লিখে দিতে পারি এফডিসির চলচ্চিত্র আর ঘুরে দাঁড়াবে না: বাপ্পারাজ

| আপডেট :  ২২ মার্চ ২০২২, ১২:০১ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২২ মার্চ ২০২২, ১২:০১ অপরাহ্ণ

দীর্ঘ ২ বছর পর গতকাল রোববার সন্ধ্যায় এফডিসির চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির অফিসে এসেছিলেন বাপ্পারাজ। খ্যাতিমান পরিচালক আজিজুর রহমানের জানাজায় অংশ নিতে এসেছিলেন তিনি।শিল্পী সমিতির কক্ষে বসে কথা বলছিলেন কিংবদন্তি গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার পুত্র উপলের সঙ্গে।

চলচ্চিত্রের বিভিন্ন বিষয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন তারা। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন নায়করাজপুত্র সম্রাট, বাপ্পী, সাইমন। শেষ মুহূর্তে সেখানে যোগ দেন শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন।কথার ফাঁকে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন বাপ্পারাজ।

খ্যাতিমান পরিচালক আজিজুর রহমানের কোনো চলচ্চিত্রে কী অভিনয় করেছেন?
এই গুণী পরিচালকের মোট ৫টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। একেবারে অন্য ধরনের একজন নির্মাতা ছিলেন তিনি। খুব গোছানো কাজ করে গেছেন আজীবন। তার পরিচালিত সিনেমার মধ্যে ‘কথা দাও’ আমার জীবনে অন্যতম একটা সিনেমা হয়ে থাকবে। আজিজ চাচা খুব রেগে গেলে আদর করে বলতেন ‘ইডিয়ট’। খুব মিস করবো তার কথা।

আপনার বাবা নায়করাজ রাজ্জাক এই গুণী পরিচালকের কালজয়ী বেশকিছু সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তারমধ্যে ২টি সিনেমা বেছে নিতে বলা হলে কোন দুটি সিনেমা বেছে নিবেন অভিনয়ের জন্য?
প্রথমেই বলবো ‘অশিক্ষিত’ সিনেমাটির কথা। তারপরে ‘মাটির ঘর’। এই সিনেমা দুটি নিয়ে আজিজ চাচার সঙ্গে আমার কথা হতো। এই দুটি সিনেমা আমার কাছে বিশেষ হয়ে আছে। এই দুটি সিনেমার গল্প, অভিনয় আজও মানুষের মনের মধ্যে গেঁথে আছে।

এখনকার চলচ্চিত্র-এফডিসি নিয়ে আপনার ভাবনার কথা বলেন।
এখনকার চলচ্চিত্র নিয়ে আমার কোনো ভাবনা নেই। আমার মনে হয় এফডিসির চলচ্চিত্র আর কখনো ঘুরে দাঁড়াবে না। যদি বিশ্বাস না হয় এই কথা আমি লিখে দিতে পারি। এফডিসিতে চলচ্চিত্র নির্মাণের মতো কেউ আর নেই। অন্য মিডিয়া থেকে এখন সিনেমা হবে। এফডিসি থেকে দর্শক দেখবে এমন সিনেমা নির্মাণের কোনো সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না। সিনেপ্লেক্সকেন্দ্রিক কিছু সিনেমা হয়তো নির্মিত হবে। সিনেমা নিয়ে যা বিশ্বাস, যা ভাবনা সেটা বললাম।

কতদিন পর এফডিসির শিল্পী সমিতিতে এলেন? এখানে না আসার কারণ কী?
প্রায় ২ বছর পর এফডিসির শিল্পী সমিতিতে এসেছি। কাজ না থাকলে কেন আসবো। এমনিতেই এখানে কাজহীন মানুষের আনাগোনা বেশি হয়ে গেছে। গত ৪-৫ বছরে এটা বেড়েছে। কাজহীন মানুষে ভরে গেছে পুরো এফডিসি। এখানে এসে কী করবো বলেন? কাউকে ফুল দিয়ে বা কারো সঙ্গে দেখা করব, সেই ছবি আবার নিজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপ করব? আমি কেন আপ করবো এইসব ছবি? চলচ্চিত্রের মানুষ কী এতোই অসহায়? নিজেকে আমি অসহায় মনে করি না।

চলচ্চিত্রের কারণেই দেশের মানুষ আপনাকে চেনেন, জানেন। সেই চলচ্চিত্র নিয়ে কী কোনো রাগ, ক্ষোভ, অভিমান আছে আপনার?
আমার রাগ, ক্ষোভ, অভিমান কিছুই নেই। ২০১৭ সালেই আমি সব বলে দিয়েছি। আমাদের চলচ্চিত্রের দিন শেষ হয়ে গেছে। এখানে গুণীদের সম্মান দেওয়া হয় না। এইবার শিল্পী সমিতির নির্বাচনে কী হলো? গুণী পরিচালক, প্রযোজকসহ অনেকেই ঢুকতে পারেনি। সেইদিন কেন তারা বললেন না শিল্পী সমিতির নির্বাচন দরকার নেই। সবাই ফিরে যাও।

সম্মানের চেয়ে কি শিল্পী সমিতির নির্বাচন বড়। সেইদিন আমাকে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। বলেছিলাম, গাড়ি নিয়েই তবে ঢুকবো। আমাকে তারা আটকাতে পারেনি। এটা আমাদের জায়গা। আমাদের কেন অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হবে?

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কোনো ভূমিকা আছে চলচ্চিত্রে?
তার আগে একটা কথা বলি, কারা প্রতিনিধিত্ব করছে এখানে? এখানকার মানুষজন সরকারের কতদূর পর্যন্ত যেতে পারেন? তাদের কী সেইভাবে কোনো পরিচিতি আছে? কাদের সঙ্গে কথা বলবেন তারা? এখানে পরিচালক সমিতিতে আমজাদ হোসেনের মতো পরিচালক পাস করেননি। কাজী হায়াতের মতো মানুষের সম্মান দিতে পারি না।

সেখানে কার কী ভূমিকার কথা বলবেন? শিল্পী সমিতিতে শিল্পীরা এসে বিশ্রাম নেবে, পড়াশোনা করবে, এটা তো রাজনীতির জায়গা না। কে বোঝাবে তাদের? দ্য ডেইলি স্টার