টক অব দ্য কান্ট্রি টিটিই শফিকুল

| আপডেট :  ৮ মে ২০২২, ১২:৩২ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৮ মে ২০২২, ১২:৩২ পূর্বাহ্ণ

বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ রেলের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। তিন যাত্রী টিকিট ছাড়া সুন্দরবন এক্সপ্রেসের এসি কামরায় উঠেছিলেন। টিটিই শফিকুল ইসলাম টিকিট পরীক্ষা করতে এসে দেখেন তারা বিনা টিকিটের যাত্রী। নিয়ম অনুযায়ী তাদের জরিমানা করে সাধারণ আসনে বসিয়ে দেন। কিন্তু বাদ সাধেন যাত্রীরা। তারা রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের আত্মীয় পরিচয় দেন। বিতণ্ডায় জড়ান রেল কর্মীদের সঙ্গে। ঢাকায় ফিরে যাত্রীদের একজন তাদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ করেন টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাতের এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয় টিটিই শফিকুল ইসলামকে।

এ ঘটনা জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয় সারা দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শাস্তির মুখে পড়ায় বিব্রত হয়েছেন তারা। রেলমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন যে যাত্রীদের নিয়ে সমস্যা- তারা তার আত্মীয় নয়। যদিও স্থানীয় সূত্রগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী জড়িত তিন যাত্রীই মন্ত্রীর স্ত্রীর আত্মীয়। তাদের বিস্তারিত পরিচয়ও প্রকাশ হয়েছে। ঘটনাটিকে ন্যক্কারজনক আখ্যায়িত করে রেলমন্ত্রীর সাময়িক পদত্যাগ দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। ব্যাপক সমালোচনার মুখে গতকাল ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি করার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম অঞ্চল।

রেলওয়ের একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে টিকিট ছাড়াই পাবনা থেকে ঢাকামুখো সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে এসি কামরায় বসেন তিন যাত্রী। ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) টিকিট দেখতে চাইলে তারা রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলামের আত্মীয় পরিচয় দেন। এবং সুলভ কামরার তিনটি টিকিট দিতে বলেন। একই সঙ্গে এসি কামরা খালি থাকায় সেখানে বসে ভ্রমণের আবদার করেন। টিটিই মো. শফিকুল ইসলাম তাদের জরিমানা ও সুলভের ভাড়া বাবদ মোট ১ হাজার ৫০ টাকা নিয়ে এসি কামরা ছাড়তে বলেন। বিষয়টি নিয়ে টিটিই’র সঙ্গে ওই তিন যাত্রীর কথাকাটাকাটি হয়।

ওই তিন যাত্রী তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেনে লিখিত কোনো অভিযোগ না করলেও ঢাকায় পৌঁছে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণে’র অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগ পেয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন সংশ্লিষ্ট টিটিইকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন। বরখাস্তের আদেশের বিষয়টি ঈশ্বরদীর টিটিই হেড কোয়ার্টারের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র টিটিই ইন্সপেক্টর মো. বরকতুল্লাহ আলামিন ফোনে শফিকুল ইসলামকে জানান। পরবর্তীতে শুক্রবার গণমাধ্যমকে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, ওই ঘটনার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে সুন্দরবন ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণকারী তিন যাত্রীর সঙ্গে কর্তব্যরত টিটিই অসদাচরণ করেছেন বলে তারা রেলওয়ের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফোন করে অভিযোগ দেন। বিষয়টি আমাকেও অবহিত করা হয়। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে টিটিই শফিকুল ইসলামকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে যাত্রী: স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের স্ত্রী শাম্মী আক্তার মনির নানার বাড়ি ঈশ্বরদীতে। আলোচিত তিন যাত্রীই রেলমন্ত্রীর দূর সম্পর্কের আত্মীয়। তারা হলেন- হাসান, ওমর এবং ইমরুল কায়েস প্রান্ত। তাদের মধ্যে ইমরুল কায়েস টিটিই’র বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ট্রেনে থাকা হাসান এবং ওমর শাম্মী আক্তারের মামাতো ভাই। তাদের বাসা শহরের নূর মহল্লায়। তাদের প্রতিবেশী হচ্ছেন ইমরুল কায়েস।

ইমরুল কায়েসের মা ইয়াসমিন আক্তার নিপা। তিনি রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আকতার মনি তার ফুপাতো বোন। সে হিসাবে প্রান্ত রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের ভাগনে। আর বৃহস্পতিবার প্রান্তর সঙ্গে রেলযাত্রায় অংশ নেন মন্ত্রীর মামা শ্বশুর জাহাঙ্গীর আলমের দুই ছেলে হাসান ও ওমর। ঈশ্বরদীর নুর মহল্লার কর্মকারপাড়ায় জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ছিলেন রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মি আকতার। পাবনায় এলে তিনি ওই বাড়িতে ওঠেন। ওই বাড়ির আরেকটি অংশে থাকেন ইমরুল কায়েসের পরিবার।

সেই টিটিইকে বিভাগীয় রেলওয়ে কার্যালয়ে তলব: সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সেই ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলামকে তলব করেছে পশ্চিমাঞ্চল পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে। আজ রোববার পশ্চিমাঞ্চল পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে কার্যালয়ের ম্যানেজার (ডিআরএম) তাকে তলব করেন। গতকাল মানবজমিনকে শফিকুল ইসলাম নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঈশ্বরদী রেলওয়ের টিটিই হেডকোয়ার্টারের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র টিটিই ইন্সপেক্টর বরকত উল্লাহ আল-আমিন বরখাস্তের দিন ফোন করে জানিয়েছেন রোববার পশ্চিমাঞ্চল পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে কার্যালয়ের ম্যানেজার (ডিআরএম) আমাকে তলব করেছেন। সৃষ্ট ঘটনা নিয়ে হয়তো আমার সঙ্গে কথা বলবেন। বরখাস্তের আদেশ সমীচীন হয়েছে কিনা এবং তিনি বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করবেন কিনা- জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, স্যাররা যেটা ভালো মনে করেছেন, সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখানে আমার আর কী বলার আছে।

রোববার বিভাগীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখি, স্যাররা কী বলেন। তারপর আমার স্যারের (ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র টিটিই ইন্সপেক্টর) সঙ্গে আলোচনা করে প্রত্যাহারের আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। শফিকুল ইসলাম বলেন, ওইদিন আমি ওই তিন যাত্রীর সঙ্গে কোনো ধরনের ‘অসদাচরণ’ করিনি। তারাও আমার সঙ্গে খারাপ কোনো আচরণ করেননি। কোনো ধরনের কথা কাটাকাটিও হয়নি। এমনকি হলো যে আমি নিজেও জানি না। আল্লাহ জানেন আর তারা জানেন। শুধু জানি, আমি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছি। কোনো অন্যায় বা অনিয়ম করিনি।

তদন্ত কমিটি গঠন: রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেয়া তিন যাত্রীকে জরিমানা করায় টিটিইর শাস্তি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার পর ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল বিকালে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, রেলওয়ের পশ্চিমের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার। কমিটিতে পাকশী বিভাগীয় সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলামকে প্রধান করা হয়েছে। এ কমিটি রোববার কাজ শুরু করবে। একই সঙ্গে দুই কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। আমি শুনে আশ্চর্য় হয়েছি। এ ঘটনায় সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা, সহকারী প্রকৌশলী ও সহকারী কমান্ড্যান্টকে সদস্য করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। মন্ত্রীর আত্মীয়দের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় তো তার নিজ এলাকায় ছিলেন। তার আত্মীয় হওয়ার কথা না, আবার হতেও পারে। এ বিষয়ে আমি কনফার্ম না। যদি হয় তদন্তে সব বের হয়ে আসবে।

রেলমন্ত্রীর বক্তব্য: এদিকে গতকাল শনিবার গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন দাবি করেন, বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীরা তার আত্মীয় নন। তিনি বলেন, ওই যাত্রীদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। নাম ভাঙিয়ে কেউ হয়তো সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেছে। ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, ঘটনাটি শনিবার সকালেই শুনেছি। রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, ওই টিটিই বিনা টিকিটের যাত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেছেন। সে কারণেই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রেলের দাপ্তরিক কার্যক্রমের সঙ্গে মন্ত্রীর কোনো সংযোগ নেই জানিয়ে নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো আত্মীয় জড়িত নন। রেল কর্মকর্তারা ওই টিটিইর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। সরকার রেলসেবা বাড়াতে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিনা টিকিটের যাত্রী যদি মন্ত্রীর আত্মীয়ও হয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।

একইভাবে কোনো রেল কর্মকর্তা যদি যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন, তাকেও শাস্তি পেতে হবে। যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার কারণে টিটিইর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রেলমন্ত্রী বলেন, মাঝেমধ্যেই টিটিইরা বিভিন্নভাবে যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন, বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেন। এমন অভিযোগ আমরা প্রায়ই পাচ্ছি। তবে লোকবল সংকটের কারণে আমরা এসবের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে একেবারেই ছাড় দিলে রেলের দুর্নাম হয়ে যায়। তাই টিটিইদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়।

এদিকে, বরখাস্তকৃত টিটিই শফিকুল ইসলামকে অনেকটা ‘মানসিক রোগী’ হিসেবে উল্লেখ করে রেল মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ দপ্তরে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন। তিনি এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন, শফিকুল ‘মানসিক রোগী’ নয়, ‘মানসিক হিনমন্যতায়’ ভুগছেন।

যাত্রীদের অভিযোগে যা ছিল: মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়দানকারী যাত্রীদের পক্ষ থেকে মো. ইমরুল কায়েস প্রান্ত লিখিত অভিযোগ করলে রেলকর্মকর্তা টিটিই শফিকুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয়। তবে ওই লিখিত অভিযোগটি কার বরাবর দেয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারেন নি পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় দপ্তরের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন।

রেলমন্ত্রীকে পদত্যাগের আহ্বান টিআইবি’র: রেলমন্ত্রীর আত্মীয়দের বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণের দায়ে জরিমানা করায় টিটিই বরখাস্ত হওয়ার ঘটনাকে ন্যক্কারজনক মন্তব্য করে মন্ত্রীকে সাময়িক সময়ের জন্য পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি।

সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণের দায়ে রেলমন্ত্রীর স্ত্রী’র তিন আত্মীয়কে জরিমানা করায় সংশ্লিষ্ট টিকিট পরিদর্শককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এটি একটি ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গভীর উদ্বেগ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। ন্যায়-নিষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালনের কারণে পুরস্কৃত হওয়ার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট টিটিইকে ত্বরিতগতিতে বরখাস্তের সিদ্ধান্তে দেশবাসীর কাছে এই বার্তাটিই পরিষ্কার হয়েছে যে, ক্ষমতাবানরাই শুধু নয় বরং তার/তাদের প্রভাব বলয়ের মধ্যে থাকা আত্মীয় পরিজনদের জন্যও আইন প্রযোজ্য নয় বরং অনিয়মের কাছে মাথানত করেই রুটি-রুজি টিকিয়ে রাখার অন্যতম উপায়। একইসঙ্গে, ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে নৈতিক অবস্থান থেকে রেলমন্ত্রীকে সাময়িক সময়ের জন্য পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি নির্লজ্জ ও নিকৃষ্টতম উদাহরণ। এখানে মূলত দুইভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে, প্রথমত রেলমন্ত্রীর নিকট আত্মীয়দের বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ অর্থাৎ তারা ধরেই নিয়েছিলেন যে, রেলের প্রচলিত আইন তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়! দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট টিকিট পরিদর্শক তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করায়, তাকে কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান না করেই তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইলফোনে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। পুরস্কৃত হওয়ার পরিবর্তে বরখাস্ত হওয়ার ঘটনা- দেশবাসীর কাছে এই বার্তাটিই পৌঁছেছে যে, ক্ষমতার দাপট ও অনিয়মই হচ্ছে বাস্তবতা। তাছাড়া, এই নিকৃষ্টতম দৃষ্টান্ত এখনো গুটিকয়েক যারা নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে স্ব স্ব ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের জন্য একটি শক্তিশালী নেতিবাচক বার্তা হিসেবে বিবেচিত হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, যদিও এ ঘটনায় রেলমন্ত্রী নিজের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা গণমাধ্যমের কাছে অস্বীকার করেছেন এবং তার আত্মীয় পরিচয়দানকারীদের চেনেন না বলে দাবি করেছেন। একইসঙ্গে রেল কর্তৃপক্ষ টিটিই বরখাস্তের জন্য যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগকে সামনে নিয়ে এসেছে এবং যার সঙ্গে রেলমন্ত্রীও একমত হয়েছেন। এমন বাস্তবতায় প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, বিনা টিকিটের সেসব যাত্রী টিটিইকে রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় কেন দিয়েছিলেন? তাদের সত্যিকার পরিচয় রেল কর্তৃপক্ষ যাচাই করেছিলেন কি-না? অধিকন্তু যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ বিষয়ে টিটিই’র বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রেলমন্ত্রীর পরিচয় কতোটা প্রভাব বিস্তার করেছিল? এসব বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।

টিআইবি মনে করে যেহেতু রেলমন্ত্রীর আত্মীয়দের জড়িয়ে এ জাতীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে; অধিকন্তু বিনা টিকিটে ভ্রমণকারীগণ রেলমন্ত্রীর পরিচয় ব্যবহার করেছেন, তাই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে নৈতিক অবস্থান থেকে সাময়িক সময়ের জন্য তার পদত্যাগ করা উচিত। পাশাপাশি যেকোনো ধরনের ভয়ভীতি ও চাপের ঊর্ধ্বে থেকে সংশ্লিষ্টগণ যাতে বিনা টিকিটে ভ্রমণের দায়ে অভিযুক্তদের ও দায়িত্ব পালনকারী টিকিট পরিদর্শকের বরখাস্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে নির্বিঘ্নে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছে সংস্থাটি।