নৌ’বা’হিনী সৈ’নিকের স্ত্রী’র ‘সু’ই’সা’ই’ড নোট’ পড়ে কাঁ’দছে হাজারো মা’নুষ!

| আপডেট :  ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:২৭ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৬ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ণ

মোছা. রেজওয়ানা আক্তার সাথী (১৮)। নীলফামারী সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের শিঙ্গিমারি মাজাডাঙ্গা গ্রামের মো. চান্দুর কন্যা। মাছ চাষী বাবার মেয়ে সাথী বাড়ির পাশেরই মাজাডাঙ্গা তৈমুন্নেছা দাখিল মা’দরাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারীতে মেয়েটি দাখিল পরীক্ষা দিতো।

কিন্তু এসব এখন শুধুই অতীত। সংসার জীবনে প্রবেশ করে আশে-পাশে থাকা মানুষগুলোকে আপন করার শত চেষ্টা করেও ব্যর্’থতার দায়ভার নিয়ে যন্ত্রণাসিক্ত হৃদয়ে মে’য়েটি পৃথিবী ছেড়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর ) দুপুর ১২টায় নিজের বাসায় গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে সাথী আ’ত্ম’হ/’ত্যা করে।

গ্যাস ট্যাবলেট খেতে খেতেই সাথী লিখে গেছে ‘সু’ই’সা’ই’ড নোট’। তিন পৃষ্ঠার সেই চিরকুটে সে লিখে গেছে তার মনের সকল জমানো ক’ষ্টের কথা, জানিয়ে গেছে স্বা’মীর ভালবাসা না পাবার বে’দনা, বলে গেছে স্বা’মীর হা’তে নিজের বাবা-মার অ’পমান-অ’পদস্থের কথা, প্রশ্ন করে গেছে, তাকে ক’ষ্ট দিয়ে তার স্বা’মী কি পেল! অথচ, এত য’ন্ত্রণা নিয়েও চিরকুটে তার আ’কুতি ছিল, তার স্বা’মী যেন ভাল থাকে। সে চিরকুট পড়ে কেঁ’দেছে নীলফামারীর হাজারো মা’নুষ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সবেমাত্র কৈশোর পেরোনো মে’য়েটির সাথে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পা’রিবারিকভাবে বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী টেপুরডাঙ্গা গ্রামের সোনামুদ্দিনের ছে’লে জসিম উদ্দিনের সাথে। জসিম বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একজন সৈনিক এবং বাহিনীটির সদর দপ্তর ঢাকায় কর্মরত। বিয়ের পর বেশ ভালোই চলছিল তাদের সংসার। চাকরীর জন্য জসিম কর্মক্ষেত্রে অবস্থান করায় শ্বশুড়বাড়িতে স্থায়ীভাবে থাকা হয়নি সাথীর। যখন স্বামী আসতো তখন তাকে তার শ্বশুড়বাড়ির লো’কজন গিয়ে নিয়ে আসতো। আবার যখন স্বা’মী কর্মক্ষেত্রে যেতো তখন সে বাবার বাড়িতে থাকতো। এভাবেই চলছিল তাদের মাত্র ১০ মাসের সংসার।

সাথীর মা জয়নব বেগম জানায়, আমার মে’য়েকে আমার জামাই (জসিম) পছন্দ করে বিয়ে করে। জামাই নৌবাহিনীর সৈনিক হওয়াতে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে তাকে পাঁচ লক্ষ টাকা যৌ’তুক দেই। প্রথম প্রথম ভালোই চলছিল মে’য়ের সংসার। কিন্তু বিয়ের ছয়মাস যেতে না যেতেই আমার মে’য়ের উ’পর চ’লতে থাকে অ’মানবিক মা’নসিক নি’র্যাতন। নি’র্যাতনের প্রসঙ্গ আসতেই কা’ন্নায় ভে’ঙ্গে পড়েন তিনি।

এরপর চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ১৪ দিনের ছুটিতে বাড়িতে আসে আমার জামাই। এরপর আমার মে’য়েকে বাসায় নিয়ে যায়। কিন্তু সেই ১৪ দিনের মধ্যে ২দিন আমার মে’য়েকে তার ঘরে নে’য়নি এবং বাকি ১২দিন আমার মে’য়েকে মেঝেতে শুইয়ে সে (জামাই) বিছানায় ঘুমিয়েছে।

জয়নব বলেন, আমার মে’য়ের সাথে মোবাইল ফোনে বেশীরভাগ সময় কথা বলতো আমার জামাই। কিন্তু আমি এমন কোন দিন দেখিনি যেদিন আমার মে’য়ে মোবাইলে কথা বলা শেষে হা’উমাউ করে কা’ন্না ক’রেনি। আমি আমার মে’য়েকে জিজ্ঞেস করলে আমার মে’য়ে আমাকে বলতো, তোমাদের জামাই আমাকে পেয়ে সুখী নয়। তার চেহারা অনেক সুন্দর, আমার রুপ নেই। তার পাশে স্ত্রী হিসেবে দাঁড়াবার কোন যোগ্যতা নেই আমার। তোমার জামাই আমাকে বারবার বলে, সে যেন আমাকে আর না দেখে।

তিনি বলেন, বুধবার (৭ নভেম্বর) রাতে ঢাকা থেকে নীলফামারী আসার কথা ছিল সাথীর স্বা’মী জসিমের। এ নিয়ে রাত দুইটা-আড়াইটা পর্যন্ত সাথীর সাথে মোবাইলে ঝ’গড়া হয় জসিমের। সাথী রা’গ করে তার মোবাইল ফোন ভে’ঙ্গে ফেলে। তখন সাথীকে জিজ্ঞেস করলে সাথী আমাকে জানায়, আমার জামাই নাকি বলেছে, আমি ঢাকায় আরেকটা বিয়ে করবো। এবার বাড়িতে গিয়ে যেন তোমাকে না দেখি। তুমি এখনও ম’রো নাই?

একথা বলার পরপরই তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, রাতে কথা বলার পরই সকালে (বৃহস্পতিবার ৮ নভেম্বর) মনের ক’ষ্ট স’ইতে না পেরে আমার মেয়ে গ্যাস ট্যাবলেট খেল। দুপুর ১২টায় নীলফামারী আধুনিক স’দর হা’সাপাতালে নেয়া হলো। সেখান থেকে পাঠানো হলো রংপুর মেডিক্যালে। কিন্তু! আমার মেয়ে কই? আমার মেয়ে তো সত্যিই সত্যিই স্বা’মীর কথায় ম’রে গেল! বলেই ডুকরে কেঁ’দে ওঠেন তিনি।

এদিকে এ ব্যাপারে কথা বলতে জসিম উদ্দিনের বাড়িতে গেলে সেখানে জসিম উদ্দিনকে পাওয়া যায়নি। তার বাড়িতে কথা হয় তার মামা পরিচয়দানকারী মোহাম্মদ আলীর সাথে।

তিনি বলেন, আমার ভাগ্নের (জসিম) সাথে সাথীর কোন খারাপ সম্পর্ক ছিল না। তারা দা’ম্পত্য জীবনে সুখী ছিল। যখন জসিম ছুটিতে আসতো তখন সাথীও শ্বশুড়বাড়িতে আসতো। তার সাথে আমার ভাগ্নে কোন ধরনের মা’নসিক অ’ত্যাচার করতে পারে না বলে দা’বী করেন তিনি।

যৌ’তুকের প্রশ্নের উত্তরে বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। এবং মেয়ে পক্ষের অ’ভিযোগকে অহেতুক বলে দা’বী করেন তিনি।

বিষয়টি সম্পর্কে জসিম উদ্দিনের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হয়। তার মামা মোহাম্মদ আলী প্রদত্ত জসিমের ০১৭৪৭৫*৩*৪৬ নাম্বারে একাধিকবার চেষ্টা করেও ফোন রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে নীলফামারী সদর থানার ওসি মোমিনুল ইসলাম জানান, থানায় মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি অ’ভিযোগ পেয়েছি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। ত’দন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আ’ইনানুগ ব্’যবস্থা নেয়া হবে।

সাথীর সেই সু’ই’সা’ই’ড নোটের কথাগুলো হুবুহু তুলে দেয়া হলো-

‘আমি কিছুতেই আমার জীবনটা সুখে রাখতে পারবো না যতদিন বেঁ’চে থাকবো না হতে পারব সুখী নিজেকে- অনেক কিছু দিয়ে বুঝাতে চেয়েছি যে আমার ভাগ্য দো’ষের কারণে আজ হয়তো আমার কপালে এমন শাস্তি যা কখনও ভাবিনি তাই আমি তোমাকে কিছুই বোঝাতে পারি নাই। শুধু অ’শান্তি বাড়ছে ক’মছে না। আমি আমার জীবন নিয়ে সুখী নয়।

তাই আমার মুখ তোমাকে বেঁ’চে থেকে দেখানোর কোন ইচ্ছা নাই। আমি ভেবেছিলাম হয়ত তুমি আমাকে আবার নিজের মতো করে সাজিয়ে নিবে হয়ত আবার আমাকে ভালবাসবে। যদি তুমি আমাকে একটু শান্তনা দিতে একটু আশা দিতে তবে আমি এইটা কখন ভাবতাম না কিংবা করতাম না। তুমি চেয়েছিলে আমি ম’রে যাই কিংবা আমার মৃ’ত্যু হয়। আমাকে নিয়ে থাকা তোমার সম্ভব নয় তুমি সবসময় এটাই ভেবেছ এটাই চেয়েছো। তাই হক আমিও চাইনা এত দুঃ’খ ক’ষ্ট নিয়ে বেঁ’চে থাকতে। তুমি চাও আমি মরি। সত্যই যখন একজন মানুষ সব সম্বল হারায় তবু যদি আশা থাকে তাহলে সে বেঁ’চে থাকার আশা করে।

কিন্তু আমাদের মধ্যে তাই নাই। তাহলে কি করে আমি বেঁ’চে থাকবো। তাই ভাবছি। তোমার আশ পূরণ হোক আমার মৃ’ত্যু’তে’ই আমাকে কেউ ক্ষ’মা করবে না আমি জানি মরার পর আল্লাহ না আমি জাহান্নামে যেতে চাইছিলাম না কিন্তু আমার জান্নাতে যাওয়ার উপায় নাই।

তবে একটা কথা না বলে পারছি না তবু তুমি সুখে থাকতে পারবা তবে তাই হোক। আমার মৃ’ত্যুর পর তুমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করে সুখী হও। তবে একটা কথা সত্যি আমি তোমাকে মনে প্রাণে ভালবাসতাম এবং তোমাকে নিয়ে সারাজীবন বেঁ’চে থাকার আশা করেছিলাম। তাই যখন আমাদের দুজনের মধ্যে নাই বেচে থাকার কোন মানে নাই। তুমি সত্যই মুক্ত। আমি আমার বাবা-মাকে কখনও অ’শান্তিতে থাকতে দিতে পারি না তাই সবাইকে শান্তি দিয়ে আমি অ’শান্তি নিয়ে চলে যাচ্ছি।

আমার মা-বা’বারে কখনও ছোট হতে দিতে পারি না। আমাকে তুমি অনেক ক’ষ্ট দিছ আমাকে তুমি আমি ছোট বলে কিছু করতে বা বুঝতে পারি নাই বলে তুমি আমাকে অনেক শা’সিয়েছো তা আর বেশিদিনের জন্য বা বেশিক্ষণের জন্য থাকবে না। আমি নিজে থেকে তোমার জী’বন থেকে চলে যাচ্ছি।

আমার মা-বা’বাকে আমাকে এত ক’ষ্ট দিয়ে তোমার লাভ হল কি একটু বলবা আমি আর বেঁ’চে থাকব না। তোমার রাস্তা সম্পূর্ণ ফাঁকা যা ইচ্ছা তাই করতে পারবা। যান আমার প্রচুর ক’ষ্ট হচ্ছে ম’রণ য’ন্ত্রণা উঠে যাচ্ছে আমার হা’ত পা কাঁ’পছে।

আমার মা-বা’বা আমাকে বৃথা জন্ম দিয়েছিল না পেল আমার কাছে কিছু না পেল শান্তি। আমার সুখের জন্য কত কিছু করেছিল তা করে তাদের কি লাভ হলো আমার কাছে শুধু অ’শান্তি ছাড়া আর কিছু পেল না। তাই আমি মেয়ে হিসেবে তাদের কাছে অ’কর্মার হয়ে পৃথিবী ছাড়..’ (‘ছাড়লাম’ এই শব্দটি আর শেষ করতে পারেনি সাথী, তখনই ঢ’লে পড়ে তার নি’থর দে’হ)।