হুইপ পরিবারের অ’পরাধ সাম্রাজ্য, অক্টোপাসের মতো গিলে খাচ্ছে পটিয়া

| আপডেট :  ১৮ এপ্রিল ২০২১, ১০:৩৬ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৮ এপ্রিল ২০২১, ১০:৩৬ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের পটিয়াজুড়ে চলছে হুইপ শামসুল হক চৌধুরী পরিবারের অ’পরাধ সাম্রাজ্য। হুইপের পুরো পরিবার অক্টোপাসের মতো গিলে খাচ্ছে পটিয়া ও তার আশপাশ এলাকাকে। প্রতিটা সেক্টর ভাগ করেই চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ ও চাঁ’দাবাজি। অন্ধকার এ রাজ্যের ‘রাজপুত্র’ হিসেবে রয়েছেন হুইপপুত্র নাজমুল হক চৌধুরী শারুন। ‘অঙ্গরাজ্যে’র রাজ্যপাল হিসেবে রয়েছেন হুইপের দুই ভাই নবাব, মহব্বত এবং বোন রেখা। বাদ যাননি ভাগ্নে কিংবা নিকটাত্মীয়রাও। বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে হুইপ পরিবারের এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পটিয়ার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা অ’ভিযোগ করেন, ‘পটিয়ায় হুইপ পরিবারের বাইরে গিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ নেই কারোর। টে’ন্ডারবাজি থেকে শুরু করে উন্নয়ন কাজে ইট, বালু পাথর সরবরাহ সব কিছুই করেন হুইপ পরিবারের সদস্যরা। বালু মহাল নিয়ন্ত্রণ, শিল্প কারখানায় কাঁচামাল ও শ্র’মিক সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ, প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ, কথিত সালিশ বিচারের নামে অ’নৈতিক সুবিধা গ্রহণ সব কিছুই করছে তারা। তাদের এসব অন্যায়ের বি’রুদ্ধে কথা বললেই চলে হা’মলা ও মা’মলা।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, শামসুল হক চৌধুরী টানা দ্বিতীয় বার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে পটিয়া এলাকায় অ’পরাধ জগতে ডালপালা মেলতে থাকে তার পরিবার। জাতীয় সং’সদের হুইপ নির্বাচিত হওয়ার পর তা আরও মা’রাত্মক আকার ধারণ করে। এরপর থেকে এলাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়ন কাজে র’ড, বালু, পাথর সরবরাহ, বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ, শিল্প কারখানায় কাঁচামাল ও শ্র’মিক সরবরাহ, মা’দক ব্যবসাসহ সব সেক্টরে ভাগ বসায় হুইপপুত্র ও তার ভাই-বোনেরা।

এসব ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খু’ ০নের ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনার নেপথ্যে থাকার অ’ভিযোগ রয়েছে হুইপ পরিবারের স’দস্যদের বি’রুদ্ধে। হুইপ সাম্রাজ্যের রাজপুত্র হিসেবে রয়েছেন নাজমুল হক চৌধুরী শারুন। এলাকায় টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প থেকে কমিশন গ্রহণ, কি’শোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য অ’প’রাধী চ’ক্রকে লালন-পালনের অ’ভিযোগ রয়েছে শারুনের বি’রুদ্ধে।

পটিয়ার ইন্দ্রপুল, মেলিটারিপুল এবং ভেল্লাপাড়া এলাকায় বড় বড় তিনটি বালু মহালের নিয়ন্ত্রণেও রয়েছেন শারুন। একটি বেস’রকারি জাহাজ তৈরি ইয়ার্ড দ’খলের অ’ভিযোগ রয়েছে হুইপপুত্রের বি’রুদ্ধে। হুইপের ভাই ফজলুল হক চৌধুরী মহব্বতের বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগের শেষ নেই। বি’রোধপূর্ণ জায়গা-জমি দ’খল, সালিশ-বিচারের নামে অ’নৈতিক সুবিধা গ্রহণ, থানা ও উপজে’লা প্রশাসনে অ’বৈধ প্রভাব বিস্তারের অ’ভিযোগ রয়েছে মহব্বতের বি’রুদ্ধে।

এ ছাড়া দক্ষিণ পটিয়ার পাঁচ ইউনিয়নের আবাদি ভূমির টপ সয়েল বিক্রি সিন্ডিকে’টের নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি। প্রতিদিন শতাধিক টপ সয়েল বহনকারী ট্রাক থেকে ৪ হাজার টাকা হারে চাঁ’দা নেন তিনি। হুইপ সাম্রাজ্যের বাস্তবিক অর্থে ‘নবাবের’ ভূমিকায় রয়েছেন আরেক ভাই মুজিবুল হক চৌধুরী নবাব। পারিবারিক নানা ইস্যু নিয়ে একসময় নবাবের সঙ্গে দূরত্ব ছিল শামসুল হকের।

কিন্তু ২০১৬ সালে বি’রোধ ভু’লে হুইপ সাম্রাজে যোগ দেন নবাবও। এরপর থেকে শুরু হয় তার বে’পরোয়া কর্মকান্ড। এলাকার মাটি ভরাট সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে ইট, বালু, সিমেন্ট, পাথর সরবরাহ, পটিয়ায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিল্প কারখানায় শ্র’মিক সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করেন নবাব।

পটিয়ায় গড়ে ওঠা শিল্প কারখানাগুলোকে কাঁচামাল কিনতে বা’ধ্য করার অ’ভিযোগ রয়েছে তার বি’রুদ্ধে। শিল্প কারখানায় কর্মকর্তা শ্র’মিক বহন করার জন্য গাড়িও নিতে হয় তার কাছ থেকে। এসব ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কমপক্ষে পাঁচ নেতা-কর্মী খু” ০ন হয়েছেন। এসব ঘটনার নেপথ্য হোতা হিসেবে নবাবকে দা’য়ী করা হয়।

এ ছাড়া পটিয়ার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নে ভূমি দ’খল করে নবাব গড়ে তুলেছেন বিশাল কৃষি খামার। যাতে তিনি বিনিয়োগ করেছেন কোটি কোটি টাকা। হুইপ-ভাইদের চেয়ে কোনো অংশে কম যান না হুইপের বোন রেখা। তার বি’রুদ্ধে রয়েছে সং’খ্যালঘুদের জায়গা দ’খল, থানায় সালিশ বিচারে প্র’ভাব বিস্তার এবং বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্র’মিক বহনকারী পরিবহন নিতে বা’ধ্য করার অ’ভিযোগ।

মামা খালার চেয়ে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই হুইপ-ভাগ্নে লোকমান খান। তার বি’রুদ্ধে রয়েছে উপজে’লা ও পৌরসভার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, জায়গা দ’খল-বেদ’খল এবং মা’দক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণের অ’ভিযোগ। সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন