পাকিস্তানের জয় উদযাপন করা সেই স্কুলশিক্ষিকার ঠাই হলো কারাগারে, হারালেন চাকরিও

| আপডেট :  ৩ নভেম্বর ২০২১, ০২:২১ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৩ নভেম্বর ২০২১, ০২:২১ অপরাহ্ণ

অন্যসব দর্শকের মতো নাফিসা আটারিও টেলিভিশনের সামনে থেকে উঠতে পারেননি রোববার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখবেন বলে শুরু থেকেই তৈরি হয়েছিলেন তিনি। রাজস্থানের উদয়পুরের নিরজা মোদি স্কুলের শিক্ষিকা তিনি। ম্যাচ শেষে ভারতের বিরুদ্ধে জয় পায় পাকিস্তান। হোয়াটসঅ্যাপে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে পাকিস্তানের সেই জয় উদযাপন করাই কাল হলো তার। খেলার দু’দিন পর সবশেষ কারাগারেই জায়গা পেলেন তিনি। এছাড়া একই অপরাধে হারিয়েছেন চাকরিও।

সেদিন উদয়পুরের অম্বা মাতা থানা পুলিশ নাফিসাকে গ্রেফতার করে। অম্বা মাতা থানার পুলিশ কর্মকর্তা নরপত সিংহ জানান, নাফিসাকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩ বি (জাতীয় সংহতি বিরোধী) ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাকে আদালতে তোলা হলে তার জেল হয়। এ দিকে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পর ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক মুসলামনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও বেশিরভাগ গ্রেফতারের ঘটনা যোগী আদিত্যনাথের বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের বরেলী, আগরা, লখনউয়ে। কিন্তু কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানে অশোক গহলৌতের পুলিশ যেভাবে নাফিসাকে গ্রেফতার করেছে, তা তাৎপর্যপূর্ণ।

২৪ অক্টোবর পাকিস্তানের কাছে ১০ উইকেটে হারে ভারত। সেদিন নাফিসা তার হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাসে পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের ছবি দিয়ে ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘জিত গ্যায়ে…. উই ওয়ান’ (আমরা জিতে গিয়েছি)। এই হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাস তার কোনো এক ছাত্রের বাবার নজরে আসে। তিনি বাকিদের তা পাঠিয়ে দেন। এরপর এটি ভাইরাল হতে সময় লাগেনি।

‘অপরাধ’-এর জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন নাফিসা। রাজস্থানের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে তিনি বলেন, ‘‘সে দিন একজন আমার স্ট্যাটাস দেখে হোয়াটসঅ্যাপেই জানতে চেয়েছিলেন, আমি পাকিস্তানকে সমর্থন করছি কি না। সাথে কিছু হাসির ইমোজিও ছিল। মনে হয়েছিল হাল্কা মেজাজে মজা করে আমাকে এই প্রশ্ন করা হয়েছে। আমিও হাসতে হাসতেই বলেছিলাম ‘হ্যাঁ’। কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে, আমি পাকিস্তানকে সমর্থন করি। আমি ভারতীয়। ভারতকে ভালোবাসি।’’

তবে বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন নাফিসা। আছেন স্বামী সন্তানের সাথে। তার আইনজীবী রাজেশ সিংভি বলেছেন, ‘পুলিশ সম্পূর্ণ ভুল কাজ করেছে। কেউ ভুল করলে, বা কেউ কারো সাথে একমত না হলে সেটাকে কখনোই দেশদ্রোহিতা বলা যায় না। এটা আমাদের সংবিধান বিরোধী।’

হিন্দু সংগঠন বজরং দলের সদস্য রাজেন্দ্র পারমারও নাফিসার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই সব লোকেদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া উচিত। ভারতে থাকছে, রোজগার করছে, আর পাকিস্তানের জয় উদ্‌যাপন করছে! তার শিক্ষা নেয়া উচিত। তিনি স্কুলে পড়ান। ছাত্রছাত্রীদের কি শিক্ষা দেবেন?’

বিজেপি বা তার সহযোগী দলগুলো যে নাফিসার হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাসকে সমর্থন করবে না, তা স্পষ্ট। যোগী আদিত্যনাথ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, পাকিস্তানের জয় উদ্‌যাপন করলে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে অভিযোগ দায়ের করা হবে। পরে এ নিয়ে টুইটও করেন। সেই পথে হেঁটেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পরে আগরায় তিন কাশ্মিরি শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে যোগীর পুলিশ। আর্শাদ ইউসুফ, ইনায়াত আলতাফ শেখ এবং শওকত আহমেদ গনাই।

ভারতের সাবেক ক্রিকেটার এবং বিজেপি সংসদ সদস্য গৌতম গম্ভীর টুইট করেছিলেন, ‘পাকিস্তান জেতায় যারা বাজি ফাটাচ্ছেন, তারা ভারতীয় হতে পারেন না। আমরা ভারতীয় দলের পাশে আছি।’ নাফিসা বা ইনায়াতদের গ্রেফতারের ঘটনাকে সমর্থন করে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা কাঞ্চন গুপ্ত বলেন, ‘তারা ভারতের হার উদযাপন করছিলেন। এই ধরনের যেকোনো ঘটনা যেকোনো সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে পারে, বড় ঘটনা ঘটতে পারে। তাই যে ভাবেই হোক, এগুলো বন্ধ করতে হবে।’

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে এই ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। ২০১৪ সালে একই কারণে উত্তরপ্রদেশে ৬০ জন কাশ্মিরি ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা