ভেস্তে গেছে যুদ্ধবিরতি, মারিওপোলে তীব্র গোলাবর্ষণ

| আপডেট :  ৫ মার্চ ২০২২, ১১:১৫ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৫ মার্চ ২০২২, ১১:১৫ অপরাহ্ণ

ইউক্রেনের মারিওপোল শহর থেকে বেসা’মরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার লক্ষ্যে এক যু’দ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাশিয়া রাজী হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তারা আবার শহরটির ও’পর অব্যাহত গোলা হা’মলা চালাচ্ছে। ফলে এই পরিকল্পনা এখন ভেস্তে গেছে।

‘আমি এখন মারিওপোলে, শহরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। আমি তিন হতে পাঁচ মিনিট পরপর গোলার শব্দ শুনতে পাচ্ছি’ বলছিলেন শহরের একজন বাসিন্দা ৪৪-বছর বয়সী আলেক্সান্ডার।তিনি জানান, শহরের লোকজনকে বের করে নেয়ার জন্য যে নিরাপদ করিডোর স্থাপন করা হয়েছে, তা কাজ করছে না। আমি দেখছি যারা পালানোর চেষ্টা করেছিল তারা ফিরে আসছে। একেবারেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি।’

স্থানীয় সময় সকাল নয়টায় যু’দ্ধবিরতি শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু মারিওপোল শহরের ডেপুটি মেয়র এখন অ’ভিযোগ করছেন, রুশরা এই যু’দ্ধবিরতি ল’ঙ্ঘন করেছে, তারা সেখানে ক্রমাগত গো’লাব’র্ষণ করে যাচ্ছে। এর ফলে শহর থেকে হাজার হাজার বেসা’মরিক মানুষকে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা তাদেরকে এখন স্থগিত রাখতে হচ্ছে।

শহরের ডেপুটি মেয়র সের্গেই অরলভ বলেন, রুশ গো’লাব’র্ষণের কারণে এখন সেখানে রাস্তায় বেরুনো মোটেই নিরাপদ নয়। যে পথ ধরে পাঁচ/ছয় হাজার বেসা’মরিক মানুষকে সরিয়ে নেয়ার কথা ছিল, সেই রাস্তার বিভিন্ন জায়গাতেও লড়াই চলছে। তবে এ ব্যাপারে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একেবারেই ভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছে।

তারা বলছে, ইউক্রেনের জাতীয়তাবা’দীরাই শহর থেকে বেসা’মরিক মানুষকে বেরুতে বা’ধা দিচ্ছে।তারা আরো বলছে, রুশ বাহিনী যখন একটি মানবিক ত্রাণ করিডোর তৈরি করে, তখন রুশ বাহিনীর ও’পর গু’লি চা’লানো হয়।

মারিওপোল শহরে গত কদিন ধরেই তীব্র লড়াই চলছে। সেখানে লোকজনের বাসাবাড়িতে পানি এবং বিদ্যুতের সরবরাহ নেই, খাদ্য এবং ও’ষুধের স’ঙ্কট দেখা দিয়েছে। মারিওপোল থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন, এমন একজন জানিয়েছেন, শহরটির অবস্থা এখন নরকের মতো।

আরেকটি শহর, ভলনোভাখা, সেখানকার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে কোনো খবর সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এর আগের খবরে বলা হচ্ছিল, ২৫ হাজার মানুষের এই শহরটিতে এত তীব্র গো’লাব’র্ষণ করা হয়েছে যে, শহরের প্রায় প্রতিটি ভবন ধ্বং’স বা ক্ষ’তিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় একজন এমপি দাবি করেন যে, যেরকম তীব্র লড়াই সেখানে চলছিল, রাস্তায় পড়ে থাকা লা’শ পর্যন্ত সরানো যাচ্ছিল না।

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সূত্রের মতে, রুশ বাহিনী এখন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং দ্বিতীয় বড় শহর খারকিভ-সহ চারটি শহর চারদিক থেকে ঘিরে ফে’লে অ’বরোধ জারি করতে চাইছে।

কিয়েভের মানুষ বলছেন, গতরাতে বিমান হা’মলা তূলনামূলক-ভাবে কিছুটা কম ছিল, হা’মলার সতর্ক সংকেত হিসেবে সাইরেনের আওয়াজও কম শোনা গেছে। তবে কিয়েভের কাছের অন্য কিছু শহরে, যেমন চেরনিহিভ বা ঝিটোমিরে নতুন করে বিমান হা’মলার সতর্ক সংকেত শোনা গেছে।কিয়েভের ৩০০ কিলোমিটার পূর্বের সুমি শহরের লোকজনকে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে বলা হয়েছে, কারণ সেখানে রাস্তায় লড়াই চলছে।

রুশদের সা’মরিক কৌশলের একটা লক্ষ্য হচ্ছে, ক্রা’ইমিয়া থেকে কৃষ্ণসাগর উপকুল বরাবর একটি ল্যান্ড করিডোর তৈরি করা। ওডেসা বন্দরে রুশরা একটি অ্যাম্ফিবিয়ান, অর্থাৎ উভচর হা’মলা চালাতে পারে, এমন কথা বলা হচ্ছিল। এখন ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সূত্রগুলো বলছে, রুশ বাহিনী এখন দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শহর মাইকোলেইভের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাদের মূল লক্ষ্য অবশ্য ওডেসা বন্দর।

এদিকে নেটো জোট যে ইউক্রেনের আকাশসীমায় ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণায় রাজী হচ্ছে না, তার জন্য ইউক্রেনের প্রে’সিডেন্ট ভলোদিমির জে’লেনস্কি বেশ ক’ঠোর ভাষাতেই নেটো জোটের অবস্থানের সমালোচনা করেন।তিনি এমনকি এ রকম কথাও বলেছেন, ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণায় রাজি না হয়ে নেটো যেন রাশিয়াকে বো’মা হা’মলা চা’লানোরই সবুজ সংকেত দিচ্ছে।

তবে নেটোর মহাস’চিব ইয়েন্স স্টোলটেনবার্গ আবারও তাদের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করা সম্ভব নয়। কারণ এটা করতে হলে ইউক্রেনের আকাশসীমায় নেটোর যু’দ্ধবিমান পাঠাতে হবে। আর সেটা করতে গেলেই রাশিয়ার যু’দ্ধ বিমানের সাথে সরাসরি লড়াইয়ে জড়িয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেছেন, তখন ইউক্রেনের এই যু’দ্ধে আরো অনেক দেশকে জড়িয়ে যেতে হবে, সেটা তারা চান না, সেটা তারা প্রতিরোধ করতে চান, সেজন্যেই নো ফ্লাই জোনের বি’ষয়টি তারা নাকচ করে দিচ্ছেন।

এদিকে মা’র্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিনকেন তার ইউরোপ সফরের অংশ হিসেবে পোল্যান্ড থেকে মলডোভায় যাচ্ছেন। এরপর যাবেন রাশিয়ার প্রতিবেশি অন্য তিনটি বল্টিক দেশে।মিস্টার ব্লিনকেন বলেছেন, রাশিয়াকে মোকাবেলার জন্য সব বিকল্পই তারা খোলা রেখেছেন, এরমধ্যে রাশিয়ার জ্বা’লানী রফতানি আ’টকানোর বি’ষয়টিও আছে। সূত্র : বিবিসি