প্রথম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম জান্নাতুল

| আপডেট :  ১৩ এপ্রিল ২০২২, ১১:৩২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৩ এপ্রিল ২০২২, ১১:৩২ অপরাহ্ণ

৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস তিলা। পাশাপাশি প্রথম স্থানও অধিকার করেছেন প্রশাসন ক্যাডারে। এটি তার প্রথম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ। সম্প্রতি তার বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও ক্যারিয়ার ভাবনা জানিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খালিদ সাইফুল্লা

প্রথমেই আপনার পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাই—
জান্নাতুল ফেরদৌস তিলা: আমি এ কে হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করি। এরপর উচ্চমাধ্যমিকে হলিক্রস কলেজে ভর্তি হই। সে সময় যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের কাজ চলছিল। তাই বাসা থেকে যাতায়াত কষ্টকর ছিল। ফলে কলেজ পরিবর্তন করে বাসার কাছে দনিয়া কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেই। জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। পরে কুয়েটে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হই। ২০১৭ সালে বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করি। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে এমবিএ তৃতীয় সেমিস্টারে অধ্যয়নরত।

বিসিএস ক্যাডার হবেন, এমন স্বপ্ন বা পরিকল্পনা কি ছিল?
জান্নাতুল ফেরদৌস তিলা: আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেও এমন পরিকল্পনা ছিল না। ইচ্ছা ছিল বড় কর্পোরেট হাউজে কাজ করার। কিন্তু পরবর্তীতে ইচ্ছেটা সরকারি চাকরির দিকে মোড় নেয়।

বিসিএস নিয়ে স্বপ্ন দেখলেন কবে থেকে?
জান্নাতুল ফেরদৌস তিলা: আসলে বিসিএস নিয়ে ভাবনা এলো হুট করেই। গ্রাজুয়েশনের পর আমি বাংলাদেশের বড় দুটি কর্পোরেট হাউজে জব করি প্রায় এক বছর। এরপর যখন আয়নায় নিজেকে দেখলাম, তখন মনে হলো কাজগুলো আমার জন্য নয়। আসলে ছোটবেলা থেকেই মানুষের সাথে কাজ করার, তাদের সম্পর্কে জানার ইচ্ছেটা আমার প্রবল। ভেবে দেখলাম, সরকারি চাকরির মাধ্যমেই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের একদম কাছাকাছি যাওয়া যায়, তাদের জন্য কাজ করা যায়। এ ছাড়া সরকারি চাকরিতে বৈচিত্র্যও অনেক। এ ভাবনা থেকেই মূলত বিসিএস নিয়ে স্বপ্ন শুরু।

বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছিলেন?
জান্নাতুল ফেরদৌস তিলা: সাধারণত মানুষ যেভাবে প্রস্তুতি নেয়, আমার প্রস্তুতি সেরকম ছিল না। বিসিএসের তিনটি অংশ আছে। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা। প্রিলিমিনারির ২০০ নম্বরের পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানে দুই ঘণ্টায় ভাগ্য নির্ধারিত হয়। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সিলেবাস অনেক বড়। আমি আসলে সিলেবাসের অনেকটুকুই শেষ করতে পারিনি। কিন্তু যেটুকু শেষ করেছিলাম, সেগুলো থেকে যেসব প্রশ্ন এসেছিল, সেগুলোর নির্ভুল উত্তর দিয়েছি। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় যেহেতু ভুল উত্তরের জন্য নম্বর কাটা যায়, তাই আমি সতর্ক ছিলাম। যথাসম্ভব উত্তরে ভুল কমানোর ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলাম।

এছাড়া বিসিএসের জন্য একটি কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। কোচিংয়ে মূলত বাছাই করা দু’একটা ক্লাস করতাম। বাজারে প্রচলিত যে গাইড বই আছে, সেগুলোও টুকটাক ফলো করেছি। বিসিএসের পড়াশোনার জন্য রুটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রুটিন মাফিক পড়াশোনা করলে তা গোছানো হয়। প্রিলি ও রিটেনে যেহেতু দশ-পনেরোটি বিষয় থাকে, তাই রুটিন করে সব বিষয় পড়তে হবে। আর সাধারণ জ্ঞান মুখস্থ করার বিষয় নয়। সাধারণ জ্ঞান পড়েছি দৈনিক পত্রিকা, মাসিক পত্রিকা এবং প্রচলিত গাইড বই থেকে। এরসাথে টেলিভিশন আর ফেসবুকের গুরুত্বপূর্ণ খবরসমূহ পড়েছি ও মনে রাখার চেষ্টা করেছি।

প্রথম বিসিএসেই প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন; কীভাবে দেখছেন বা অনুভূতি কেমন?
জান্নাতুল ফেরদৌস তিলা: এ এক অনন্য অনুভূতি। আমি আসলে কল্পনা করিনি যে প্রথম হব। ভেবেছিলাম, আল্লাহ সহায় হলে যে কোনো একটি ক্যাডার পাব। প্রথম পছন্দ প্রশাসনও পেতে পারি। কিন্তু ভাগ্যবিধাতা আমাকে তার দু’হাত ভরে দিয়েছেন।

বিসিএসের প্রস্তুতিতে কোন বিষয়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
জান্নাতুল ফেরদৌস তিলা: বিসিএস বা সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরীক্ষার সিলেবাস ও বিগত বছরের প্রশ্ন পর্যালোচনা। এরসাথে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতির সময় ব্যবস্থাপনা। প্রতিটি বিষয়ের উপর ন্যূনতম প্রস্তুতি থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে বিসিএস পরীক্ষার সবচেয়ে ক্রিটিক্যাল স্টেজ হচ্ছে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। এখানে মাত্র দুই ঘণ্টায় ভাগ্য নির্ধারিত হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে লিখিত পরীক্ষা। কারণ এ অংশে ভালো করলে ক্যাডার প্রাপ্তির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। অন্যদিকে সবচেয়ে কঠিন হচ্ছে মৌখিক পরীক্ষা। কারণ এখানে ১০-১৫ মিনিট আপনার ক্যাডার প্রাপ্তিতে বড় ভূমিকা রাখে।

আপনার ভাইভার অভিজ্ঞতা জানতে চাই—
জান্নাতুল ফেরদৌস তিলা: আমার ভাইভা পরীক্ষা আশাতীত ভালো হয়েছিল। জীবনের প্রথম সরকারি চাকরির ভাইভা, তাই অনেক নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু ভাইভা বোর্ডের আন্তরিক পরিবেশ আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। বোর্ডের চেয়াম্যান স্যারসহ সদস্যগণ খুবই ইতিবাচক ছিলেন। মূলত সমসাময়িক বিষয়াদি থেকে প্রশ্ন বেশি এসেছিল। এ ছাড়া নিজের বিষয় সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ছিল। সাথে ছিল এক-দুইটা মহড়া প্রদর্শন, যেমন আমাকে একটি জেলায় আয়োজিত জাতীয় অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছিল। বিধাতার কৃপায় সব প্রশ্নের জবাব ভালোভাবে দিতে পেরেছিলাম।

প্রশাসন ক্যাডারে কেন এলেন?
জান্নাতুল ফেরদৌস তিলা: মূলত প্রশাসন ক্যাডারের চাকরি অনেক বৈচিত্র্যময়। এ ক্যাডারে এমন কিছু কাজ আছে, যেখানে আমার প্রকৌশলবিদ্যার প্রয়োগ ঘটানো সম্ভব। এ ছাড়াও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সাধারণ মানুষের খুব কাছে থেকে তাদের সেবা দিতে পারেন। সরকারের প্রদেয় বেতন ভাতাদিও আকর্ষণীয়। যার কারণে প্রথম পছন্দ হিসেবে প্রশাসন বেছে নিই। পাস করার পর আমার ইচ্ছা ছিল কর্পোরেট জগতে ক্যারিয়ার গড়ার। কিন্তু পরে সরকারি চাকরির কর্মপরিবেশ অনুধাবন করে লক্ষ্য পরিবর্তন করি।

পরিবারের সাপোর্ট বা অনুপ্রেরণা কেমন পেয়েছেন?
জান্নাতুল ফেরদৌস তিলা: আমার স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যগণ আমাকে পূর্ণ সহায়তা ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
জান্নাতুল ফেরদৌস তিলা: সরকার আমাকে তার একজন কর্মচারী হিসেবে প্রাথমিকভাবে বাছাই করেছে। আমার লক্ষ্য, সরকার যেই উদ্দেশ্যে আমাকে বেছে নিয়েছে, সেই উদ্দেশ্য অর্জনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধভাবে কাজ করা। সরকার মাঠ ও প্রান্তিক পর্যায়ে বহুমাত্রিক উন্নয়ন প্রকল্প ও প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করছে। সরকার ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত বাংলাদেশের কাতারে নেওয়ার লক্ষ্যে এসব প্রকল্প ও প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে চেষ্টা করাই আমার পরিকল্পনা।