বশেমুরবিপ্রবিতে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রভাষককে শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ

| আপডেট :  ৪ জানুয়ারি ২০২১, ০৫:১৯ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৪ জানুয়ারি ২০২১, ০৫:১৯ পূর্বাহ্ণ

“আমার যদি ক্ষমতা থাকতো, আমি যদি এই পজিশনে না থাকতাম তাহলে আপনার কল্লা কেটে ফেলে দিতাম”- সম্প্রতি একটি অডিও ক্লিপে এভাবেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সভাপতি বিতান খানমকে তারই এক সহকর্মীকে হুমকি দিতে শোনা গিয়েছে।

ইতোমধ্যে ভুক্তভোগী শিক্ষক প্রভাষক টি.এন. সোনিয়া আজাদ বিতান খানমের বিরুদ্ধে শারিরীক নিগ্রহ এবং হুমকি প্রদানের অভিযোগ তুলে প্রতিকার চেয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর একটি লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন।

গত ৩০ নভেম্বর রেজিস্ট্রার বরাবর দেয়া ওই আবেদনপত্রে ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, বিগত ২৯-১১-২০২০ ইং তারিখে ০১ ঘটিকায় লােক প্রশাসন বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সভা চলাকালীন সময়ে বিভাগীয় সভাপতি বিতান খানম বিধি বহির্ভূত ভাবে লােক প্রশাসন বিভাগের এক প্রভাষকের অভিজ্ঞতা ও যােগ্যতা অধিক দেখিয়ে তাকে প্ল্যানিং কমিটির এজেন্ডায় স্বাক্ষর প্রদান করতে বলে। তিনি বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আপগ্রেডেশন প্রমােশন নীতিমালার বিরুদ্ধে হওয়ায় আপত্তি সহ স্বাক্ষর প্রদান করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিতান খানম তাকে তার টেবিলে থাকা পেপার ওয়েট ,সীল প্যড ও স্টাপ্লার মেশিন ছুড়ে মারেন এবং বিভিন্ন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এছাড়া ইতোপূর্বে বিতান খানম তাকে তার কল্লা কেটে ফেলারও হুমকি দিয়েছেন।

এছাড়া উক্ত আবেদনপত্রে সোনিয়া আজাদ আরও জানান, এর আগে ২২-০৯-২০২০ইং তরিখেও বিতান খানম তাকে ভয়াবহ মানসিক নির্যাতন করেছেিলেন এবং ঐ সময়ে বিষয়টি তিনি শিক্ষক সমিতিকে অবহিত করেছিলেন। শিক্ষক সমিতি তখন বিষয়টি সুরাহাও করে দিয়েছিল কিন্তু এরপরও বিতান খানম উদ্দেশ্যমূলকভাবে বারবার তার ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন অব্যাহত রেখেছেন।

এ বিষয়ে বিতান খানমের সাথে যোগাযোগ করা হলে বিতান খানম সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং দাবি করেন তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বিতান খানম বলেন, “আমার কাছে এক শিক্ষকের যৌন হয়রানির প্রমাণ রয়েছে, একারণে ওই শিক্ষক সোনিয়া ম্যাডামকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র করছে। এছাড়া সোনিয়া ম্যাডাম এখানে অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন সেটি আমি জানি এবং সোনিয়া ম্যাডাম আমাকে আমাদের এক সহকর্মীর একটি অভিজ্ঞতা কাউন্ট না করার বিষয়েও অনুরোধ করেছিলেন কিন্তু আমি তার অনুরোধ রাখি নি। মূলত এসব কারণেই তিনি আমার বিরুদ্ধে এই মিথ্যা অভিযোগ করছেন।”

এসময় বিতান খানম এ বিষয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের তিন শিক্ষক মো: নাসিরউদ্দিন, মো: হাশেম রেজা এবং আয়েশা সিদ্দিকার সাথেও যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু এই তিন শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করা হলে আয়েশা সিদ্দিকা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি আর অপর দুই শিক্ষক কল্লা কেটে ফেলার হুমকি প্রদানের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন। তবে প্রভাষক মো: নাসিরউদ্দিন জানান, অভিযোগে উল্লেখিত মিটিংয়ে কোনো শারিরীক নিগ্রহের ঘটনা ঘটেনি।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সোনিয়া আজাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নিজের মেধা ও যোগ্যতার মাধ্যমেই নিয়োগ পেয়েছেন। এছাড়া তিনি অভিজ্ঞতা কাউন্ট না করার বিষয়ে কোনো অনুরোধ করেন নি, তিনি শুধুমাত্র বিষয়টিতে নোট অব ডিসেন্ট প্রদান করেছেন। আর অভিযুক্ত বিতান খানম তাকে বারবার অশ্লীল গালাগাল সহ হুমকি দিয়েছেন ও মানসিক নির্যাতন করেছেন এবং একারণেই তিনি প্রশাসনের নিকট এই ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।

এসময় তিনি আরও জানান, তিনি কোনো অফিসিয়াল লেটার না পেলেও জানতে পেরেছেন এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে এবং তদন্ত কমিটিতে থাকা এক সদস্যের বিরুদ্ধে কিছুদিন আগেই গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে যার প্রেক্ষিতে তিনি একটি পদ থেকে পদত্যাগও করেন। এমন বিতর্কিত কেউ কমিটির সদস্য থাকলে তদন্ত প্রতিবেদন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোঃ আব্দুর রউফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন এবং তদন্ত কমিটিতে বিতর্কিত কেউ থাকলে তদন্ত কমিটিতে পরিবর্তন আনা হবে।”