পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা!

| আপডেট :  ৩ এপ্রিল ২০২২, ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৩ এপ্রিল ২০২২, ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ

রাশিয়ার প্রে’সিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বি’রুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রে’প্তারি পরোয়ানার আহ্বান জানানো হয়েছে।রাশিয়ার প্রে’সিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এবার ‘যু’দ্ধাপরাধী’ অ্যাখা দিলেন আন্তর্জাতিক অ’পরাধ আ’দালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান প্রসিকিউটর কার্লা দেল পন্তে। শনিবার (২ এপ্রিল) আল জাজিরার এক লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক দৈনিক লে টেম্পসকে সাক্ষাৎকার দেন কার্লা দেল পন্তে। এ সময় তিনি পুতিনের বি’রুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রে’প্তারি পরোয়ানার আহ্বান জানান। সাক্ষাৎকারে কার্লা দেল পন্তে বলেন, ‘পুতিন একজন যু’দ্ধাপরাধী। এর আগে গত ১৬ মার্চ পুতিনকে যু’দ্ধাপরাধী বলে মা’র্কিন প্রে’সিডেন্ট জো বাইডেন। সে সময় বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি তিনি (ভ্লাদিমির পুতিন) একজন যু’দ্ধাপরাধী। বাইডেন পুতিনকে ‘যু’দ্ধাপরাধী’ বলে অভিহিত করার পর, ক্রেমলিন ত্বরিত এক প্রতিক্রিয়ায় একে ‘অগ্রহণযোগ্য’ এবং ‘ক্ষমার অযোগ্য’ বাগাড়ম্বর বলে আখ্যা দেয়।

ইউক্রেনের প্রে’সিডেন্ট ভলোদিমির জে’লেনস্কি মারিউপোলের শি’শু ও প্রসূতি হাসপাতালে রাশিয়ার হা’মলাকে বর্ণনা করেছেন যু’দ্ধাপরাধ হিসেবে । যদি তা না-ও হয় – তবুও সব যু’দ্ধেরই কিছু নিয়ম-কানুন আছে, বলে চলেছে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দা রেডক্রস, সংক্ষেপে যা রেডক্রস হিসেবেই বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত।

জেনেভা কনভেনশন নামে পরিচিত বিভিন্ন চুক্তির মধ্যে এবং নানা আন্তর্জাতিক আইন ও সমঝোতার মধ্যেই এসব নিয়ম-কানুন নিহিত আছে।মারিউপোলে শহরের একটি শি’শু ও প্রসূতি হাসপাতালে গত বুধবার এই হা’মলা চালিয়েছিলো রাশিয়া – যার তীব্র নি’ন্দা করেছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।এরপর জে’লেনস্কি একে যু’দ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেন।গত ২৪ শে ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হা’মলা শুরু করে এবং জবাবে পশ্চিমা বিশ্ব নজিরবিহীন নি’ষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির ও’পর।

যু’দ্ধাপরাধ বলতে কী বোঝায়?
বেসা’মরিক নাগরিকদের ও’পর ইচ্ছাকৃত হা’মলা করা যাবে না- এমনকি এমন কোন অবকাঠামোতেও হা’মলা করা যাবে না যা তাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। কিছু অ’স্ত্রও নি’ষিদ্ধ, কারণ এসব অ’স্ত্র ব্যবহার করলে সবাই ক্ষ’তিগ্রস্ত হয়। যেমন অ্যান্টি-পার্সোনেল ল্যান্ডমাইন, কেমিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল অ’স্ত্র। অ’সুস্থ বা আ’হতকে অবশ্যই সেবা দিতে হবে। এর মধ্যে অ’সুস্থ সে’নারাও থাকবেন, যাদের যু’দ্ধব’ন্দী হিসেবে অধিকার হবে। আরও কিছু আইন আছে যেগুলোতে নি’র্যাতন বা একটি গোষ্ঠীকে ধ্বং’স করতে চা’লানো গণহ’’ত্যাকে নি’ষিদ্ধ করা হয়েছে।

ইউক্রেনে যু’দ্ধাপরাধের কী কী অ’ভিযোগ আছে
ইউক্রেন বলছে, শি’শু ও প্রসূতি হাসপাতালে রাশিয়া যে হা’মলা চালিয়েছে তা যু’দ্ধাপরাধ। এ ঘটনায় তিন জন নি’হত হয়েছে আর হাসপাতালের ১৭ জন কর্মী ও রো’গী আ’হত হয়েছে। এছাড়া রাশিয়ান সৈন্যরা পলায়নরত ইউক্রেনিয়ান বেসা’মরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করেছে – এমন খবরও পাওয়া গেছে। এছাড়া খারকিভ শহরে বেসা’মরিক এলাকায় ক্লাস্টার বো’মা নি’ক্ষেপেরও প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।তবে ইউক্রেন বা রাশিয়া কেউ এ ধরণের অ’স্ত্র ব্যবহারের ও’পর নি’ষেধাজ্ঞায় স্বাক্ষর করেনি। তা সত্ত্বেও এসব ঘটনাগুলো যু’দ্ধাপরাধ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে রাশিয়া ভ্যাকিউম বা থারমোব্যারিক বো’মা ব্যবহার করেছে। বলা হয়, বি’স্ফোরক দিয়ে তৈরি বো’মার চেয়েও মা’রাত্মক বিধ্বং’সী এই ভ্যাকিউম বো’মা।এই বো’মা দুই ধাপে কাজ করে। প্রথম ধাপের বি’স্ফোরণে মেঘের মতো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে জ্বা’লানি তেল।দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে, এই জ্বা’লানি তেলের মেঘ আবার বিস্ফোরিত হয়ে আ’গুনের গোলার মতো তৈরি হয়, বড় ধরনের শক ওয়েভ বা শব্দ তরঙ্গের ধাক্কা তৈরি করে এবং আশপাশের সব অক্সিজেন শুষে নেয়।অনেক বিশ্লেষক মনে করেন ইউক্রেনে আগ্রাসনটাই একটা অ’পরাধ।

স’ন্দেহভাজন যু’দ্ধাপরাধীর বিচার সম্ভব?
প্রত্যেক দেশেরই দায়িত্ব আছে কোন কর্মকাণ্ড যু’দ্ধাপরাধ বলে স’ন্দেহ হলে তার ত’দন্ত করা। যুক্তরাজ্যে সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারা প্রমাণ সংগ্রহসহ এ বি’ষয়ে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে ইউক্রেনকে।

দ্বিতীয় বিশ্বযু’দ্ধের পর থেকে অনেকগুলো কোর্ট হয়েছে। এর মধ্যে আছে যুগোস্লাভিয়া ভাঙনের পর গঠন করা ট্রাইব্যুনাল ফর ওয়ার ক্রা’ইমস। রুয়ান্ডায় গণহ’’ত্যার দায়ে জড়িতদের বিচারের জন্যও একটি সংস্থা গঠিত হয়েছিলো। এখন দি ইন্টারন্যাশনাল ক্রি’মিনাল কোর্ট (আইসিসি) এবং দি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস (আইসিজে) যু’দ্ধের নিয়মাবলী সমুন্নত রাখতে সক্রিয়। আইসিজে বিবদমান রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে কাজ করে। তারা কোন ব্যক্তির বিচার করতে পারে না।

ইউক্রেন সেখানে আগ্রাসনের দায়ে রাশিয়ার বি’রুদ্ধে মা’মলার কাজ শুরু করেছে। আইসিজের রুল বা নির্দেশ যদি রাশিয়ার বিপক্ষে যায় তাহলে সেই নির্দেশনা কার্যকরের দায় বর্তাবে নিরাপত্তা পরিষদের ও’পর। কিন্তু রাশিয়া নিজেই নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। তারা সেখানে ভেটো দিতে পারে। আর আইসিসি সাধারণত গণহ’’ত্যা, যু’দ্ধাপরাধ, মানবতার বি’রুদ্ধে অ’পরাধ ইত্যাদি অ’পরাধের জন্য দায়ীদের অ’ভিযুক্ত করে থাকে। এর একটি উদাহরণ নুরেমবার্গ ট্রায়াল।

দ্বিতীয় বিশ্বযু’দ্ধের সময় হিটলারের বাহিনী পরিকল্পিতভাবে যে ভয়ংকর গণহ’’ত্যা চালিয়েছিল, তার মূল নায়কদেরই মূলত নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে বিচারের আওতায় আনা হয়। বিশ্বের ইতিহাসে এত বড় আকারে যু’দ্ধাপরাধের বিচার ছিলো এই প্রথম।

আইসিসি কী ইউক্রেনে অ’পরাধের বিচার করতে পারবে?
আইসিসির চীফ প্রসিকিউটর ব্রিটিশ আইনজীবী করিম খান কিউসি। তিনি বলেছেন যে ইউক্রেনে যু’দ্ধাপরাধ হচ্ছে এটা মনে করার অনেক যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে এবং সেটি ত’দন্তের অনুমতি তার আছে।

ত’দন্তে দেখা হবে অতীত ও বর্তমান অ’ভিযোগ। যেটি যেতে পারে ২০১৩ সালের রাশিয়ার ক্রা’ইমিয়া দ’খল পর্যন্ত। সেখানে যদি কোন ব্যক্তির বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগের প্রমাণ মেলে তাহলে প্রসিকিউটর আইসিসির বিচারকদের দি হেগের আ’দালতে তাদের বিচারের জন্য গ্রে’প্তারি পরোয়ানা জারীর জন্য আবেদন করতে পারবেন।

এখানেই কোর্টের সীমাবদ্ধতার বি’ষয়টি আছে। কারণ কোর্টের কোন নিজস্ব পুলিশ নেই। গ্রে’প্তারের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের পুলিশের ও’পর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু রাশিয়া এই আ’দালতের সদস্য নয়। ২০১৬ সালে তারা সরে দাঁড়ায়। ভ্লাদিমির পুতিন কাউকে প্রত্যর্পণ করবেন না।

প্রে’সিডেন্ট পুতিন ও অন্য নেতাদের বিচার সম্ভব?
যু’দ্ধের যেসব সৈন্য অ’পরাধ করেন তাদের চিহ্নিত করা যত সহজ ততটাই কঠিন যেসব নেতাদের নির্দেশে তারা এটা করেন তাদের অ’ভিযুক্ত করা। কিন্তু আইসিসি যু’দ্ধ চা’পিয়ে দেয়ার বি’ষয়টিকে অ’পরাধ হিসেবে আমলে নিতে পারে। এটা নুরেমবার্গ থেকেই এসেছে। যেখানে মস্কো মনোনীত বিচারক মনে করেছিলেন যে নাৎসি নেতাদের বিচার হওয়া উচিত শান্তির বি’রুদ্ধে অ’পরাধের দায়ে। তবে আন্তর্জাতিক আইনের বিশ্লেষক প্রফেসর ফিলিপ স্যান্ডস বলেছেন, রাশিয়া এ আ’দালতের সিগনেটরি না হওয়ায় আইসিসি রাশিয়ার নেতাদের বিচার করতে পারবে না।

তাত্ত্বিকভাবে, নিরাপত্তা পরিষদ আইসিসিকে ত’দন্তের জন্য বলতে পারে। কিন্তু স্থায়ী সদস্য হিসেবে রাশিয়া তাতে ভেটোও দিতে পারে।

তাহলে বিচারের অন্য কোন পথ আছে?

আইসিসির কার্যকারিতা বা আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ শুধু চুক্তির ও’পর নির্ভর করে না। বরং এখানে রাজনীতি ও কূটনীতির ব্যাপার আছে। সে কারণেই অনেকে মনে করেন নুরেমবার্গের মতো এখানে সমাধান নিহিত কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক চুক্তির মধ্যে। তারা ইউক্রেনে আগ্রাসনের অ’পরাধের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহবানও জানিয়েছেন।