অবশেষে অটোচালক বাবার স্বপ্ন পুরণ করল সিরাজ

| আপডেট :  ২৬ ডিসেম্বর ২০২০, ০৫:০২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৬ ডিসেম্বর ২০২০, ০৪:৪৭ অপরাহ্ণ

মেলবোর্নে ঐতিহাসিক বক্সিং ডে-তে টেস্ট অভিষেক হয়েছে হায়দরাবাদের সন্তান মোহাম্মদ সিরাজের। আর এই টেস্টের মাধ্যমেই অটো চালক বাবার স্বপ্ন পূরণ করলেন সিরাজ।

হায়দরাবাদের দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা সিরাজ আজকের অবস্থানে পৌঁছেছেন মূলত তার বাবার জন্যই। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েই দেশ থেকে ভয়ানক দুঃসংবাদ পেয়েছেন ভারতের এই নবীন পেস তারকা মোহম্মদ সিরাজ। জানতে পারেন তার বাবা পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। এরপর দেশে ফেরার সুযোগ থাকলেও দেশে না ফিরে টেস্ট ক্যাপ মাথায় তুলেই বাবাকো সম্মান জানানোর সিদ্ধান্ত নেন।

ছোটোবেলায় টেনিস বলে খেলা ম্যাচে ছেলে জয় পেয়েছে শুনেই ছেলেকে ক্রিকেটার বানানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁর বাবা মোহাম্মদ গাউস। এরপর ছেলের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে দিনরাত পরিশ্রম করে যেতেন তিনি। অটোচালক বাবা ভাবতেন, আরো কয়েকটা অতিরিক্ত ভাড়া যদি খাটতে পারি, ছেলেটাকে ভাল করে ক্রিকেট খেলাতে পারব। কিন্তু তারপরও তার পক্ষে অর্থাভাবে সেই কোচিং সেন্টারের খরচ চালানো সম্ভব হত না। এসময় এগিয়ে আসেন কোচ কে. সাইবাবা। খুদে সিরাজের প্রতিভা দেখে বিনামূল্যে তাকে প্রশিক্ষণ দিতে রাজি হয়ে যান। আর সেই সাধনার ফল হিসেবে মেলবোর্নে ঐতিহাসিক বক্সিং ডে-তে টেস্ট অভিষেক হচ্ছে মোহাম্মদ সিরাজের।

সিরাজ জানান, অনূর্ধ্ব-১৯ প্রতিযোগিতায় নামার আগে জুতো ছিল না তার। অটোচালক বাবা সারা রাত ধরে অটো চালিয়ে প্রথম জুতো কিনে দেন সিরাজকে। সেই জুতো পরে পাঁচ উইকেট নিয়ে বাবার পরিশ্রমকে যথার্থ সম্মান জানান সিরাজ।

হায়দরাবাদ দলের অধিনায়ক ও সিরাজের রাজ্য দলের সতীর্থ তন্ময় আগারওয়াল বলেন, প্র্যাক্টিস শেষ হয়ে গেলেও একা একা একটি স্টাম্প বসিয়ে বল করে যেত সিরাজ। কখনো ছুটি নিতেন না। বিশ্রামের দিনেও বাড়িতে থাকত না। বলতেম বসে থাকলে বাবার স্বপ্নপূরণ কে করবে?” তন্ময় এসময় আরো বলেন, সিরাজ এখনও একদম বদলায়নি। তার বাবার মৃত্যুর দিনেই সিরাজকে ফোন করেছিলেন তিনি। জানতে চেয়েছিলেন দেশে ফিরবেন কি না। কিন্তু সিরাজ পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, তিনি ফিরে এলে তার বাবা কি খুশি হত? এসময় সিরাজ আরও বলেছিলেন, তিনি জানেন, দেশের প্রতিনিধিত্ব করলে তার বাবার আত্মা সব চেয়ে বেশি শান্তি পাবে।

এদিকে, সিরাজের অভিষেক ম্যাচ তাঁর ক্যাম্পের খুদে ক্রিকোটারদের দেখানোর জন্য জায়ান্ট স্ক্রিন বসিয়েছেন তার সাবেক কোচ সাইবাবা। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলছেন, সিরাজের কাহিনি প্রত্যেককে অনুপ্রাণিত করে। তিনি চান খুদে ক্রিকেটারেরাও শিখুক, মনের জোর কোথায় পৌঁছে দিতে পারে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে বিজয় হজারে ট্রফির সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হওয়ার পাশাপাশি রঞ্জি ট্রফিতেও প্রচুর উইকেট নিজের ঝুলিতে ভরেছেন সিরাজ। এ বারের আইপিএলেও ৯ ম্যাচে ১১ উইকেট পেয়েছেন তিনি। এছাড়া, প্রথম বোলার হিসেবে আইপিএলে দু’টি মেডেন ওভার আদায় করে নিয়েছেন কেকেআরের বিরুদ্ধে।