জেনে নিন সা’মরিক শক্তিতে বাংলাদেশের চেয়ে কত ধাপ এগিয়ে মিয়ানমার

| আপডেট :  ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:০২ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:০২ পূর্বাহ্ণ

সা’মরিক শক্তির দিক দিয়ে বাংলাদেশের চাইতে ৭ ধাপ এগিয়ে রয়েছে মি’য়ানমার। এ বছর বিশ্বের ১৪২টি রাষ্ট্রের সা’মরিক সামর্থ্যের একটি সূচক প্রকাশ করেছে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার নামে একটি সংস্থা। এতে মি’য়ানমারের অবস্থান ৩৯ নম্বরে রয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান এই তালিকায় ৪৬।

কয়েক দিন আগে জাতিসঙ্ঘের মা’নবাধিকার বি’ষয়ক সংস্থা এক বিবৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি মি’য়ানমারের সা’মরিক স’রকারকে অর্থ সাহায্য এবং অ’স্ত্র সরবারহ কমানোর আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির জনগণের ও’পর নি’পীড়ন বন্ধের জন্য এ আহ্বান জানায় সংস্থাটি।

সা’মরিক শক্তির দিক থেকে মি’য়ানমার তার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের থেকে দেশটির অবস্থান শক্তিশালী। অং সান সুচির রাজনৈতিক দল এনএলডি নির্বাচনে বিজয়ের পর ক্ষমতায় তাদের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর ঠিক আগে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মি’য়ানমারে সা’মরিক বাহিনীর অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দ’খল করে।

ওই সে’না অভ্যুত্থানের পর দেশটির ও’পর নি’ষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। যে কারণে মি’য়ানমার এক রকম বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশটির সমরাস্ত্র কেনা থেমে নেই।

কী অ’স্ত্র আছে মি’য়ানমারের যু’দ্ধ বহরে সূচক অনুযায়ী, সা’মরিক সামর্থ্যের দিক থেকে এখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এরপরেই রয়েছে রাশিয়া, চীন, ভারত ও জাপান। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সা’মরিক শক্তির দিক থেকে ১৮তম অবস্থানে আছে মি’য়ানমার।

দেশটির বহরে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র থেকে শুরু করে সাবমেরিন এবং নজরদারি করার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি পর্যন্ত সবই রয়েছে। ফি বছর দেশটি তাদের সা’মরিক সামর্থ্য বাড়িয়ে যাচ্ছে, সেই সাথে বাড়ছে তাদের প্রতিরক্ষা বাজেটের আকার।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স বলছে, ২০২২ সালে প্রতিরক্ষা খাতে মি’য়ানমারের বরাদ্দ সাড়ে ২২৮ কোটি মা’র্কিন ডলার। এই মূহূর্তে দেশটির সৈন্য সংখ্যাও কম নয়। দেশটির সে’নাবা’হিনীতে এখন সৈন্য সংখ্যা আনুমানিক সাড়ে চার লাখ এবং প্যারা-মিলিটারি বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৫০ হাজার। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, মি’য়ানমারের রয়েছে ২৮০টি বিমানের এক বহর। এতে বুঝা যায় আকাশপথে মি’য়ানমারের সা’মরিক সামর্থ্যও বেড়েছে গত কয়েক বছরে।

এর মধ্যে ফাইটার বা ইন্টারসেপ্টর এয়ারক্রাফট ৫৫টি। প্রশিক্ষণ বিমান ৯৩টি এবং আ’ক্রমণ চা’লানোর মতো বিমানের সংখ্যা ২১টি। এছাড়া যু’দ্ধ বিমান পরিবাহী যানের সংখ্যা ২৬টি। মি’য়ানমারের হেলিকপ্টার আছে ৮০টি এবং অ্যাটাক হেলিকপ্টারের সংখ্যা ৯টি।

সা’মরিক যানের মধ্যে মি’য়ানমারের সা’মরিক বাহিনীর মোট ট্যাংক রয়েছে ৬৬৪টি। সাঁজোয়া যান রয়েছে ১ হাজার ৫৮৭টি। এছাড়া স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি গান বা কামানের সংখ্যা ১৯০টি এবং টানা কামান আছে ১ হাজার ৮৬৯টি। মি’য়ানমারের সা’মরিক বহরে রকেট প্রজেক্টর আছে ৪৮৬টি।

এছাড়া দেশটির যু’দ্ধবহরে নৌযান আছে মোট ১৫৫টি। এর মধ্যে ফ্রিগেট আছে পাঁচটি, ছোট যু’দ্ধ জাহাজ কর্ভেটসের সংখ্যা তিনটি। টহল জাহাজের সংখ্যা ১৩৩টি।

মি’য়ানমারের একটি সাবমেরিন আছে। এছাড়া মাইন ওয়ারফেয়ার ক্রাফট আছে দুটি। এছাড়া দেশটির জনগণের ও’পর নজরদারি করার জন্য ইসরাইলের কাছ থেকে পেগাসাস নামের একটি সফটওয়্যারও কিনেছে মি’য়ানমার। এই সফটওয়্যার দিয়ে মোবাইল ফোন হ্যাক করে গো’পনে নজরদারি চা’লানো যায় যেকোনো ব্যক্তির ও’পর।

মি’য়ানমারকে কারা দেয় অ’স্ত্র গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স ২০২২-এর তথ্য অনুযায়ী মি’য়ানমারের রয়েছে সমরাস্ত্রের বিপুল ভাণ্ডার। এর মধ্যে ভারী অ’স্ত্রের পুরোটাই দেশটি বিদেশ থেকে কেনে। তবে, হালকা অ’স্ত্র তৈরির জন্য মি’য়ানমারের নিজস্ব সমরাস্ত্র কারখানা আছে।

যদিও ২০১৯ সালে জাতিসঙ্ঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন টিম মি’য়ানমারের কাছে অ’স্ত্র বিক্রিতে পূর্ণ নি’ষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছিল। সে সময় ওই টিমের দেয়া রিপোর্টে মি’য়ানমারের কাছে কোন কোন দেশ অ’স্ত্র বিক্রি করে সে সম্পর্কে বলা হয়েছিল।

রিপোর্টে বলা হয়, সা’মরিক জান্তার নি’পীড়নে দেশটির সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যখন মানবিক পরিস্থিতির মুখে পড়েছে তখনো সাতটি দেশের কয়েকটি কোম্পানি মি’য়ানমারকে অ’স্ত্র সরবারহ করেছে।

উল্লেখিত রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৬ সাল থেকে চীন, উত্তর কোরিয়া, ভারত, ইসরাইল, ফিলিপাইন, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের ১৪টি কোম্পানি যু’দ্ধ বিমান, সাঁজোয়া যান, যু’দ্ধজাহাজ, মি’সাইল ও মি’সাইল লঞ্চার সরবরাহ করছে।

ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, কোন দেশে রাজনৈতিক ভিন্নমত দ’মনে ব্যবহার হতে পারে এমন আ’শঙ্কা থাকলে, সেখানে অ’স্ত্র বিক্রি বা সরবরাহ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি আইসিসিপিআরের বি’রোধী। চীন ওই চুক্তি স্বাক্ষরকারী একটি দেশ।

সমর বিশেষজ্ঞ এবং মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেছেন, প্রতিবেশী দুই দেশ চীন এবং ভারতের সাথে মি’য়ানমারের দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠতার কারণে দেশটির সমরাস্ত্রের বড় অংশটি তারা এই দুটি দেশ থেকে কেনে।

অধ্যাপক আলী বলেছেন, চীন ও ভারতের সাথে মি’য়ানমারের সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ যে যখন প্রথম দফায় দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেতা অং সান সুচিকে গৃহব’ন্দি করা হয়, সেসময় পশ্চিমা দেশগুলো যখন তৎকালীন বার্মার ও’পর নি’ষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, ওই সময়ও চীন ও ভারত দেশটিকে সমর্থন দিয়েছে।

সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় ভারত ২০১৮ সালে মি’য়ানমারকে একটি রুশ নির্মিত সাবমেরিন উপহার দিয়েছে। তবে, ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চীন, রাশিয়া, ভারত, ইসরাইল এবং ইউক্রেন ছিল মি’য়ানমারের প্রধান অ’স্ত্র সরবরাহকারী দেশ।

মি’য়ানমারের বেশিরভাগ ফাইটার বিমান, সাঁজোয়া যান, ব’ন্দুক এবং যু’দ্ধজাহাজ আসে চীন থেকে। আর যু’দ্ধবিমান সরবরাহকারী দেশের মধ্যে রাশিয়া প্রধান। এছাড়া রাশিয়া মি’য়ানমারের কাছে সাঁজোয়া যানও বিক্রি করছে। এছাড়া রকেট এবং কামানের গোলার প্রধান সরবরাহ আসে সার্বিয়া থেকে।

এদিকে, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসঙ্ঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল এক বিবৃতিতে বলেছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটির সা’মরিক জান্তা মি’য়ানমারের রাষ্ট্রক্ষমতা দ’খল করার পর চীন, রাশিয়া এবং সার্বিয়া দেশটিকে অ’স্ত্র সরবারহ করা চালিয়ে গেছে, যা দেশটির বেসা’মরিক নাগরিকদের দ’মনে ব্যবহার করা হয়েছে।

এসব অ’স্ত্রের মধ্যে রয়েছে যু’দ্ধ বিমান, সাজোঁয়া যান, রকেট ও কামান। ওই বিবৃতিতে দেশটির স’রকারের অ’স্ত্র পাওয়ার সুযোগ বন্ধ করার জন্য জাতিসঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল।
সূত্র : বিবিসি