গা’জার ধ্বং’স’স্তুপে এক নরসুন্দরের ঘুরে দাঁড়ানোর সং’গ্রাম

| আপডেট :  ২৭ মে ২০২১, ০২:১২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৭ মে ২০২১, ০২:০৫ অপরাহ্ণ

গাজা উপত্যকার নরসুন্দর হাসিম আল-জারুসা তার খদ্দেরদের চুল কাটেন এক ছাদবিহীন দোকানে। দোকানটি তিনি তৈরী করেছেন এক ভবনের ধ্বং’সস্তুপের ও’পর। গাজায় ইসরাইলি সে’নাদের আ’ক্রমণের আগে এ ধ্বং’স হয়ে যাওয়া ভবনেই তার সেলুনের দোকান ছিল। পরে ইসরাইলের বিমান বাহিনীর হা’মলায় গাজার অন্যান্য ভবনের মতো তার দোকানটিও বি’ধ্বস্ত হয়ে যায়।

ইসরাইলি সে’নাবা’হিনীর নৃ’শংস হা’মলায় পুরো এলাকার দৃশ্যই এখন বদলে গেছে। একসময় বসবাসের জন্য অভিজাত আবাসিক জোন হিসেবে বিবেচিত এলাকাটিতে এখন শুধুই ধ্বং’সস্তুপের ছড়াছড়ি। ইসরাইলের ভ’য়াবহ বো’মা হা’মলার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে আনাদোলু এজেন্সিকে জানান হাসিম আল-জারুসা। এসব কথা বলার সময় তিনি গ্রীষ্মকালের তীব্র গরমের মধ্যেও খোলা আকাশের নিচে তার এক খদ্দেরের দাড়ি কামিয়ে দিচ্ছিলেন।

ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের মধ্যে যু’দ্ধবিরতি চুক্তি হবার পর গাজার মানুষদের প্রত্যহিক জীবন আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
হাসিম আল-জারুসা বলেন, অনেকগুলো ক্ষে’পণাস্ত্রের মাধ্যমে গো’লাব’র্ষণ করে ইসরাইলের সে’নারা আমার সেলুনটি বি’ধ্বস্ত করে দেয়। তারা এ পুরো আবাসিক এলাকার পরিবেশই বদলে দিয়েছে বো’মা হা’মলার মাধ্যমে।

গাজা যু’দ্ধের অবসান হওয়ার পর আল-জারুসা বেরিয়ে পড়েন তার সেলুনের জিনিসপত্র কেনার জন্য। আবারো তিনি তার নরসুন্দরের পেশায় ফিরে আসেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন একটি চেয়ার, একটি আয়না ও কিছু রেজর নিয়ে গাজা শহরের উত্তরাংশে তার ধ্বং’স হয়ে যাওয়া নরসুন্দরের দোকানের ধ্বং’সস্তুপের ও’পর কাজ শুরু করবেন। তিনি চাচ্ছিলেন, তার কাজ চা’লিয়ে যেতে পারেন। কারণ, এ নরসুন্দরের পেশাই হলো তার ও তার পরিবারের মূল অবলম্বন।

ইসরাইলের সে’নাবা’হিনী শুধুমাত্র আবাসিক এলাকায়ই হা’মলা চা’লায়নি, তারা সাধারণ মানুষের কর্মস্থলেও হা’মলা চা’লিয়েছে। এমনকি নরসুন্দর হাসিম আল-জারুসার দোকানেও হা’মলা চা’লিয়েছে। এখানে তিনি ১১ বছর ধরে কাজ করেন।
হাসিম আল-জারুসা বলেন, এ নরসুন্দরের দোকানই আমার কাছে সবকিছু, এটা আমার স্বপ্ন এবং আমার ভবি’ষৎ। এ পেশায় আমি ১১ বছর ধরে কাজ করছি।

তার অনেক খদ্দের ছিল। তার সেলুনে তিনজন কর্মচারীও কাজ করতেন। এ বি’ষয়ে আল-জারুসা বলেন, ‘আমার ভালো আয় ছিল, এখন সব শেষ হয়ে গিয়েছে। আমার এখানে তিনজন কর্মচারীও কাজ করতেন, তারাও কাজ হা’রিয়েছেন। তিনি শপথ করে বলেন, ‘তিনি হাল ছেড়ে দিবেন না, তিনি ধ্বং’সস্তুপের ও’পরেই তার কাজ চা’লিয়ে যাবেন।

দু’স’ন্তানের জনক এ নরসুন্দর আশা করছেন যত দ্রুত সম্ভব তিনি তার সেলুনের দোকান আবার চালু করবেন। এ সেলুনের দোকান চালু করার মাধ্যমে তিনি তার পরিবার ও তার তিন কর্মচারীর পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করবেন।
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদা’য়ের প্রতি আহ্বান জানান ফিলিস্তিনিদের গাজা শহর পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সমর্থন ও সহায়তা করতে।

ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে গত শুক্রবার থেকে যু’দ্ধবিরতি চুক্তি বলবৎ রয়েছে। মিসরের মধ্যস্ততায় এ যু’দ্ধবিরতি চুক্তিটি সম্পন্ন হয়। টানা ১১ দিন অ’বরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি বিমান হা’মলার পর এ চুক্তিটি করা হয়।ফিলিস্তিনি স্বা’স্থ্য ম’ন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, টানা ১১ দিনের ইসরাইলি বিমান হা’মলায় ৬৬ শি’শু ও ৩৯ নারীসহ অন্তত ২৫৩ ফিলিস্তিনি নি’হত হয়েছেন। হা’মলায় আ’হত হয়েছেন আরো এক হাজার নয় শ’ ৪৮ জন।

সূত্র : ইয়েনি সাফাক