আত্মহ’ত্যার আগে ছেলে-মেয়ের উদ্দেশ্যে যা বলে গেলেন নায়ক রিয়াজের শ্বশুর

| আপডেট :  ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০২:২০ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০২:০১ পূর্বাহ্ণ

রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজ ব’ন্দুক মাথায় ঠেকিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহ’’ত্যা করেছেন মহসিন (৫৮) নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর।বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে ধানমন্ডির ৭ নম্বর রোডের একটি বাড়ির লেভেল-৫ এর একটি ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে।

মাথায় গু’লি করার আগে ফেসবুক লাইভে তিনি বার্ধক্যের নিঃসঙ্গতা, পরিবার নিয়ে হতাশার কথা বলেন। এক নিকটাত্মীয়ের মৃ’ত্যুর কথা উল্লেখ করে দুঃখও প্রকাশ করেন তিনি।

এসময় নিজের উপার্জন, স’ন্তানদের বড় করার কথা তুলে ধরে মহসিন বলেন, ‘প্রকৃত বাবারা না খেয়েও স’ন্তানদের খাওয়ানোর চেষ্টা করে, ফ্যামিলিকে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ফ্যামিলি অনেক সময় বুঝতে চায় না। তাই নিজেকে আর মানিয়ে নিতে পারলাম না। যারা দেখছেন তাদের সঙ্গে এটাই আমার শেষ দেখা সবাই ভালো থাকবেন।’

এর আগে ছেলে মেয়ের কাছে দুঃখও প্রকাশ করেন মহসিন বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলে। সে অস্ট্রেলিয়া থাকে। আমি আমার বাসায় সম্পূর্ণ একা থাকি। আমার খালা মা’রা যাওয়ার পর থেকে আমার ভেতরে খুব ভ’য় করছে। আমি যদি আমার বাসায় ম’রে পড়ে থাকি আমার মনে হয় না যে এক সপ্তাহেও কেউ জানতে পারবে যে আমি মা’রা গেছি।

আমরা সবকিছুই করি ছেলে-মেয়ে স্ত্রী-পরিবারের জন্য। গত ক’রোনা শুরুর আগ থেকে আমি বাংলাদেশে আছি। একা থাকা যে কি ক’ষ্ট, যারা একা থাকে তারাই এই ক’ষ্ট বুঝে।

ফেসবুক লাইভে তিনি আরও বলেন ‘পৃথিবীতে আপনি আপনার। ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী কেউ আপনার না। আজ আপনি আপনার ফ্যামিলিকে যেভাবে মেনটেইন করেন কাল সেভাবে না করলে পরিবারের সঙ্গে দ্ব’ন্দ্ব সৃষ্টি হবে। তারা কেন বুঝে না যে একজন যুবককালে যে আয় করে বয়স হলে তেমন পরিশ্রম করতে পারে না। আয়ও কমে যায়।

এসব বি’ষয় নিয়ে আমি অনেকদিন ধরে মা’নসিকভাবে বি’পর্যস্ত। জীবনে প্র’তারিত হতে হতে আমি শেষ। আমার বাবা পর্যন্ত আমাকে সম্পদ বুঝিয়ে দেয়নি। যতটুকু করেছি নিজের বলে করেছি। তবে কিছুদিন ধরে জীবনের প্রতি এতোটাই বিতৃষ্ণা এসে গেছে এখন আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে না।’

‘আমি জানি আমি যদি আত্মহ’’ত্যা না করি, এই ঘরে আত্মহ’’ত্যা করি, ম’রে পরেও থাকি তাহলে কেউ জানবেও না। হয়তো অনেকদিন পর জানবে। আমার আত্মীয় যারা দেখছেন তাদের বলতে চাই, আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি যেটা দিয়ে আত্মহ’’ত্যা করছি, সেটির লাইসেন্স আছে এবং এটি নবায়নও করা হয়েছে।’ এরপর কালেমা পড়তে পড়তে মাথায় পি’স্তল ঠেকিয়ে গু’লি করেন মহসিন।

আরও পড়ুনঃ ফেসবুক লাইভে আত্মহ’ত্যার আগে যা বলে গেলেন নায়ক রিয়াজের শ্বশুর

রাজধানীর ধানমন্ডিতে আবু মহসিন খান (৫৮) নামে এক ব্যবসায়ী ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহ’’ত্যা করেছেন। এ সময় তিনি নিজে ব’ন্দুক মাথায় ঠেকিয়ে গু’লি চালান। পরে পুলিশ গিয়ে ওই ব্যক্তির ম’রদেহ উ’দ্ধার করে। ফেসবুক লাইভ দেখা পরিচিতজনরা জানান, ওই ব্যবসায়ী চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর।

ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, আমি মহসিন, ঢাকায় থাকি। বয়স ৫৮ বছর। কোনো এক সময় আমার ভালো ব্যবসা ছিল। আমি ক্যানসার রো’গে আ’ক্রান্ত। তাই আমার এখন ব্যবসা বা কোনো কিছু নেই। আমার ভিডিও লাইভে আসার উদ্দেশ্য হলো আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা অনেকের মাঝে শেয়ার করা, যা সবাই জানতে পারবে ও সবাই সাবধান হতে পারবে।

গত ৩০ তারিখ আমার খালা মা’রা যান। ওনার সবই আছে, একটি ছেলে আমেরিকায় থাকে। অথচ মা মা’রা গেল কিন্তু ছেলে দেশে আসল না। এটা আমাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে, ক’ষ্ট দিয়েছে। আজ আমার আরেকজন খালা মা’রা গেছেন। তারও একটা ছেলে আমেরিকায় ছিল। তার তিনটা ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। তারা বাংলাদেশে আছেন। তার দাফন কাফনের কাজ সম্পন্ন করছেন তারা।

সেদিক দিয়ে বলব এই খালা অনেক লাকি। আমার একটা মাত্র ছেলে। সে অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। আমি আমার বাসায় সম্পূর্ণ একা থাকি। খালা মা’রা যাওয়ার পর থেকে আমার ভেতরে ভ’য় ঢুকে গেছে। আমি যদি আমার বাসায় ম’রে পড়ে থাকি, আমার মনে হয় না এক সপ্তাহেও কেউ জানতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা যা কিছু করি সবই পরিবার ও স’ন্তানের জন্য। একবার চিন্তা করে দেখেন, নিজের আয় করা অর্থের ২০ শতাংশও নিজের জন্য ব্যয় করেন না। ক’রোনা শুরুর আগ থেকে আমি বাংলাদেশে আছি। একা থাকা যে কী ক’ষ্ট, তা যারা একা থাকেন তারাই জানেন। আমার আর পৃথিবীর প্রতি, পৃথিবীর মানুষের জন্য কোনো ভালোবাসা নেই।

কারণ যাদের জন্য আমি বেশি করেছি, তাদের কাছ থেকেই আমি প্র’তারিত হয়েছি। আমার এক বন্ধু ছিল বাবুল, যাকে আমি নিজে না খেয়ে তাকে খাইয়েছি। সে আমার প্রায় ২৩ থেকে ২৫ লাখ টাকা মে’রে দিয়েছে। এভাবে আমি বিভিন্ন মানুষের কাছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকার মতো পাই।

সবশেষ আমি নোবেল নামে একজনকে বিশ্বাস করি। যাকে আমি মিনারেল ওয়াটার প্ল্যান্টের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। কিন্তু দুই বছরেও সেই প্ল্যান্টের যন্ত্র সে কেনেনি। পরে তার কাছে টাকা ফেরত চাইলে, ঝ’গড়া হয়। এরপর সে দুই দফায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেয়। বাকি টাকা সে আমাকে দিচ্ছে না। মানুষ কেন এতো লোভী হয়?