ইরানের মন্ত্রীর জন্য নয়াদিল্লির সময় ছিল কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য নয়, কেন ?

| আপডেট :  ২৮ জুন ২০২২, ১০:৪৫ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৮ জুন ২০২২, ১০:৪৫ অপরাহ্ণ

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে সৌজন্য দেখিয়েছেন তার খানিকটাও যদি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল কালাম আবদুল মোমেনের প্রতি দেখাতেন তাতে কি আকাশ ভেঙে পড়ত? ৮ থেকে ১০ জুন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফরের সময়ে মোদি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বের করেছিলেন।

কিন্তু মোমেনের ১৮-২০ জুন নয়াদিল্লি সফরের সময়ে তাঁর জন্য প্রধানমন্ত্রীর সময় ছিল না। কোন দেশকে ভারত গুরুত্ব দেয় তা বিচার করার মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে মোদির সাথে সেই দেশের প্রতিনিধির সাক্ষাত এবং একটি ফটো সেশন। সেই মাপকাঠিতে, ভারতের পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকারে বাংলাদেশের স্থান কোথায়? মোমেন ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের (জেসিসি) সপ্তম রাউন্ডে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে বৈঠকে বসেছিলেন।

আলোচনার পরে জয়শঙ্কর ঘোষণা করেছিলেন যে দুই দেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার নিরাপত্তার মতো নতুন ডোমেনে তাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী। সেসব ঠিক আছে, কিন্তু মোদি সরকার কেন ভারত ও মোদির জন্য বাংলাদেশ যা করে চলেছে তা স্বীকার করছেন না ? নয়াদিল্লি গোপনে বাংলাদেশকে কি বলে তা যথেষ্ট নয়, তবে তারা প্রকাশ্যে ঢাকাকে মুক্তকণ্ঠে কখনোই ধন্যবাদ জানায় না।

আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের সঙ্গে মোদির সাক্ষাতের সময় ঠিক করার পিছনে তিনজনের মাথা ছিল – মোদি স্বয়ং, জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। মোমেনকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল ভারতের উপরাষ্ট্রপতি এম. ভেঙ্কাইয়া নাইডুর সঙ্গে বৈঠক করে ! সত্যি বলতে, এটা বৈষম্যমূলক এবং ভয়ঙ্কর।

অন্য কিছুর জন্য না হলে, নূপুর শর্মা-নবীন জিন্দালের জঘন্য নবী-বিরোধী মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো থেকে বিরত থাকার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাতে মোদির মোমেনের সাথে দেখা করা উচিত ছিল। ঢাকা সমগ্র বিশ্বের একটি প্রধান ইসলামি দেশের একমাত্র রাজধানী যা রক্ষণশীল দেশটিকে বিদ্রোহের মধ্যেও নীরব থেকে নয়াদিল্লিকে লজ্জা থেকে রক্ষা করেছে। শেখ হাসিনা সরকার সহানুভূতিশীল এবং অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সাথে কাজ করেছিল যখন ভারত কোণঠাসা ছিল। বাংলাদেশ বাদে, অন্যান্য সমস্ত মুসলিম দেশ ভারতের দূতদের ডেকে পাঠাচ্ছিল, প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি করছিল।

একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ঢাকা। এমনকি আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের ইরান সেদেশে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত গদ্দাম ধর্মেন্দ্রকে তলব করেছিল, নবীর অবমাননাকে অগ্রহণযোগ্য বলে গলা চড়িয়েছিল। তারপরও ভারত আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের জন্য লাল গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে কিন্তু মোমেনের জন্য নয়। বাংলাদেশের অপরাধ কি ? ভারত কি তার প্রতিবেশীকে খুব হালকাভাবে নিচ্ছে ? কারণ এটির কোনো তেলক্ষেত্র নেই, পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই, পশ্চিমের মতো বিশ্ব শক্তির সাথে পারমাণবিক আলোচনায় জড়িত নয়, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সাথে সীমান্ত ভাগ করে না তাই কি এতো অবহেলা? সমস্যা হল ভারতের কথা ও কাজের মধ্যে বড় ব্যবধান।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বর্তমান সোনালী অধ্যায় বা সুবর্ণ সময় নিয়ে কথা বলতে আমরা কখনই ক্লান্ত হই না। তবু মোমেনের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদির সময় নেই। সমস্যাটি আসলে আরও গভীর। ভারত এখনও প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে পারেনি, যিনি বছরের পর বছর ধরে ভারতের জন্য অনেক কিছু করেছেন। হাসিনা শীঘ্রই নয়াদিল্লিতে তার পূর্ণ সফর শুরু করবেন, যদিও তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। তিনি হয়তো আগামী মাসের প্রথম দিকে আসবেন। দেখা যাক, নেপালের প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা যেভাবে অসামান্য উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন, শেখ হাসিনা তা পান কিনা।

সূত্র : nationalheraldindia.com
কলমে : এস.এন.এম. আবদি , আউটলুকের প্রাক্তন উপ-সম্পাদক এবং সাংবাদিকদের উপর পেগাসাস স্পাইওয়্যার আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু ছিলেন
অনুবাদে : সেবন্তী ভট্টাচার্য্য
সূত্রঃ মানবজমিন