যুদ্ধে যাচ্ছে ভাই, কলকাতায় বসে ‘লক্ষ্মীর পাঁচালি’ পড়ছেন ইউক্রেনের মেয়ে

| আপডেট :  ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:২৮ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:২৮ অপরাহ্ণ

রাজনৈতিক সং’ঘা’তকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার প্রে’সিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সা’মরিক অ’ভিযান ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই ইউক্রেনে একের পর এক হা’মলা চালাচ্ছে রুশ সে’নারা। যু’দ্ধের তৃতীয় দিন (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাশিয়ার সে’নাদের সঙ্গে ইউক্রেনের সে’নাদের লড়াই চলছে। ফলে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে নতুন করে কারফিউ জারি হয়েছে।

এদিকে কলকাতায় বসে নিজের দেশ ও পরিবারের চিন্তায় অস্থির সময় পার করছেন ইউক্রেনের মেয়ে ইরিনা। বিবাহসূত্রে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ইউক্রেন ছেড়ে ভারতে এসেছেন। কিন্তু গত দু’দিনে তার মনের ভেতরটা ওলটপালট হয়ে গেছে। বারবার ফোন করছেন সুদূর ইউক্রেনে। যু’দ্ধে জড়িয়ে পড়া দেশটিতে বেশিরভাগ সময়েই কথা বলা যাচ্ছে না।

ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, কলকাতার গৃ’হবধূ ইরিনার পরিবারে রয়েছে বয়স্ক বাবা-মা ও একমাত্র ছোট ভাই সার্গেই। এছাড়াও আছেন শয্যাশায়ী ঠাকুমা। ইরিনার ছোট ভাই গেলো তিন বছর সা’মরিক বাহিনীতে কাটিয়ে সদ্যই বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু স’রকারি নির্দেশে এখন তাকে যু’দ্ধে যেতে হবে। এই মুহূর্তে ছোট ভাইটির কথা খুব মনে পড়ছে ইরিনার। কিন্তু ভাইয়ের কাছে ছুটে যাওয়ার সুযোগ নেই! কলকাতা থেকে প্রায় পৌনে ছয় হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নিজের মাতৃভূমিতে কী হচ্ছে- সংবাদমাধ্যমে তার চিত্র দেখে শিউরে উঠছেন ইরিনা।

তিনি বলেন, ‘এত দূরে বলে ঘনঘন যাওয়া হয় না। দুই-তিন বছর পর পর যাই। এখন মনে হচ্ছে, এক ছুটে চলে যাই। কিন্তু উপায় নেই। প্রভু যিশুর কাছে দিন-রাত প্রার্থনা করছি। খ্রিস্টান হলেও আমি বাঙালি ঘরের হিন্দু রীতি রেওয়াজ সব মানি। শাশুড়ি মা আমাকে লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়া শিখিয়েছেন। বারবার ঠাকুরের আসনের সামনে পাঁচালি নিয়ে বসে পড়ছি। যিশু বা মা লক্ষ্মী, যেই হোন তিনি যেন আমার পরিবার, আমার দেশকে রক্ষা করেন।’

শুধু ইরিনা নন, শ্বশুরবাড়ির দেশের পরিস্থিতি নিয়ে সমান উ’দ্বেগে আছেন তার চিকিৎসক স্বামী সৌরভ দে। হাওড়ার আন্দুল থেকে ইউক্রেনের টের্নোপিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে পড়তে গিয়েছিলেন সৌরভ। ২০০৪ সালে তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময়েই টের্নোপিল শহরের বাসিন্দা ইরিনা প্রিতলিউকের সঙ্গেপরিচয় হয় তার। এরপর প্রেম ও পরিণয়। ২০০৯ সালে বিয়ের পরে ইরিনা চলে আসেন হাওড়ায়। পরবর্তীতে দম’দমে বসবাস শুরু করেন তারা।

সৌরভ বলেন, ‘গতকাল সারাদিন ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে একবার পেয়েছিলাম। ওখানে বিদ্যুৎ নেই। ফোন, ইন্টারনেট সব পরিসেবাই বিঘ্নিত। যে যেখানে পারছে আশ্রয় নিচ্ছে। আমার শ্বশুরবাড়ির সকলেই এখনও নিজেদের বাড়িতেই রয়েছেন। তবে খাবারের খুবই অভাব। কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। এটিএম-এ টাকা নেই। স’রকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কেউ কোথাও যেতে পারবেন না। ফলে তাদের যে কলকাতায় নিয়ে আসবো সে উপায়ও নেই।’

বাবা-মা’র উ’দ্বেগ দেখে ইরিনার আট বছরের মেয়ে অদ্রিজারও মন খা’রাপ। জন্মের পর মাত্র তিনবার নানাবাড়ি গেলেও নানা-নানী তার খুব পছন্দের মানুষ। তাদের সুরক্ষার জন্য প্রার্থনা করছে ছোট্ট মেয়েটি। সারাদিন টিভির সামনে বসে ইউক্রেনের অবস্থা দেখে অদ্রিজার একই প্রশ্ন- ‘সব ঠিক হয়ে যাবে তো!’সূত্র: আনন্দবাজার