প্রদীপের ক্র’সফায়ার বাণিজ্যের তথ্য সিনহার হাতে পৌঁছানোয় হ’ত্যা

| আপডেট :  ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:২৬ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:২৬ অপরাহ্ণ

টেকনাফ সী’মান্তে ইয়াবা নির্মূলের আড়ালে ওসি প্রদীপের কথিত ক্র’সফা’য়ারে নিরীহ মানুষ হ’’ত্যা, ইয়াবা ও চোরাকারবার বাণিজ্য, সুন্দরী নারীদের ধ”ণ এবং ক্র’সফা’য়ারের ভ’য় দেখিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করার ডকুমেন্টারি তথ্য মেজর সিনহার হাতে পৌঁছে যাওয়ায় মেজর সিনহাকে হ’’ত্যার পরিকল্পনা নেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। সে কারণে প্রথমে মেজর সিনহাকে ডাকাত সাজিয়ে গণপি’টুনি দিয়ে হ’’ত্যা করতে চেয়েছিল প্রদীপ-লিয়াকতরা। তাতে সফল না হয়ে সরাসরি গু’লি করে হ’’ত্যার পরিকল্পনা করেন। তাদের ভাবনায় ছিল অন্য দশটি ক্র’সফা’য়ারের মতো এই হ’’ত্যাকাণ্ডটিও মি’থ্যা গল্প সাজিয়ে সামাল দিতে পারবেন কিন্তু হয়নি।

সিনহা হ’’ত্যা মা’মলায় মেজর সিনহার সহকর্মী প্রত্যক্ষদর্শী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের আ’দালতে দেয়া বক্তব্যে এই তথ্য উঠে এসেছে। এ ছাড়া সোমবার ঘোষিত রায়েও হ’’ত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিচারক কক্সবাজার জে’লা ও দায়রা জজ মোহাম্ম’দ ইসমাইল রায় পড়ার সময় উল্লেখ করেন, ‘ঘটনাস্থলে দায়িত্বপ্রাপ্ত যারা ছিলেন তারা সিনহাকে পরিচয় জেনে স্যালু’ট জানিয়ে চলে যেতে বললেন কিন্তু তাদের আবার আ’টক করার প্রয়োজন হলো কেন বা গু’লি করার প্রয়োজন হলো কেন? এটা কি কোনো পূর্বপরিকল্পিত হ’’ত্যাকাণ্ড ছিল? এই হ’’ত্যাকাণ্ডের পিছনে র’হস্যটা কী আমি চেষ্টা করেছি সেটা বের করতে।

আপনারা লক্ষ করেছেন দুই পক্ষকে মাঝে মাঝে প্রশ্ন করেছি কেন এই রকম ঘটনা ঘটল? বিশেষ করে ৩৪২ ধারায় এসআই শাহজাহানকে জিজ্ঞেস করেছি এবং প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরাও বলছেন। দায়িত্বরতদের উদ্দেশে বলেছি, ‘এই হ’’ত্যাকাণ্ডটা প্রতিরোধ করতে পারলেন না কেন? দায়িত্ব ছিল চেকপোস্টে আ’টকে রাখা। যদি তাই হতো এই দুঃ’খজনক ঘটনাও ঘটত না এবং এই বিচারেরও প্রয়োজন হতো না। চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা এসআই শাহজাহান খুব চমৎকারভাবে উত্তর দিয়ে বলেছেন, লিয়াকত আলী পাশে একটা বটগাছের নিচে দাঁড়ানো ছিল এবং ওনি হঠাৎ ১০ থেকে ২০ সেকেন্ডের মধ্যে গু’লিটা করে ফে’লেছেন। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই এত দ্রুত ঘটনাটা ঘটছে। এতে পরিষ্কার এই হ’’ত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত।’

ঘোষিত রায়ে আরো উল্লেখ করা হয় যে, সে’নাবা’হিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্ম’দ রাশেদ খান ২০১৮ সালে ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছাবসরে গিয়ে দেশের সামাজিক সাংস্কৃতিক, ভ্রমণ ও পর্যটন বি’ষয় নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ডকুমেন্টারি ভিডিওচিত্র তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য তিনি ‘জাস্ট গো’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল প্রতিষ্ঠার কাজ করছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও আরো দুইজন সহকর্মী নিয়ে ২০২০ সালের ৩ জুলাই কক্সবাজার আসেন। কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে সাগর ও পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্যে তিনি বিমোহিত হয়ে পড়েন।

ধারণ করতে থাকেন নানা চিত্র। বেশ কিছু দিন তিনি কখনো পাহাড়ের চূড়ায় অথবা সমুদ্রসৈকতের দৃশ্য ধারণ করতে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সাথেও তার সখ্য গড়ে ওঠে। কাজের ফাঁকে তিনি স্থানীয়দের দুঃখ-সুখের গল্প শোনেন। এসময় উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় ইয়াবা দ’মনের নামে ওসি প্রদীপের হ’’ত্যাযজ্ঞ চলছিল। স্থানীয় জনগণের অ’ভিযোগের প্রেক্ষিতে মেজর সিনহা এ বি’ষয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়ে ওসি প্রদীপের ইয়াবা দ’মনের আড়ালে ইয়াবা বাণিজ্য, চোরাচালান ও ক্র’সফা’য়ারের ভ’য় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদা’য়ের তথ্যপ্রমাণ পেয়ে যান। এতেই সংক্ষু’ব্ধ হয়ে র’ক্তনে’শায় উন্মত্ত প্রদীপ মেজর সিনহাকে ক্র’সফা’য়ারে শেষ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

কা’রাগারে কয়েদির পোশাকে নির্বাক প্রদীপ-লিয়াকত : কক্সবাজার জে’লা কা’রাগারের ধারণক্ষমতা ৫৬০ জনের। এখানে হাজতি-কয়েদি মিলিয়ে আছেন সাড়ে চার হাজারের মতো ব’ন্দী। এ কা’রাগারেই দু’টি কক্ষকে কনডেমড সেল ঘোষণা করে রাখা হয়েছে আলোচিত সিনহা হ’’ত্যা মা’মলায় মৃ’ত্যুদ’ণ্ডপ্রাপ্ত প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীকে। এ ছাড়া যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের বিশেষ পৃথক কক্ষে রাখা হয়েছে। তাদের গায়ে পরিয়ে দেয়া হয়েছে কয়েদির পোশাক। রায় ঘোষণার সময় প্রদীপ ও লিয়াকত যেমন ছিলেন নির্বিকার ঠিক তেমনি আ’দালত থেকে কা’রাগারে ফেরার পথেও তারা কোনো কথা বা প্রতিক্রিয়া জানাননি। কা’রাগারেও তারা একেবারে চুপচা’প রয়েছেন। কারো সাথে কথা বলছেন না। তবে খাবার দাবার অনেকটাই স্বাভাবিক আছে বলে কারা সূত্র জানিয়েছে। কা’রাগারের অন্য ব’ন্দীদের মতো তাদের খেতে দেয়া হয় সাদা ভাত, মাছ ও সবজি।

সোমবার বিকেল ৫টার দিকে আ’দালত থেকে জে’লা কা’রাগারে নেয়ার জন্য আ’সামিদের যখন প্রিজনভ্যানে ওঠানো হচ্ছিল, তখন কয়েকজন আ’সামি চি’ৎকার করলেও প্রদীপ ও লিয়াকত ছিলেন নির্বিকার। কক্সবাজার জে’লা কা’রাগারের তত্ত্বাবধায়ক (জে’ল সুপার) মো: নেসার আলম জানান, প্রদীপ লিয়াকতের জন্য দুইটি কক্ষকে কনডেমড সেল করে সেখানে তাদের রাখা হয়েছে। তাদের শা’রীরিক অবস্থা স্বাভাবিক আছে। রাতের খাবার ও সকালের নাশতাও খেয়েছেন দু’জন। বাইরের কারো সাথে তাদের দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। হাইকোর্টের রেফারেন্স পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তাদের কক্সবাজার কা’রাগারেই রাখা হবে। তবে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের অন্য কা’রাগারেও পাঠানো হতে পারে বলে জানান তিনি।

কক্সবাজার জে’লা ও দায়রা আ’দালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশে এবং লিয়াকত আলীর গু’লিতে সিনহার হ’’ত্যাকাণ্ডটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। আ’দালতের রায়ে পরিকল্পিত হ’’ত্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

তিনি বিভিন্ন তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে আরো জানান, প্রদীপ কুমার দাশ টেকনাফ মডেল থানায় ২২ মাস ছিলেন। ওই সময়ে টেকনাফে ১৪৪টির বেশি কথিত মা’দকবি’রোধী অ’ভিযান ও ব’ন্দুকযু’দ্ধের ঘটনায় অন্তত ২০৪ জন নি’হত হয়েছেন। এর মধ্যে বেশ কিছু নিরীহ লোককে ক্র’সফা’য়ারে হ’’ত্যা করা হয়েছে। মা’দক মা’মলার আ’সামি করে শত শত নারী-পুরুষকে কা’রাগারে পাঠিয়েছেন তিনি। কা’রাগারের সাড়ে চার হাজার ব’ন্দীর মধ্যে ৮০ শতাংশ মা’দক মা’মলার আ’সামি।