ঘুমন্ত স্ত্রী ও দুই সন্তানকে ব্যাট দিয়ে পি’টিয়ে মা’রেন স্বামী

| আপডেট :  ২২ মে ২০২২, ০৮:০৬ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২২ মে ২০২২, ০৮:০৬ অপরাহ্ণ

নরসিংদীর বেলাব উপজে’লায় এক নারী ও তাঁর দুই স’ন্তানের লা’শ উ’দ্ধারের ঘটনায় গৃহকর্তাকে আ’টক করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গৃহকর্তা গিয়াস উদ্দিন শেখ প্রাথমিক জি’জ্ঞাসাবাদে স্ত্রী ও স’ন্তানদের হ’’ত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

আজ রোববার বিকেল ৪টার দিকে পিবিআইয়ের জে’লা পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আ’টকের পর গিয়াস উদ্দিন শেখ জি’জ্ঞাসাবাদে মৌখিকভাবে হ’’ত্যাকাণ্ডে জ’ড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং হ’’ত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন। ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের উপর্যুপরি পি’টিয়ে ও ছু’রিকাঘাত করে হ’’ত্যা করা হয়। আমরা এখন তাঁকে নিয়ে অ’ভিযান চা’লিয়ে হ’’ত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছু’রি ও ব্যাটসহ অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এর বিস্তারিত জানানো হবে।’

এর আগে আজ বেলা ১১টার দিকে উপজে’লার পাটুলী ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের বাড়ি থেকে লা’শ তিনটি উ’দ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় নি’হত তিনজন হলেন গিয়াস উদ্দিন শেখের স্ত্রী রাহিমা বেগম (৩৫) এবং তাঁদের দুই স’ন্তান রাব্বি শেখ (১৩) ও রাকিবা শেখ (৭)। রাহিমা বেগম এলাকায় কাপড় সেলাইয়ের দরজি হিসেবে পরিচিত। রাব্বি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ঝরে পড়া ছাত্র ও রাকিবা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

গিয়াস উদ্দিন শেখ (৪৫) বেলাব উপজে’লার পাটুলী ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়ার আড়াল এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টেন্ডারের মাধ্যমে রঙের কাজ করেন। তিনি বেশির ভাগ সময় গাজীপুরে অবস্থান করেন। আর দুই স’ন্তানকে নিয়ে রাহিমা বেগম গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। গতকাল শনিবার বিকেলে গিয়াস উদ্দিন গাজীপুরের কর্মস্থলে যান। স্ত্রী ও দুই স’ন্তানের লা’শ পড়ে থাকার খবর পেয়ে তিনি আজ সকাল ১০টার দিকে গাজীপুর থেকে বাড়িতে যান।

স্থানীয় লোকজন বলেন, আজ সকাল আটটার দিকে স্থানীয় এক নারী বানাতে দেওয়া পোশাক আনতে যান রাহিমা বেগমের বাড়িতে। বাইরে থেকে দরজা আ’টকানো দেখে বেশ কয়েকবার নাম ধরে সজো’রে ডাকাডাকি করেন তিনি। কিন্তু আশপাশ থেকেও কারও কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে কৌতূহলবশত দরজার নিচ দিয়ে ঘরের ভেতরে তাকান তিনি। এ সময় তিনি র’ক্ত দেখতে পেয়ে চি’ৎকার দেন। তখন স্থানীয় লোকজন ও প্রতিবেশীরা এসে ওই ঘরের একটি জানালা ভে’ঙে ঘরের ভেতর লা’শ পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর বেলাব থানা-পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফায়েত হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ’পরাধ) সাহেব আলী পাঠান ঘটনাস্থলে আসার পর লা’শ উ’দ্ধারের কাজ শুরু হয়। এ সময় দুই ঘরের দরজা খুলে নি’হত তিনজনের লা’শ উ’দ্ধার করা হয়।

পিবিআই বলছে, আ’টকের পর গিয়াস উদ্দিন শেখ তাঁদের কাছে হ’’ত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছেন। গিয়াস উদ্দিন বলেছেন, গতকাল রাতে তিনি গোপনে বাড়িতে আসেন। পরে স্ত্রী রাহিমা বেগমের কক্ষে ঢুকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁকে পেটান। এরপর মেঝেতে ফে’লে উপর্যুপরি ছু’রিকাঘাত করেন তিনি। মৃ’ত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর পাশের ঘরে গিয়ে ঘুমন্ত দুই স’ন্তানদের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ওই ব্যাট দিয়ে পি’টিয়ে হ’’ত্যা করেন। পরে দুই ঘরের দরজা বাইরে থেকে আ’টকে রেখে তিনি চলে যান।

পিবিআই জানায়, কী কারণে এই হ’’ত্যাকাণ্ড, সে বি’ষয়ে নিজেদের মতো করে ত’দন্ত করছিল ডি’বি, র‍্যা’ব, সিআইডি, পিবিআই ও পুলিশ কর্মকর্তারা। গিয়াস উদ্দিন শেখও তাদের ত’দন্তে সহযোগিতা করছিলেন। কিন্তু তাঁকে খুবই নির্বিকার লাগছিল। স্বাভাবিক ছিলেন তিনি। প্রথমে তাঁকে স’ন্দেহ হয়নি। তিনি পিবিআইকে জানান যে তিনি ঘটনার সময় গাজীপুরে ছিলেন। পরে ত’দন্তের জন্য তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর ট্র্যাক করে পিবিআই জানতে পারে, হ’’ত্যাকাণ্ডের সময় তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন। এরপরই স’ন্দেহ থেকে তাঁকে আ’টক করা হয়। আ’টকের পর জেরার মুখে তিনি পিবিআইয়ের কাছে মৌখিকভাবে স্ত্রী ও দুই স’ন্তানকে হ’’ত্যার কথা স্বীকার করেন।

বাড়িটিতে পাশাপাশি লাগোয়া দুটি মাটির ঘর। পশ্চিম দিকের ঘরটিতে থাকতেন রাহিমা বেগম। দক্ষিণ দিকের ঘরে থাকত রাব্বি ও রাকিবা। নিজ নিজ ঘরেই তাদের হ’’ত্যা করা হয়েছে। রাহিমা বেগমের র’ক্তাক্ত লা’শ পড়ে ছিল ঘরের মেঝেতে। অন্যদিকে রাব্বি ও রাকিবার লা’শ পড়ে ছিল তাদের খাটের ও’পরে। বাড়িটির সামনেই বিশাল খোলা মাঠ। অন্তত ৫০ গজ দূরত্বে দুই দিকে দুটি বাড়ি আছে। আশপাশে আর কোনো বাড়িঘর নেই।

আ’টকের আগে গিয়াস উদ্দিন শেখের অ’ভিযোগ ছিল, ১০-১২ দিন আগে বাড়িতে কয়েকটি গাছ কে’টেছিলেন তিনি। এ নিয়ে তখন তাঁর এক চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে ঝ’গড়া হয়। ওই চাচাতো ভাই তাঁদের গাছগুলো বিক্রি করতে দেননি। এ নিয়ে তর্কবিতর্ক বাড়লে তিনি হ’’ত্যার হু’মকিও দিয়েছিলেন। তবে আ’টকের পরে পিবিআইয়ের কাছে তাঁর ভাষ্য, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে চাচাতো ভাইকে ফাঁ’সাতে গিয়ে তিনি এই কাণ্ড করেছেন।

পিবিআই নরসিংদীর পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, ‘হ’’ত্যাকাণ্ডের সময় গাজীপুরে ছিলেন জানালেও আমরা তাঁর মোবাইল ট্র্যাক করে জানতে পারি তিনি ওই সময় ঘটনাস্থলেই ছিলেন। এ ছাড়া একজন নারীর সঙ্গে তাঁর মুঠোফোনে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার বি’ষয়টিও আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এই দুই কারণে আমরা তাঁকে আলাদাভাবে জি’জ্ঞাসাবাদ করি। পরে জি’জ্ঞাসাবাদে তিনি আমাদের কাছে মৌখিকভাবে হ’’ত্যাকাণ্ডে জ’ড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এরপরই তাঁকে আ’টক করা হয়।’