মি’থ্যা মা’মলা দিয়ে ফাঁ’সিয়ে আমাদের সুখের সংসার ধ্বং’স করে দিয়েছে: প্রদীপের স্ত্রী

| আপডেট :  ২৭ জুলাই ২০২২, ০৪:৫৭ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৭ জুলাই ২০২২, ০৪:৫৭ অপরাহ্ণ

অ’বৈধ সম্পদের মা’মলায় দো’ষী সাব্যস্ত টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ দাবি করেছেন, তিনি ‘নির্দোষ’, কোনো দু’র্নীতি তিনি ‘করেননি’। বুধবার রায় ঘোষণার পর আ’দালত থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রদীপ সাংবাদিকদের সামনে ওই দাবি করেন।

আর তার স্ত্রী চুমকি কারণের দাবি, প্রদীপের ‘ভালো কাজে’ ক্ষু’ব্ধ মহল তাদের ‘সুখের সংসার ধ্বং’স’ করে দিয়েছে।দুদকের এ মা’মলায় কয়েকটি ধারা মিলিয়ে প্রদীপকে মোট ২০ বছর এবং তার স্ত্রী চুমকিকে ২১ বছরের কা’রাদ’ণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বুধবার বেলা ১১টার দিকে আ’দালতে আনা হয় প্রদীপ কুমার দাশকে। আর চুমকিকে আ’দালতে হাজির করা হয় তার আগেই। চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আ’দালতের বিচারক মুন্‌সী আব্দুল মজিদ স্বল্প সময়ের মধ্যে রায় ঘোষণা করেন।

রায়ের পর দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক মাহমুদ বলেন, “প্রদীপ কুমার এবং চুমকি দাশের জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গো’পন, মানি লন্ডারিং এবং সম্পদের অ’পব্যবহারেের অ’ভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আজ রায় দেওয়া হয়েছে।

“সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণ ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আ’দালত আ’সামি প্রদীপ কুমার দাশকে সর্বমোট ২০ বছরের সশ্রম কা’রাদ’ণ্ড এবং চুমকি কারণকে ২১ বছরের সশ্রম কা’রাদ’ণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। তাদের স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন।”

মাহমুদুল হক মাহমুদ বলেন, “দু’র্নীতি ও ক্ষমতার অ’পব্যবহারে করে প্রদীপ যে সম্পদ অর্জন করেছে, সে সম্পদকে বৈধ করার চেষ্টায় তার স্ত্রীর নামে লন্ডারিং করেছে। সেটা আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি। তাই মাননীয় আ’দালত এই রায় দিয়েছেন।” রায় ঘোষণার পর আ’দালত কক্ষ থেকে প্রিজন ভ্যানের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রদীপ সেখানে থাকা সাংবাদিকদের সামনে বলেন, “আমি কোনো দু’র্নীতি করিনি। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।

“আমাকে সিনহা হ’’ত্যা মা’মলায় যে রায় দেওয়া হয়েছে, ওখানেও আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। আপনারা ত’দন্ত করে দেখেন। থানায় যদি বিভিন্ন অফিসার থাকে, বিভিন্ন এসআই থাকে, তারা যদি কোনো অ’পরাধ করে থাকে, ওই দায় দায়িত্ব তাদের।”

দু’র্নীতি: ওসি প্রদীপের ২০, চুমকির ২১ বছরের সাজা, সম্পদ বাজেয়াপ্ত
ব্যাপক হট্টগোল আর পুলিশের বাঁশির শব্দের মধ্যে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, “আমি শুধুমাত্র স’রকারের জিরো টলারেন্স বাস্তবায়নের জন্য মা’দকের বি’রুদ্ধে যু’দ্ধ করেছি।… যাতে যুব সমাজ ধ্বং’স না হয়।”

প্রদীপের ১০-১৫ মিনিট পর আ’দালত থেকে চুমকিকে বের করা হয়। বাইরে থাকা সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, “আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নই। আমার স্বামী ভালো কাজ করায় বিভিন্ন মহল তার বি’রুদ্ধে লেগেছে। “ষ’ড়যন্ত্র করে মি’থ্যা মা’মলা দিয়ে ফাঁ’সিয়ে আমাদের সুখের সংসার ধ্বং’স করে দিয়েছে।”

কোন ধারায় কী সাজা
রায়ে দু’র্নীতি দ’মন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় চুমকি কারণের ১ বছরের কা’রাদ’ণ্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের কা’রাদ’ণ্ড হয়েছে। এই ধারায় খালাস পেয়েছেন প্রদীপ কুমার দাশ।

একই আইনের ২৭ (১) ধারায় প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি দুজনকেই ৮ বছরের কা’রাদ’ণ্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সাজা দেয়া হয়েছে।

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় প্রত্যেককে ১০ বছরের কা’রাদ’ণ্ড এবং চার কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও ২ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে প্রদীপ ও চুমকিকে।

১৯৪৭ সালের দু’র্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় প্রদীপ ও চুমকি প্রত্যেকের দুই বছর করে কা’রাদ’ণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ‍দুই মাসের সাজা দিয়েছে আ’দালত।

তিনটি আইনের চারটি ধারায় প্রদীপ কুমার দাশের মোট ২০ বছরের কা’রাদ’ণ্ড এবং ৪ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো মোট ২ বছর ৮ মাসের সাজা হয়েছে।

আর তার স্ত্রী চুমকির মোট ২১ বছরের কা’রাদ’ণ্ড, ৪ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা ও অনাদায়ে আরো মোট ২ বছর ৯ মাসের সাজা হয়েছে।

দুদকের পিপি মাহমুদুল হক মাহমুদ বলেন, “সকল ধারার শা’স্তি একসাথে কার্যকর হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রের অনুকূলে মা’মলায় উল্লেখিত সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছে আ’দালত।”

২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে এপিবিএন চেকপোস্টে গু’লি করে হ’’ত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় সেসময়ের টেকনাফের ওসি প্রদীপ গ্রে’প্তার হয়ে কা’রাগারে যাওয়ার পর তার অ’বৈধ সম্পদের খোঁজে ত’দন্তে নামে দুদক।

ওই বছর ২৩ অগাস্ট দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন অ’বৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অ’ভিযোগে প্রদীপ ও চুমকির বি’রুদ্ধে মা’মলা করেন।

এ মা’মলার অ’ভিযোগপত্রে যে সব সম্পদের উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হলো- নগরীর পাথরঘাটায় একটি ছয় তলা বাড়ি, ষোলশহরে সেমিপাকা ঘর, ৪৫ ভরি সোনা, একটি করে কার ও মাইক্রোবাস এবং কক্সবাজারে ফ্ল্যাট।