মহিলা ভলিবল খেলোয়াড় মেহজাবিনকে তালিবানরা হত্যা করে নি

| আপডেট :  ২৬ অক্টোবর ২০২১, ০৭:১৭ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২১ অক্টোবর ২০২১, ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ

গত ২১ অক্টোবর ভারতীয় ফ্যাক্ট-চেকিং সাইট Alt News বিষয়টি অনুসন্ধান করে “Media misreports Afghan women’s volleyball player beheaded by Taliban” শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে । রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, মেহজাবিন হত্যার সংবাদ প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকে সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে থাকে।

Tolo News-এর সাবেক প্রধান Miraqa Polpal, আফগান নারী অধিকারকর্মী Wazhma Frogh এবং Zaki Dariyabi টুইটারে লেখেন তালেবানের হাতে মেহজাবিন হাকিমির শিরোশ্ছেদের সংবাদ সত্য নয়, তিনি আত্মহত্যা করেছেন এবং সেটি তালেবানরা কাবুল দখলের ১০ দিন আগে।

Alt News মেহজাবিনের ভাই সিকান্দার হাকিমির ফেসবুক প্রোফাইল অনুসন্ধান করে দেখে, ৭ আগস্ট তিনি একটি কালো ব্যাকগ্রাউন্ডের প্রোফাইল পিকচার আপলোড করেন এবং কমেন্টে পারস্য ভাষায় সমবেদনা জানিয়ে ১০০-রও বেশি কমেন্ট করা হয়।

Alt News মেহজাবিনের পরিবারের একজন সদস্যের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয় এবং তিনি সিকান্দার হাকিমিকে মেহজাবিন হাকিমির ভাই হিসেবে নিশ্চিত করেন। সদস্যটি জানান, মেহজাবিন ২০২০ সালে মজিদ খান নামক একজন ব্যক্তির সাথে বাগদান করেন , এবং কাবুলে মজিদ খানের যৌথ পরিবারের সাথে থাকতে শুরু করেন। মেহজাবিন আমেরিকা থেকে একটি স্কলারশিপ পান, যেটি মজিদ খানের পরিবারের সাথে তার ঝামেলার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তিনি দাবি করেন, মেহজাবিনকে কাবুলে তার বাগদত্তার বাথরুমে গত ৬ আগস্ট মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। বাগদত্তার ভাষ্যমতে মেহজাবিন আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু মেহজাবিনের পরিবারের সন্দেহ এর পেছনে তার বাগদত্তার পরিবারের হাত রয়েছে। তিনি মেহজাবিনের কিছু ছবি শেয়ার করেন, এবং একটি সমাধিফলকের ছবি পাঠান যেখানে মেহজাবিনের নাম লেখা রয়েছে (ছবিতে নীল রঙ) এবং পারস্য ক্যালেন্ডারের হিসেবে মৃত্যুসাল লেখা রয়েছে ১৫-৫-১৪০০ (সবুজ রঙ), যাকে ইংরেজি ক্যালেন্ডারে রূপান্তরিত করলে তারিখটি পাওয়া যায় ৬ আগস্ট।

Alt News ২২ আগস্টে অনুষ্ঠিত মেহজাবিন হাকিমির স্মরণ অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্রের সন্ধান পায়। সেখানে ছাপা মেহজাবিনের ছবিটির সাথে মেহজাবিনের পরিবারের সদস্যের দেওয়া ছবির সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

এদিকে, মেহজাবিন হাকিমি নামক একজন আফগান মহিলা-ভলিবল-খেলোয়াড়কে শিরোশ্ছেদের মাধ্যমে হত্যা করেছে তালেবানরা – এমন একটি খবর ফেসবুকে পাওয়া যাচ্ছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এই দাবি সত্য নয়। তিনি নিহত হয়েছিলেন গত আগস্ট মাসে, যার মৃত্যুর সাথে তালেবানদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। মূলত বেশকিছু বাংলাদেশী অনলাইন সংবাদমাধ্যম এবং কয়েকটি মূলধারার দেশি গণমাধ্যমের মাধ্যমে এই খবরটা ভাইরাল হয়।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া মেহজাবিন হাকিমিকে শিরোশ্ছেদের মাধ্যমে তালেবানরা হত্যা করেছে – সংবাদটি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। মেহজাবিন হাকিমির মৃত্যু হয় আগস্ট মাসে, পরিবার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মৃত্যুর কারণ হলো আত্মহত্যা অথবা বাগদত্তার পরিবার দ্বারা হত্যা। আফগানিস্তানের স্থানীয় সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী এবং আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেকাররা এই খবরটিকে ‘গুজব’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।