‘মাকে বিয়ে দিও না… আমি খাওয়াব’

| আপডেট :  ৩১ জুলাই ২০২২, ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৩১ জুলাই ২০২২, ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ

চাকরি করে মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন ইকবাল হোসেন মারুফ। টানাটানির সংসারে স্বপ্ন ছিল এসএসসি পাশ করে যোগ দেবেন সেনাবাহিনীতে।তার আগেই চট্টগ্রামের খৈয়াছড়ায় অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে প্রাণ যায় এ তরুণের। শুক্রবার দুপুরে পিকনিকে যাওয়া মাইক্রোবাসে মহানগর প্রভাতী ট্রেনের ধাক্কায় ওই শিক্ষার্থীসহ নিহত হন ১১ জন।

শনিবার সকালে হাটহাজারি উপজেলার চিকদণ্ডী ইউনিয়নের খন্দকিয়া গ্রামে মারুফের নানা বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বুক ভাঙা কান্নায় বিলাপ করছেন মা কামরুন্নাহার ও নানী নূর নাহার বেগম।কাছেই খন্দকিয়া ছমদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজার জন্য তখন নেওয়া হচ্ছিল মারুফের লাশ। প্রতিবেশী আর স্বজনরা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও এই শোকে তারাও ছিলেন ভাষাহীন।

বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের কারণে নানা বাড়িতেই বড় হয়েছেন মারুফ। তিন সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। বাকি দুই যমজ ভাই-বোন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।মা কামরুন্নাহার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বেশ কয়েক বছর আগে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় তিন সন্তানকে নিয়ে আছেন বাবার বাড়িতে।

কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, “বাবার বাড়িতে টানাটানির সংসারে আমার মারুফের ইচ্ছা ছিল এসএসসি পাশ করে সেনাবাহিনীতে ভর্তি হবে। চাকরি করে আমাদের মুখে হাসি ফোটাবে। কিন্তু আমার সব আশা শেষ… “অর্থ কষ্টের কারণে আমার ছেলে ঘর থেকে পিকনিকে যাবার টাকাও খোঁজেনি। তার বন্ধুরা টাকা ভেঙে তাকে নিয়ে গেছে।”

কামরুন্নাহার এসব কথা বলার সময় তাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন মা নুরুন্নাহার। মেয়ের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে জানান, আরেকটি বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছেন মারুফের বাবা।

তিনি বলেন, “২১ দিন বয়স থেকেই সে আমাদের ঘরে। কোলেপিঠে করে তাকে বড় করেছি আমি। অল্প বয়েসেই আমার মেয়ে স্বামী হারা, অনেক প্রস্তাব এসেছিল তাকে আবার বিয়ে দেওয়ার।“কিন্তু মারুফ সবসময় বলত আমার মাকে বিয়ে দিও না… আমি খাওয়াব।”

মারুফের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “সেজন্য সে অনেকের সাথে কথাও বলত, কিভাবে নিয়োগ পাবে সেটা নিয়ে। কিন্তু সবকিছু শেষ হয়ে গেল।” হাটহাজারি উপজেলার কেসি নজু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা শাখার এ শিক্ষার্থীর এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

মারুফের সেনা বাহিনীতে ভর্তির ইচ্ছার কথা জানতেন তার স্কুল শিক্ষক সাধন চন্দ্র নাথও। তিনি বলেন, “মারুফ বিএনসিসি’র সেনা শাখার ক্যাডেট ছিল। পড়ালেখার পাশাপাশি অনুশীলনও ভালো করত।”

প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, “ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ভালো ছাত্র ছিল সে। আমাদের আশা ছিল এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাবে। কিন্তু পরীক্ষার আগেই সে চলে গেল আমাদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে।”

বাড়ির কাছের যোগীরহাট এলাকার ‘আর অ্যান্ড জে প্রাইভেট কেয়ার’ কোচিং সেন্টারে পড়তেন মারুফ। শুক্রবার কোচিং সেন্টারের শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে পিকনিকে গিয়েছিলেন মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝর্ণায়।মা কামরুন্নাহার বলেন, “দুর্ঘটনার খবর শুনেই মারুফকে ফোন করেছিলাম। মোবাইলে রিং বেজে যাচ্ছিল, কেউ রিসিভ করে না। পরে ছেলের লাশ পেলাম।”