টং দোকানে খিচুড়ি বিক্রি করে সফল রিয়াদ

| আপডেট :  ১৩ জানুয়ারি ২০২১, ১২:৫২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৩ জানুয়ারি ২০২১, ১২:৫২ অপরাহ্ণ

বর্তমানে আমাদের দেশের অন্যতম স’মস্যা বেকারত্ব। এমনকি কেউ কেউ চাকরি না পেয়ে হ’তাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহ’’ত্যার পথও বেছে নিয়েছেন। তবে ইচ্ছে আর চেষ্টা থাকলে যে বেকারত্বের এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব তারই উদাহরণ রিয়াদ পাঠান।

রিয়াদে জন্ম ও বেড়ে ওঠা জন্ম ও বেড়ে ওঠা চাঁদপুর সদর উপজে’লার বাগাদী ইউনিয়নের ইসলামপুর গাছতলায়। আর্থিক অনটন এবং পরিবারের বড় স’ন্তান হওয়ায় হাফেজিয়া মাদ্রাসা ঘসিপুর থেকে দাখিল (এসএসসি) পাসের পরই কাঁধে নিতে হয় সংসারের দায়িত্ব। পড়ালেখা ছেড়ে যোগ দেন চাকরিতে। কিন্তু চাকরিতে মানিয়ে উঠতে না পারায় চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর দুই বছর বেকার ছিলেন। বেকারত্বের কারণে একসময় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এরপরই সিদ্ধান্ত নেন ব্যবসা করার। কিন্তু ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় টাকাও তার কাছে ছিলো না। পরবর্তীতে এক বড় ভাইয়ের সাহায্যে ৫০ হাজার টাকা ঋ’ণ নিয়েই শুরু করেন যাত্রা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি রিয়াদকে।

রিয়াদ জানান, তার বাড়ির কাছে গাছতলা ব্রিজের পাশে টঙের একটি দোকান ছিল। ঋ’ণ নেয়ার পর তার দোকানটি কেনার ইচ্ছে তৈরি হয় এবং দোকান মালিকের কাছে দোকানটি কিনতে চান। দোকান মালিকও দোকানটি বিক্রি করতে রাজি হলে ঋ’ণের টাকার কিছু অংশ দিয়ে ভাঙা টং দোকান কিনে নেন। এরপর দোকানের কিছু অংশ মেরামত করে একটু বড় ও পরিপাটি করেন দোকানে ১০-১২ হাজার টাকার মালামাল ওঠান। প্রথম’দিকে মালামালের মধ্যে ছিল চা-সিগারেট, বিস্কুট, কেক, রুটি, কলা, চিপস ইত্যাদি। টং দোকানের পাশেই চাঁদপুর মেরিন একাডেমির ভবন। সেখানে অনেক শিক্ষার্থী ট্রেনিংয়ের জন্য যাতায়াত করত। শহর থেকে একটু বাইরে হওয়ায় একাডেমির আশেপাশে কোনো হোটেল বা রেস্টুরেন্ট না থাকায় শিক্ষার্থীরা খুঁজে নেয় রিয়াদের টং দোকান।

শিক্ষার্থীরা রিয়াদের টং দোকানের রুটি, কলা, বিস্কুট, চা খেয়ে দিন কা’টাতো। রিয়াদের কাছে বি’ষয়টি ভালো লাগতো না। তাই চিন্তা করলেন, নিজের তৈরি করা খিচুড়ি সস্তায় তাদের জন্য তৈরি করবেন। সঙ্গে মুরগির মাংস ও আলুর ঝোল। মেরিনে ট্রেনিং নিতে আসা শিক্ষার্থীরা খিচুড়ি পেয়ে খুশি হলো। রিয়াদের খিচুড়ির ব্যবসা বেশ ভালোই জমে ওঠে।

তবে শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত হলেও বাইরের কেউ তখনো তেমনভাবে টং ঘরটি চিনতো না। সকলের কাছে টং দোকানটি পরিচিত হয়ে ওঠে মূলত সিপি রাইডারস্ নামে একটি গ্রুপের সদস্যদের মাধ্যমে। তারা প্রতিদিন সকালে হাঁটতে ও ব্যায়াম করতে রিয়াদের দোকানের কাছে যেত। তখন তারা কৌতূহলবশত টং দোকানে আসেন এবং চা খাওয়ার পর তারা খিচুড়ি খান। আর খিচুড়ি ভীষণ পছন্দ হয় তাদের। পরবর্তীতে তারা ফেসবুকে রিভিউ দেন, অল্প টাকার মধ্যে ভালো মানের খিচুড়ি পাওয়া যায়। আর তাদের এই ফেসবুকে রিভিউ দেখে তাদের বন্ধুরা রিয়াদের দোকানে গিয়ে খিচুড়ি খেয়ে তারাও ফেসবুকে রিভিউ দেন। এভাবে স্থানীয় সবাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বি’ষয়টি দেখেন। এভাবে রিয়াদের টং দোকানের বি’ষয়ে সবাই জানতে শুরু করে এবং মানুষের চা’প দিনদিন বাড়তে শুরু করে।

পরবর্তীতে রিয়াদ দোকানের নাম ‘পাঠান টং ঘর’ দিয়ে ফেসবুকে একটি পেজ খোলেন। অনলাইনে খিচুড়ির অর্ডার আসতে শুরু করে। প্রথম প্রথম অর্ডার কম হলেও আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। একসময় অতিরিক্ত অর্ডারের কারণে হিমশিম খেতে হয় তার। এরই মধ্যে টং ঘরে কিছু পদও বাড়ানো হয়। বর্তমানে খিচুড়ি ছাড়াও মোরগ পোলাও ও ভুনা খিচুড়ি পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন প্রো’গ্রাম বা বিশেষ দিনে ফ্রাইড রাইসের সাথে ফ্রাইড চিকেন, কোমলপানীয় ও ভেজিটেবল দিয়ে প্লেটার করে অফার দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি মাঝে মধ্যে ১ টাকার চায়ের অফার ও ফ্রিতে হোম ডেলিভারিও দেওয়া হয়। পাশাপাশি কক চিকেন খিচুড়ি, বিফ খিচুড়ি করা হয়।

এগুলো ছাড়াও রিয়াদের টং ঘরে দুপুরে ও রাতে খাওয়ার জন্যে সাদা ভাতের সঙ্গে বিভিন্ন মাছ, ডাল, ভর্তা ও সালাদ দিয়ে প্যাকেজ করা হয় এবং প্রায় ২৩ ধরনের চা পাওয়া যায়। এর মধ্যে কাজুবাদামের চা, নবাব চা এবং মালাই চা বেশ জনপ্রিয়।

রিয়াদ জানান, নাস্তার জন্য তার টং ঘরে বিকেলে বা সন্ধ্যায় চিকেন চপ, ডিম চপ, রোল এবং নুডলস আইটেম বিক্রি হয়। আর শীতের সময়ে খেজুরের রস দিয়ে তৈরি পায়েস পাওয়া যায়। তবে এখন পর্যন্ত তার টং ঘরের সর্বোচ্চ বিক্রিত আইটেম হলো।খিচুড়ি।

রিয়াদ স্বপ্ন দেখেন একসময় তার এই দোকানটি একটি বড় রেস্টুরেন্টে পরিণত করবেন এবং মানুষের নিকট স্বল্পমূল্যে মানসম্পন্ন খাবার পৌঁছে দিবেন।