ভাড়ায় মিলছে স্বামী, সুঠাম তরুণদের নিয়ে চলছে রমরমা ব্যবসা

| আপডেট :  ২৮ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:২১ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৮ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:২১ পূর্বাহ্ণ

একটি বেস’রকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন শাহিন হোসেন (ছদ্মনাম)। কিন্তু যা বেতন পান, তা দিয়ে সংসার ঠিক মতো চলে না। তাই অনেকদিন ধরেই আরেকটি পার্টটাইম চাকরি খুঁজছিলেন তিনি। অবশেষে এক সিন্ডিকে’টের হাত ধরে বাড়তি রোজগারের পথও পেয়ে যান তিনি। তবে সেটা কোনো চাকরি নয়, বলা যায় স্বামী বাণিজ্য!

রাজধানীতে এমন আরো অসংখ্য তরুণ-পুরুষ রয়েছেন, যারা জড়িয়ে পড়েছেন স্বামী বাণিজ্যে। কেউ বা ক্ষুদ্র ঋ’ণ পেতে, অভাবের তাড়নায় কিংবা বা’ধ্য হয়ে; আবার অনেকে নিজেদের যৌ’ন ক্ষুধা মেটাতে ভাড়ায় স্বামী বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ছেন। ভাড়ায় স্বামী বাণিজ্য রাজধানীতে বেশ রমরমা হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে চার ধরনের প্র’তারণার জন্য এসব স্বামী পরিচয়ে পুরুষ ভাড়া পাওয়ার নানা তথ্য উঠে এসেছে ডেইলি বাংলাদেশের অনুসন্ধানে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দিনে ৫শ’ কিংবা মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় ভাড়ায় স্বামী পাওয়ার তথ্য মিলেছে। আবার একই পুরুষ ভাড়ায় খাটেন একাধিক নারীর স্বামী পরিচয়ে। অনেকে এভাবেই নিজেদের সংসার চালাচ্ছেন। তবে তাদের পরিচয় গো’পনই থাকছে।

ভাড়ায় স্বামী ব্যবসা রমরমা যেখানে: মিরপুর, উত্তরা, রামপুরা, বনশ্রী, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, নতুন বাজার, বাড্ডা কুড়িল বিশ্বরোড, খিলক্ষেত, খিলগাঁও ও বাসাবো—এসব এলাকায় স্বামী বাণিজ্য বেশ রমরমা। বেশ সুঠাম দেহের অধিকারী ৩৩ বছরের যুবক রাশেদুর রহমান (ছদ্মনাম)। মাস্টার্স পাস করেও মেলেনি চাকরি। তাই চাকরির খোঁজে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় এসেছেন কয়েকমাস আগে। কিন্তু ভাগ্যে জোটেনি কাঙ্ক্ষিত চাকরি। হঠাৎ একদিন ফেসবুকে চোখ পড়ে একটি চমকপদ বিজ্ঞাপন। সম্পূর্ণ পরিচয় গো’পন রেখে সুন্দরী নারীদের ভাড়াটে স্বামী খুঁজছেন তারা।

রাশেদুর রহমান ডেইলি বাংলাদেশকে জানায়, ওই পেজে যুক্ত হতে হলে প্রথমে এক হাজার টাকা দিয়ে বায়োডাটা জমা দিতে হয়। এরপর তারা অফিসে ডেকে আনে এবং নিয়মকানুন জানিয়ে দেয়।

তিনি আরো বলেন, বৃ’দ্ধ বাবা-মা ও ছোট ভাই-বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে বা’ধ্য হয়েই ভাড়াটে স্বামী হয়ে যাই। শর্ত থাকে এসব নারীদের নাম, পরিচয়, মোবাইল নম্বর দেয়া যাবে না কাউকে। এখন বেশ ভালো আছি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্ষুদ্রঋ’ণ পেতে অনেক সময় বা’ধ্য হয়েই স্বামী নিগৃহীতারা ভাড়ায় খোঁজেন স্বামী। সে ক্ষেত্রে বা’ধ্য হয়ে পরিচিত এবং ভালো সম্পর্ক আছে এমন কাউকে স্বামী হিসেবে ভাড়া করেন তারা।

স্বামী পরিচয়ে কৌশলী ক্ষুদ্র ঋ’ণ প্র’তারণা: এনজিওসহ বেশ কিছু মাল্টিপারপাস কোম্পানি থেকে ক্ষুদ্র ঋ’ণ পেতে শর্ত হিসেবে স্বামীর পরিচয় ও তার ছবি দিতে হয়। যাদের স্বামী নেই তাদের জন্য প্রয়োজন হয় ভাড়ায় স্বামী।

স্বামী পরিত্যক্তা আলেয়া বেগম (৩০) থাকেন রাজধানীর মরিপুররে রূপনগর এলাকার একটি বস্ততিতে। ক্ষুদ্র ঋ’ণ পেতে প্রয়োজন স্বামী। তিনি ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ঘরে ১০ বছরের একটি ছেলে ও ৮ বছরের একটি মেয়ে। এদের রেখেই স্বামী আর একটি বিয়ে করে পা’লিয়ে গেছেন। কোথায় গেছেন সেটাও জানা নেই আলেয়ার। মানুষের বাসায় কাজ করে কোনো মত সংসার চালাতেন। ক’রোনায় সেই কাজটিও হা’রিয়েছেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, রাস্তার পাশে ফুটপাতে শীতের পিঠা বিক্রি করে স’ন্তানদের মুখে দু’মুঠো ভাত দিতে ক্ষুদ্র ঋ’ণ প্রয়োজন। ঋ’ণ পেতে লাগবে স্বামী। বা’ধ্য হয়ে পরিচিত একজনকে টাকার বিনিময়ে স্বামী ভাড়া করেন তিনি।

অপর এক নারী সখিনা বেগম (২৮) বসবাস করেন রাজধানীর তেজগাঁও রেলওয়ে বস্তিতে। ১০ বছর আগে বিয়ে করেছিলেন ভবেঘুরে স্বামী রাকিবকে। ঘরে ৯ বছরের একটি ছেলে স’ন্তানকে রেখে নিরুদ্দেশ হয়েছেন গত তিন বছর ধরে।

সখিনা বেগম ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, এনজিও থেকে ঋ’ণ পেতে স্বামী দরকার। ঋ’ণ পেতে স্বামী-স্ত্রী দু’জনের ছবি লাগবে। বা’ধ্য হয়ে ঋ’ণ পেতে একজন স্বামী ভাড়া করেছিলেন তিনি। কিন্তু বিনিময়ে ভাড়া করা স্বামীকে দিতে হয় অন্য কিছু।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বামী পরিচয়ে একইব্যক্তি একাধিক নারীর সঙ্গে ফ্ল্যাট বাড়িতে ভাড়াটিয়া স্বামী হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। সর্বোচ্চ পাওয়া গেছে নেত্রকণার ইকরামুল নামের এক ব্যক্তিকে। তিনি একইসঙ্গে সাত নারীর স্বামী হিসেবে ভাড়া খাটছেন। ভাড়া খাটার শর্ত হিসেবে বেঁ’ধে দেয়া হয় সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন স্বামী পরিচয়ে বাসায় অবস্থান করতে হবে। আর বাসার বাজারও করে দিতে হবে। বাসায় অবস্থান করা ও বাজার করার শর্তের কারণ হচ্ছে কেউ যেন স’ন্দেহ না করতে পারে। তবে ওইসব যৌ’নকর্মীদের ক্ষেত্রে স্বামীর ভাড়া সবচেয়ে বেশি।

ইকরামুল ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, মিরপুর বস্তির পাশে একটি চা-দোকানে পরিচয় হয় এক নারীর সঙ্গে। পরিচয়ের সূত্রে তার সঙ্গে হয় সখ্য। একসময় তার সঙ্গে স্বামী পরিচয়ে বসবাস। এর পরই ভাড়ায় স্বামী বাণিজ্য শুরু ইকরামুলের।

তিনি আরো জানান, এখন রাজধানীর মিরপুর, বাড্ডা ও গাবতলী এলাকায় সাতটি বাসায় সাত নারীর ভাড়াটে স্বামী তিনি। মাসে তিনি ভাড়া পান প্রায় ৫০ হাজার টাকা। কোনো মাসে বেশিও পান। আবার কোনো মাসে কিছুটা কমও পান।

ডি’বি পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানী ঢাকায় হরেক রকমের মানুষের বসবাস। কেউ কারো খবর রাখে না। যারা এসব কাজ করে তাদের বি’রুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তবে যদি কেউ গো’পনে এমন অ’পকর্ম করে থাকে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করব।

ডিএমপিতে কর্মরত এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, এসব ব্যবসা ও বিভিন্ন অ’পরাধ আগের তুলনায় অনেক কমেছে। নেই বললেই চলে। তার কারণ হলো এসব অ’পরাধীদের বি’রুদ্ধে অ’ভিযান চা’লিয়ে তাদের বি’রুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। যদি কেউ গো’পনে এসব অ’পকর্ম চা’লায় আপনারা আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।