পুনশ্চতে বলবো, বস্ত্রহীনতার উৎসবে কেউ যদি বস্ত্র পরিধান করতে খুবই ইচ্ছুক, সেটা তার’চয়েজ’।