দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ৬০০ স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মী লিলি

| আপডেট :  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৪:৩০ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৪:৩০ অপরাহ্ণ

দেশের প্রত্যন্ত এলাকার স্বাস্থ্যকর্মী মেহেরুন নেহার লিলি দুর্দান্ত এক রেকর্ড গড়েছেন। গত ছয় বছরে একে একে ৬০০ স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করিয়েছেন তিনি। স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে প্রসূতি মায়েদের মধ্যে আস্থা ও ভরসার প্রতীক হয়ে উঠেছেন তিনি। প্রসূতি মায়েদের মুখে মুখে এখন তার নাম, সবাই তার ভূয়সী প্রশংসা করছেন।পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কাজীপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) হিসেবে কর্মরত মেহেরুন নেহার লিলি। তেঁতুলিয়া সীমান্তের এক অজপাড়াগাঁয়ে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিকটি।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। লিলির মাইলফলক স্পর্শ করার মুহূর্তটা এসেছিল সেদিন। আল্পনা বেগম নামে এক প্রসূতি মায়ের স্বাভাবিক ডেলিভারি সম্পন্ন করে ৬০০ ডেলিভারির মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। গতকাল শনিবার পর্যন্ত তা দাঁড়িয়েছে ৬০২-এ।লিলি ২০১১ সালে সিএইচসিপি হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। ২০১৪ সালে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে কমিউনিটি স্কিল বার্থ এটেনেডেন্ট (সিএসবিএ) বিষয়ে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তার পরের বছর থেকেই অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি নরমাল ডেলিভারি কার্যক্রম শুরু করেন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সবার কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন লিলি। সরকার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। এরই ধারাবাহিকতায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে গর্ভবতী মায়েদের স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে উত্সাহিত করা হচ্ছে।লিলি প্রথম ডেলিভারির কাজটি করেছিলেন বুকে দুরু দুরু ভয় নিয়ে। এক ঘণ্টার চেষ্টায় সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সেদিন স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা প্রসব করান। এই ছয় বছরে এভাবে ৬০০ নরমাল ডেলিভারি করে এলাকার হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের কাছে হয়ে ওঠেন আস্থার নতুন ঠিকানা।

মেহেরুন নেহার লিলি বলেন, ‘প্রথম প্রথম আমার প্রচণ্ড ভয় লাগত। ভাবতাম, আমার দ্বারা এই জটিল কাজ কীভাবে সম্ভব হবে ফরিদা আক্তার নামের এক নারীর প্রথম ডেলিভারি সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে আমার সাহস বেড়ে যায়। শীত কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে রাতভর পরিশ্রম করে যখন গর্ভবতী মায়ের গর্ভ হতে ফুটফুটে সুস্থ সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, তখন ভুলে যেতাম সব কষ্ট। ডেলিভারি করতে পারলে আমার খুব আনন্দ হয়। আমার নিকট আত্মীয় অনেকের ডেলিভারি করিয়েছি, যেটা আমার ভালো লাগা ও প্রাপ্তির একটি বিষয়। আমার এই অসাধ্য কাজে সার্বিক পরামর্শসহ সাহস জুগিয়েছেন তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. পীতাম্বর রায়, এইচ আই শরীফ উদ্দিন, এ এইচ আই জমির উদ্দিন, এইচ এ দেলোয়ার হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই।’

লিলি আরও বলেন, ‘এ বছরের জানুয়ারিতে ১১টি এবং চলতি মাসে পাঁচটি নরমাল ডেলিভারি করিয়েছি। বিশেষ করে এখানকার হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষ যারা সিজারিয়ান অপারেশন করাতে পারেন না, তারা খুব সহজে নরমাল ডেলিভারির আস্থা নিয়ে আমার কাছে আসছেন। এখন পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। প্রতিটি শিশু ও মা সুস্থ রয়েছেন। এখন রাত-দিন সমস্যা হলেই ডাক পড়ে। রোগীরা সরাসরি কিংবা মোবাইল ফোনে সমস্যার কথা বলছেন। আল্পনা বেগমসহ কয়েক জন প্রসূতি জানান, ‘লিলি আপা ভালো মানুষ। যখনই তাকে ফোন দেই, তখনই পাওয়া যায়। নরমাল ডেলিভারিতে তাকে ডাকলেই পাওয়া যায়।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুল কাশেম বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে ৬০০ পূর্ণ হওয়াটা অত্যন্ত গৌরবের। উত্তরাঞ্চলে এরকম রেকর্ড খুবই কম। এই উপজেলার অন্যান্য ক্লিনিকে গর্ভবতী নারীর অভিভাবকেরা কমিউনিটি ক্লিনিকে এনে নরমালি ডেলিভারি করাচ্ছেন। সিএইচসিপি মেহেরুন নেহার লিলির এই রেকর্ড প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। তাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ইত্তেফাক