শত বাধা ডিঙিয়ে ব্যবসার হাল ধরা রীনা এখন সফল

| আপডেট :  ৮ মার্চ ২০২২, ০৩:৫৪ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৮ মার্চ ২০২২, ০৩:৫৪ অপরাহ্ণ

আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই ছেলে নিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ি। উপায় না পেয়ে নিজেই স্বামীর চালের ডিলারির ব্যবসায় নেমে যাই। আর তখনই অনেকের চক্ষুশূল হয়ে পড়ি। অনেক অপবাদ নিয়েও আমি ব্যবসায় লেগে থাকি।

নারী হওয়ায় আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে উচ্ছেদ করতেও অনেকেই ষড়যন্ত্র করেছে। সব সামাজিক বাধা অতিক্রম করে এখন আমি এ শহরের একজন সফল ব্যবসায়ী। ’ এভাবেই নিজের সফলতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন বরগুনার বামনা উপজেলা সদরের মেসার্স ইউনিক মেশিনারিজের স্বত্বাধিকারী মাহফুজা আক্তার রীনা (৪৫)।

জানা যায়, উপজেলার বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের আবদুল আজিজ হাওলাদারের বড় মেয়ে তিনি। ১৯৯২ সালে উপজেলার পূর্বসফিপুর গ্রামের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বাদল সিকদারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিবাহিত জীবনে তিনি দুই ছেলের জননী। সুখের সংসারে তাঁর জীবনে বিষাদের ছায়া নেমে আসে। ২০১০ সালে তাঁর স্বামী মারা যান। দুই ছেলে নিয়ে অকুল পাথারে পড়ে যান রীনা। মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ হওয়ায় সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে।

পরিবারের আয়-রোজগার না থাকায় পরিবারের সদস্যদের মুখে আহার জোগাতে কষ্ট হয় তার। ধার-দেনা করে আর চলছিল না সংসার। সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে প্রথমে স্বামীর চালের ডিলারি লাইন্সেন দিয়ে উপজেলার সদর মজজিদের মার্কেটের পুরনো দোকানে আবার ব্যবসাটি চালু করেন। নারী হওয়ায় প্রথমে এলাকার অনেকের তিরস্কার শুনতে হয় তাকে। এমনকি মসজিদ মার্কেটের দোকান থেকে তাকে সরিয়ে দিতে মসজিদ কমিটিকে চাপ প্রয়োগ করেন অনেকেই। অনেক চেষ্টার পর সেখানে ব্যবসার অনুমতি পান তিনি।

এরই মধ্যে স্বামীর মেশিনের এক্সেসরিজ দোকানে তোলেন। ভালোই চলছিল তার ব্যবসা। কিন্তু এখনো শেষ হয়নি রীনার জীবনের বেদনাময় অধ্যায়। তাঁর ২০ বছর বয়সী বড় ছেলে মো. রাব্বি সিকদার মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। একটু ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষণে আবারও তার জীবনে নেমে আসে দুঃখের কালো মেঘ। স্বামী আর বড় ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে যান রীনা। ফের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলেও স্বজনদের উৎসাহে আবার নেমে পড়েন ব্যবসায়। বর্তমানে তিনি বামনা উপজেলা শহরের স্বনামধন্য একজন মেশিনারিজ ব্যবসায়ী। এখন নিজ দোকানে সব ধরনের মেশিনের যন্ত্রাংশ, পেট্রল ও মবিল খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করেন তিনি।

নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতাকে ডিঙিয়ে সফল ব্যবসায়ী নারী মাহফুজা আক্তার রীনা বলেন, স্বামীকে হারিয়ে যখন তাঁর ব্যবসাটি শুরু করি সেই দিনগুলো ছিল আমার সবচেয়ে কষ্টের দিন। অনেক অপবাদ-অপমান সয়ে ব্যবসায় লেগে আছি। বড় ছেলেকেও আল্লায় নিয়ে গেছে। এখন একমাত্র ছোট ছেলেকে আঁকড়ে ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছি। তবে এখন আর কেউ আমাকে তাচ্ছিল্য করে না। আমি পরিবারে কিছুটা হলেও সচ্ছলতা এনে দিয়েছি।

বামনা উপজেলা বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন পিন্টু বলেন, স্বামী-সন্তান হারিয়েও রীনা ভাবি অনেক কষ্ট করে স্বামীর ব্যবসাটি ধরে রেখেছেন। নারী হয়েও তিনি অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। এ শহরের একজন সফল ব্যবসায়ী।বামনা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জাফরিন জাহান বলেন, মাহফুজা আক্তার রীনা একজন সফল নারী ব্যবসায়ী হওয়ায় আমরা তাকে একবার জয়ীতা নির্বাচিত করেছিলাম।

বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু মৃধা বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবসায়ী রীনাকে চিনি। জীবনে তিনি যে পরিমাণ দুঃখ পেয়েছেন তাতে একজন নারীর পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব ছিল। তবুও তিনি অনেক সামাজিক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সফল ব্যবসায়ী। আমি তাকে স্যালুট জানাই।