পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী কে এই অবন্তিকা?

| আপডেট :  ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ০৪:৪১ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ০৪:৪১ পূর্বাহ্ণ

হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে বিদেশে পা’লিয়ে আছেন প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি থাকার সময় নামে বেনামে নানা উপায়ে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তিনি এ টাকা হাতিয়ে নেন। এই অর্থের কিছু অংশ তিনি বিদেশে পা’চার করেছেন। বাকিটা দেশে নিজে এবং সহযোগীদের নামে ব্যাংক এবং প্রতিষ্ঠানে রেখেছেন। তার আর্থিক অ’নিয়মের বি’ষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে দু’র্নীতি দ’মন কমিশনের কর্মকর্তারা অন্তত ৭০ থেকে ৮০ জন না’রী সহযোগীর তথ্য পান। তাদের একজন অবন্তিকা বড়াল। যাকে গ্রে’প্তার করে রি’মান্ডে নিয়েছে দু’দক। গ্রে’প্তারের পর থেকে তাকে নিয়ে নানা কৌতূহল।

কে এই অবন্তিকা। পি কে হালদারের সঙ্গে কি তার স’ম্পর্ক। জানা গেছে, অবন্তিকা বড়াল পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। পি কে হালদারের কাছ থেকে তিনি অনেক সুবিধা নিয়েছেন। একইভাবে নিজের অ’বৈধ সম্পদ আড়াল করেছেন এই অবন্তিকার মাধ্যমে। পিকে হালদারের বাড়ি পিরোজপুর জে’লার নাজিরপুরের দিঘিরজান গ্রামে। অবন্তিকা বড়ালের বাড়িও পিরোজপুরে। এলাকার মেয়ে হিসেবে পি কে হালদারের সঙ্গে তার পরিচয়। অবন্তিকার বাবা ছিলেন কলেজ শিক্ষক অরুণ বড়াল। তিনি প্রয়াত হওয়ার পর অবন্তিকা ও তার পরিবার জে’লা শহর ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। এরপরই অবন্তিকার সঙ্গে পি কে হালদারের পরিচয় হয়।

এক পর্যায়ে ঘনিষ্ঠতা হয়। অবন্তিকার পরিবার পিরোজপুরে বড়াল পরিবার নামে পরিচিত। এলাকায় না থাকায় তাদের নিয়ে তেমন কোনো আলোচনাও নেই। শহরের কলেজ পাড়ায় তাদের বাড়ি রয়েছে। সেখানে কেউ থাকেন না বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ওদিকে ধানমণ্ডির যে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে অবন্তিকা থাকতেন সেটিও পি কে হালদারের কিনে দেয়া বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। পি কে হালদারের আরেক সহযোগী শঙ্খ বেপারীর নামে কেনা ওই ফ্ল্যাটটি পি কে হালদারের অর্থেই কেনা বলে দুদক সূত্র জানতে পারে। দুদকের একটি সূত্র জানায়, গত ৪ঠা জানুয়ারি ওই শঙ্খ বেপারীকে আ’টক করার পরই অবন্তিকার বি’ষয়ে তথ্য বেরিয়ে আসে। এরপরই তার বি’ষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু হয়। দুদক সূত্র জানায়, জি’জ্ঞাসাবাদে তার বি’ষয়ে আরো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।

সম্প্রতি দুদকের একজন আইনজীবীর বক্তব্যের জের ধরে আলোচনায় আসে পি কে হালদারের বান্ধবীদের বি’ষয়টি। তবে কোন্‌ বান্ধবীর ব্যাংক হিসাবে কতো টাকা তার নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি ওই আইনজীবী। যদিও গত বুধবার অবন্তিকাকে গ্রে’প্তারের পর নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে।

দুদকের একজন পরিচালক মানবজমিনকে জানিয়েছেন, রোববার কিংবা সোমবার থেকেই সংস্থাটির সেগুন বাগিচার প্রধান কার্যালয়ে আনা হতে পারে অবন্তিকাকে।

এদিকে গ্রে’প্তারের পর থেকেই চারদিকে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। কে এই অবন্তিকা। পি কে হালদারের সঙ্গে তার সম্পর্কই বা কি? এসব প্রশ্নই গতকাল দিনভর আলোচনায় এসেছে বারবার।

সূত্র বলছে, পি কে হালদার, তার ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী এবং ঘনিষ্ঠ সহযোগী অবন্তিকা বড়াল মিলে প্রথমে ‘সুখদা’ নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ‘সুখদা’র শেয়ার দিয়ে খোলেন হাল ক্যাপিটাল। এই হালের পরিচালক হন প্রীতিশ ও তার স্ত্রী সুস্মিতা। আবার এই হালের ৯০ ভাগ শেয়ারের মালিক হন সুখদার পক্ষে প্রশান্তের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অবন্তিকা। হাল ক্যাপিটালের ৯০ ভাগ শেয়ারের মালিক থাকে হাল ক্যাপিটালের। বাকি ১০ ভাগ রাখা হয় হাল ক্যাপিটালের দুই কর্মচারীর নামে। তারাই হাল ক্যাপিটালের নামে আগে থেকে বিদ্যমান মাইক্রো টেকনোলজি নামে একটি কোম্পানির শেয়ার কেনেন। যার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটে।

এদিকে পি কে হালদারের সংশ্লিষ্ট ৬২ ব্যক্তির বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে রাখা ১ হাজার ৫৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা জ’ব্দ করেছে দুদক। সংস্থাটির উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান গতকাল এসব ব্যক্তি ব্যাংক হিসাবে থাকা টাকাগুলো জ’ব্দ করেন। দুপুরে দুদকের স’চিব মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার তথ্যটি গণমাধ্যমকে জানান। তিনি বলেন, পি কে হালদারের ইস্যুটি অনেক বড়। তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকা ৬২ জনের ব্যাংক হিসাব থেকে ১ হাজার ৫৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা জ’ব্দ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন জনের মাধ্যমে পি কে হালদারের বিভিন্ন দিকে লিংক আছে। ইতিমধ্যে অনেককে জি’জ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মোটামুটি ৬২ জনের সঙ্গে তার লিংকের সূত্র পাওয়া গেছে। এসব তথ্য আমাদের ত’দন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

দুদক যাদের হাজার কোটি টাকা জ’ব্দ করেছে: পি কে হালদারের সহযোগী বাসুদেব ব্যানার্জী। এই ব্যক্তি নিজ কোম্পানি এমএসটি মেরিন, দিয়া ওয়েল লি. এর নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফাস ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং থেকে ঋ’ণ দেখিয়ে ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের ৩৩টি শাখায় ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট ৭৬৪ কোটি টাকা জমা করেছেন। এবং ৪৫৩ কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন। দুদক ফ্রিজ করেছে ৪.৬৪ কোটি টাকা। পি কে হালদারের আরেক সহযোগী পাপিয়া ব্যানার্জির ব্যাংক হিসাব থেকে ৬৪ লাখ টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো যাদের টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে তারা হলেন- পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জল কুমার নন্দী, পি কে হালদারের সহযোগী অমিতাভ অধিকারী, রতন কুমার বিশ্বাস, প্রীতিশ কুমার হালদার, রাজীব ঘোষ, পূর্ণিমা রাণী হালদার, কাজী মম’রেজ মাহমুদ, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, ইরফান আহমেদ খান, রাম প্রসাদ রায়সহ আরো কয়েকজন।

এদিকে পি কে হালদারের দু’র্নীতির সংশ্লিষ্টতায় গতকাল পিপলস লিজিংয়ের এমডি সামী হুদাসহ চার জনকে জি’জ্ঞাসাবাদ করে দুদক। জি’জ্ঞাসাবাদ শেষে পিপলস লিজিংয়ের এমডি সামী হুদা তার আমলে কোনো দু’র্নীতি হয়নি বলে দাবি করেন। এ ছাড়া অন্য যাদের জি’জ্ঞাসাবাদ করা হয় তারা হলেন- প্রতিষ্ঠানটির এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রে’সিডেন্ট কাজী আহমেদ জামাল, সিএফও মানিক লাল সমাদ্দার ও হেড অব ক্রেডিট মো. মাহমুদ কায়সার।

পিপলস লিজিংয়ের গ্রাহকদের প্রায় ৩ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা পা’চারের অ’ভিযোগ পি কে হালদারের বি’রুদ্ধে। ২০১৯ সালে স’রকারের শুদ্ধি অ’ভিযানের পরপরই তার নাম আলোচনায় উঠে আসে। পরে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অ’বৈধ সম্পদ অর্জনের অ’ভিযোগে পি কে হালদারের বি’রুদ্ধে মা’মলা করে দুদক। তাকে জি’জ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হতে ২০২০ সালের ১৪ই নভেম্বর নোটিশ দিয়েছিল দুদক। তার আগে ৩রা অক্টোবর তার বিদেশ যাত্রায়ও নি’ষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। কিন্তু এই নি’ষেধাজ্ঞার মধ্যেই দেশ থেকে পা’লিয়ে গেছেন পি কে হালদার। পরে দেশে আসার কথা বলেও আর আসেননি। গত ৮ই জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে গ্রে’প্তারি পরোয়ানা দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ইন্টারপোল।

সূত্রঃ মানবজমিন