বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কঠোর ইউজিসি

| আপডেট :  ৯ মে ২০২২, ০৮:১৩ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৯ মে ২০২২, ০৮:১৩ পূর্বাহ্ণ

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম রুখতে বরাবরই নির্দেশনা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। প্রতি বছরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ইউজিসি তুলে ধরে অনিয়মের ফিরিস্তি। এবার অনিয়মের লাগাম টানতে হুঙ্কার ছেড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তিন সিদ্ধান্ত মানাতে অনড় ইউজিসি। ইতিমধ্যে দেয়া হয়েছে চার দফা আল্টিমেটাম। প্রথমত, ২২ বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাবার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে ইউজিসি। দ্বিতীয়ত, কারিকুলাম হালনাগাদ না করলে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। আর চার মাসের সেমিস্টার থেকে ৬ মাসের সেমিস্টারে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় দেয়া হয়েছে কড়া বার্তা।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ২২ বিশ্ববিদ্যালয়কে। বলা হয়েছে আইন না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই ২২ বিশ্ববিদ্যালয় হলো দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, গ্রীন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস ও আশা ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

ইউজিসির সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৮টি। প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্র ২৯টি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত জমিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছে। ফাউন্ডেশনের নামে জমিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে ২টি বিশ্ববিদ্যালয়। নির্ধারিত জমিতে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়। আইনের থেকে কম জমিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে ২টি বিশ্ববিদ্যালয়। নির্ধারিত ক্যাম্পাস নির্মাণাধীন ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের। আইন মেনে নিজস্ব জমিতে নির্মাণকাজ শুরু করেনি ২১টি বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির (এপিইউবি) চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, করোনার কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক লোকসানে আছে। ফলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া বাধাগ্রস্ত হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, এগুলো একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন সময় চায়। তা বৃদ্ধিও করা হয়। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে সবাই যাতে আইন মেনে চলে। অনেকেই স্থায়ী ক্যাম্পাসে গিয়েছে।

দ্বিতীয় কড়া বার্তা দেয়া হয়েছে কারিকুলাম হালনাগাদ। নিয়ম অনুযায়ী চার বছর পরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারিকুলামের আপডেট করার কথা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর খুব একটা ভ্রুক্ষেপ নেই তাতে। ইউজিসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী জুনের মধ্যে আউটকাম বেজড এডুকেশন (ওবিই) টেমপ্লেট অনুযায়ী কারিকুলাম হালনাগাদের জন্য কমিশনে পাঠানো না হলে সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখবে কমিশন। এই নির্দেশনা দিয়ে সমপ্রতি দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারদের চিঠি পাঠিয়েছে ইউজিসি। এর আগেও একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছিল।

অধ্যাপক আলমগীর বলেন, আমি একটা কারিকুলাম নিয়ে পড়াবো। এখন কারিকুলাম আছে সেখানেও তো শিক্ষক প্রয়োজন। সংকট যেটা আছে কারিকুলাম বদলালেও থাকবে। এখন প্রয়োজন কারিকুলাম বদলানো এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের যে রিসোর্স আছে সেটা নিয়েই একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে নতুন কারিকুলাম জমা দিয়েছে। আশা করছি অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই সময়মতো জমা দিতে পারবে।

এ ছাড়াও দীর্ঘদিন যাবৎ বছরে তিন সেমিস্টারের পরিবর্তে দুই সেমিস্টারের নির্দেশনা দিয়ে আসছে ইউজিসি। এ নিয়ে একাধিকবার নির্দেশনা দেয় কমিশন। শেষ পর্যন্ত চলতি বছরের জুলাই থেকে চালুর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বছরে দুই সেমিস্টারের পরিকল্পনা ইতিমধ্যে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং সামনে আরও হবে। সম্প্রতি আমরা তিনটা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। প্রয়োজনে অন্য বিশ্ববিদ্যায়গুলোকেও বলা হবে। করোনার কারণে দুই বছরে কিছুটা পিছিয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এ কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া পিছিয়ে গেছে। তবে এবার যদি তারা আইনের ব্যত্যয় ঘটায় তাহলে আইন অনুযায়ী ইউজিসির যে ক্ষমতা সেটা প্রয়োগ করবো। আর যে ক্ষমতা ইউজিসির নাই মন্ত্রণালয়ের আছে সেটা করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ম-নীতির আওতায় আনতে বধ্যপরিকর। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও কোনো বিষয় নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেনি। পূর্বে আইন মানেনি তারা। তবে এবার আমরা কঠোর অবস্থানে যাবো।