‘যুক্তরাষ্ট্র বন্ধু হলে শত্রুর দরকার নেই’

| আপডেট :  ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:০১ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:০১ অপরাহ্ণ

‘যুক্তরাষ্ট্র বন্ধু হলে শ’ত্রুর দরকার নেই’ কথাটি বহুল প্রচলিত। বিভিন্ন সময় এটি প্রমাণিত হয়েছে। সর্বশেষ প্রমাণিত হলো ইউক্রেনের ঘটনায়। ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যখন টানটান উ’ত্তেজনা, তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রে’সিডেন্ট জো বাইডেন বার বার হু’মকি দিচ্ছিলেন। তিনি এমন একটি অবস্থা তৈরি করছিলেন, মনে হচ্ছিল যে, যু’দ্ধটা আসলে ইউক্রেনের সঙ্গে নয়, যু’দ্ধটা মা’র্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার।

তিনি এটাও বলছিলেন, যদি রাশিয়া ইউক্রেনে আ’ক্রমণ করে, তাহলে তার ভ’য়ঙ্কর পরিণতি হবে এবং চ’রম মূল্য দিতে হবে রাশিয়াকে। কিন্তু সত্যি সত্যি গত বৃহস্পতিবার পুতিনের নির্দেশে রাশিয়া ইউক্রেন আ’ক্রমণ করে। কিয়েভের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর ইউক্রেনের মানুষগুলো এখন এক ধরণের অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছে, উদ্বাস্তু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। আর সেই সময় মা’র্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ, র’হস্যময় এবং অবন্ধুসুলভ।

ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রই উৎসাহিত করেছিল, ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রই সাহস জুগিয়েছিল, যেন তারা কোনো রকম সমঝোতা না করে। কিন্তু যখন ইউক্রেন সং’কটে পড়লো, তখন যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকলো না। বরং যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ এখন রাশিয়ার উপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে নিজেদের ফায়দা হাসিল করা। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই ধরণের ঘটনা এটিই প্রথম নয়।

এর আগেই আফগানিস্তানে মা’র্কিন যুক্তরাষ্ট্র একই ঘটনা করেছিল। তারা সেখান থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেয়। তালেবানরা আফগানিস্তান দ’খল করে নেয়। কিন্তু আফগানিস্তানে যেসমস্ত আফগান নাগরিক মা’র্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাত্ম হয়েছিল, মা’র্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করেছিল, তারা এক কঠিন সং’কটের মধ্যে পড়ে। একই রকম ঘটনা ঘটেছে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায়। এই মা’র্কিন যুক্তরাষ্ট্রই লাদেনকে তৈরি করেছিল। আবার লাদেনকে হ’’ত্যা করেছে।

এই মা’র্কিন যুক্তরাষ্ট্রই গাদ্দাফিকে তৈরি করেছে এবং প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ার পর গাদ্দাফিকে শেষ করতেও কার্পণ্য করেনি। ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের কথা মনে আছে? সাদ্দাম হোসেন মা’র্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই সৃষ্টি ছিল। আবার মা’র্কিন যুক্তরাষ্ট্রই তাকে এক প্রহসনের বিচারে হ’’ত্যা করেছে। দেশে-দেশে, যুগে-যুগে মা’র্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ভূমিকাই পালন করে আসছে।

ইউক্রেনের ইস্যুতে মা’র্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি খেলা খেললো, সেটি এখন কূটনীতিক অঙ্গনে বড় প্রশ্ন। মা’র্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে এই যু’দ্ধ লাগিয়ে লাভবান হলো কিনা, সেটিও একটি দেখার বি’ষয়। অনেকেই বলছেন যে, আসন্ন মধ্যবর্তী নির্বাচনে জো বাইডেনের অবস্থা নাজুক। সেই জন্যই এই যু’দ্ধ-যু’দ্ধ খেলায় তিনি লাভবান হতে চেয়েছেন। আবার অনেক কূটনীতিক মনে করেন যে, রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের এই যু’দ্ধের ফলে রাশিয়া ক্ষ’তিগ্রস্ত হবে। অর্থনৈতিকভাবে দুরবস্থার মধ্যে পড়বে এবং এটি মা’র্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব বন্ধ করা হবে।

ফলে মা’র্কিন রিজার্ভে ডলারের স্ফীতি বাড়বে। এসব কারণেই হয়তো এই যু’দ্ধ লাগিয়ে তামাশা দেখার নীতি গ্রহণ করেছে মা’র্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এই পুরো ঘটনাতে একটি বি’ষয় সুস্পষ্ট হয়েছে। তা হলো মা’র্কিন মোড়লিপনার দিন বোধহয় বিশ্বে শেষ হয়ে গেছে। মা’র্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে যেভাবে মার খেয়ে পা’লিয়েছে, ইউক্রেনে যেভাবে দর্শকের মতো দাঁড়িয়েছে, তাতে ভবি’ষ্যতে মা’র্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব, নিয়ন্ত্রণ এবং মোড়লিপনা কয়জন মানুষ মেনে নিবেন, এটি এখন একটি বড় প্রশ্ন। সূত্রঃ বাংলা ইনসাইডার