সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় একই ব্যাচের ৩ বান্ধবীর বাজিমাত

| আপডেট :  ২২ এপ্রিল ২০২২, ০৩:৪৩ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২২ এপ্রিল ২০২২, ০৩:৪৩ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের (বিজেএস) ১৪তম সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় বাজিমাত করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একই বর্ষের তিন ছাত্রী। মাস্টার্স শেষ হওয়ার আগেই জীবনে প্রথমবার নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তারা প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ স্থান দখল করে নিয়েছেন। তাদের এমন সাফল্যে আনন্দিত বিভাগের শিক্ষকরা।

বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন সচিবালয়ের ওয়েবসাইটে এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ১০২ জনের মধ্যে প্রথম হয়েছেন, রাবির আইন বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সুমাইয়া নাসরিন শামা। এ ছাড়া দ্বিতীয় ও চতুর্থ হয়েছে একই ব্যাচের যথাক্রমে জান্নাতুন নাঈম মিতু ও ইশরাত জাহান আশা। তিন জনই বর্তমানে রাবির আইন বিভাগের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।

প্রথম হওয়া সুমাইয়ার গ্রামের বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রামে। তিনি ২০১৩ সালে বড়াইগ্রাম হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং রাজশাহী কলেজ থেকে ২০১৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ২০১৫-১৬ সেশনে রাবির আইন বিভাগে ভর্তি হন। তার একাডেমিক ফলাফলও ভালো। অনার্সের মেধা তালিকায় দ্বিতীয়। বর্তমানে তিনি মাস্টার্সে অধ্যয়নরত আছেন।

মেধায় দ্বিতীয় হওয়া জান্নাতুন নাইম মিতুর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নয়ন-শুকা এলাকায়। তিনি মো. নাইমুল ইসলাম ও নাহিদা খাতুন দম্পতির মেয়ে। নবাবগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে মাধ্যমিক (এসএসসি) ও রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পাস করেন।

সুমাইয়া বলেন, ‘আমার এই ফলাফলের জন্য পরিবার ও বিভাগের শিক্ষকদের অবদান সবচেয়ে বেশি। সত্যি বললে আমি প্রথম হবো এমনটা প্রত্যাশা ছিল না। আমার টার্গেট ছিল মেধাতালিকায় নাম এলেই হবে।’

পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের জুডিশিয়ারি পরীক্ষায় কিন্তু একাডেমিকভাবে যা পড়ানো হয় অধিকাংশই সেখান থেকে আসে। ফলে ডিপার্টমেন্টের পড়াশোনা মনোযোগ দিয়ে করায় প্রস্তুতি অনেকটাই কাভার হয়ে গিয়েছিল। পরে সার্কুলার দেওয়ার পর কোর্সগুলো ফের ভালোভাবে পড়ি। সবমিলিয়ে আল্লাহর অশেষ রহমতে হয়ে গেছে।’

প্রথমবার নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দেশ সেরা হওয়া এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘আমার কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল না। আমি বড় হয়ে এই হবো বা ওই হবো। সময় যখন যা ডিমান্ড করবে, তখন সেটাই করবো।’ জুডিশিয়ারি পরীক্ষা দিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্লাসগুলো মনোযোগ সহকারে করার পরামর্শ তিনি।

জান্নাতুন নাঈম মিতু বলেন, ‘মা-বাবা, বিভাগের শিক্ষকরা আমাকে অনেক বেশি হেল্প করেছে। আমি প্রথম বর্ষ থেকে একাডেমিক পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলাম। ডিপার্টমেন্টে রেজাল্টও ভালো ছিল। আমার বন্ধুরা সবসময় আমাকে উৎসাহ দিতো। তারা বলতো, আমি চেষ্টা করলে ডিপার্টমেন্টের মতো জুডিশিয়ারিতেও প্রথম হতে পারবো। যাই হোক প্রথম হতে না পারলেও দ্বিতীয় হয়েছি। এ ছাড়া প্রথম ও চতুর্থ হওয়া দুই জনই আমার বান্ধবী। বিভাগে মেধাতালিকায় তারা দুই জন যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ছিল। আমি ছিলাম প্রথম। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।’

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আইন বিভাগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, তার ইচ্ছে ছিল বিসিএস ক্যাডার হবেন। কিন্তু একদিন ক্লাসে তার এক শিক্ষক একটি কেস পড়িয়েছিলেন। যার কাহিনীটা বেশ মর্মান্তিক ছিল। জাজমেন্টও ছিল বেশ চমৎকার।মিতু বলেন, ‘রায় শুনে আমার মনে হয়েছিল, আল্লাহর পরে একজন জজ ছাড়া এ ধরনের জাজমেন্ট কেউ দিতে পারে না। সেখান থেকে আমি জজ হওয়ার জন্য উৎসাহ পাই।’

প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথম বর্ষ থেকে স্যাররা যা পড়াতেন সেগুলো ডিপলি পড়ার চেষ্টা করতাম। এ ছাড়া আলাদাভাবে প্রস্তুতি বলতে বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান পড়েছি।’এদিকে, সদ্য প্রকাশিত জুডিশিয়ারিতে রাবির কত জন উত্তীর্ণ হয়েছেন জানা যায়নি। তবে বিভাগের শিক্ষকরা বলছেন, পাসের সংখ্যায় ১০-এর ওপরে হবে। শিক্ষার্থীদের এমন ফলাফলে আনন্দিত বিভাগের শিক্ষকরাও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, ‘আজকের দিনটি আমাদের আইন বিভাগের জন্য আনন্দ ও গর্বের দিন। ১৪তম বিজেএস পরীক্ষায় (সহকারী জজ) আমাদের একই ব্যাচের তিন ছাত্রী প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে। এই ফলাফল প্রমাণ করে রাবির আইন বিভাগই সেরা। আমাদের বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচ থেকে আরও অনেকেই সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে। তাদেরকেও অভিনন্দন, শুভেচ্ছা জানাই।’