লেগুনার হেলপার সেজে হ’ত্যার আ’সামি ধরলেন এসআই বিল্লাল

| আপডেট :  ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:৪১ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:৪১ পূর্বাহ্ণ

লেগুনাচালকের সহকারী সেজে ক্লু-লেস হ’’ত্যাকাণ্ডের র’হস্য উন্মোচন ও আ’সামি ধরেছেন যাত্রাবাড়ী থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। তার নাম বিল্লাল আল আজাদ। টানা চারদিন ধরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সাইনবোর্ড, কোনাবাড়ী, ডেমরা, চিটাগাং রোড আর নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি লেগুনাস্ট্যান্ডে হেলপারি করে তিনি উদঘাটন করেন ক্লু-লেস হ’’ত্যাকাণ্ডের র’হস্য। শনাক্ত করেন সেই লেগুনা এবং গ্রে’ফতারও করা হয় চারজনকে।

লেগুনার হেলপারি করে আয় করেন প্রায় ৭০০ টাকা। তবে, একদিন যাত্রাবাড়ী থেকে সাইনবোর্ড হয়ে চিটাগাং রোড পর্যন্ত ১২ জন যাত্রী উঠলে চিটাগাং রোডে নামার সময় ভিড়ের মধ্যে চারজন ভাড়া না দিয়ে চলে যায়। চারজনের ভাড়া চালক এসআই বিলালের কাছ থেকে নিয়ে নেন বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

জানা যায়, চলন্ত লেগুনা থেকে এক মাছ ব্যবসায়ীকে মা’রধর করে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে ফে’লে যায় ছি’নতাইকারীরা। পরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃ’ত ঘোষণা করেন। দু’র্ঘটনায় অপমৃ’ত্যু বলে ম’রদেহের ম’য়নাত’দন্তও সম্পন্ন হয়। ঘটনার এক সপ্তাহ পর পুলিশ উদ্ঘাটন করেছে সেটি অপমৃ’ত্যু নয়, হ’’ত্যা।এ ঘটনায় গত ২৩ জানুয়ারি অ’জ্ঞাত আ’সামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় মা’মলা করেন তার ছেলে

পুলিশ জানায়, গত ২২ জানুয়ারি ভোর পৌনে ৬টার দিকে গু’লিস্তান ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা বরাবর অংশ থেকে অ’চেতন অবস্থায় এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে থানায় খবর দেন পথচারীরা। পরে তাকে উ’দ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃ’ত ঘোষণা করেন। ওই দিন বিকেলেই খাইরুল ইসলাম নামে এক যুবক যাত্রাবাড়ী থানায় গিয়ে অ’ভিযোগ করেন।

মা’মলার ত’দন্ত কর্মকর্তা এসআই বিল্লাল আল আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, ত’দন্তভার পেয়েই গু’লিস্তান ফ্লাইওভার সংলগ্ন বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করি। সিসিটিভি ফুটেজে একটি লেগুনা শনাক্ত করা গেলেও নম্বর প্লেট দেখা যায়নি। কিন্তু লেগুনায় যাত্রী ওঠার সিঁড়িতে লাল রং ছিল। এটাকেই ক্লু হিসেবে ধরে খু’নিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করি।

টানা চারদিন বেশ কয়েকটি রুটের লেগুনার হেলপারি করি। যাত্রাবাড়ী থানার সামনে থেকে চিটাগাং রোড, নূর কমিউনিটি সেন্টার থেকে কোনাপাড়া হয়ে স্টাফ কোয়ার্টার, যাত্রাবাড়ী ইলিশ কাউন্টার থেকে পোস্তগোলা, শনির-আখড়া থেকে নিউমার্কেট সবশেষে সাইনবোর্ড থেকে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া জালকড়ি রুটে হেলপারি করি। প্রায় ৭০০ টাকা পারিশ্র’মিক পাই।

বিল্লাল আল আজাদ বলেন, কখনো কখনো স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ডে চাকরি খোঁজার নামে খুঁজতে থাকি সেই লাল রঙের লেগুনাটি। হেলপার সেজে ঘুমিয়ে ছিলাম গাড়ির ভেতরেই। এভাবে অন্তত ৩০০ লেগুনা যাচাই করেছি। লাল পা-দানির লেগুনা না পেয়ে যাত্রাবাড়ী স্ট্যান্ডে গিয়ে নিজেই লেগুনা চা’লানোর আগ্রহের কথা জানাই অন্য চালক সহকর্মীদের কাছে। লাইনে কোনো লেগুনা বসে আছে কি না, তা খুঁজতে থাকি। শেষপর্যন্ত একজন জানান, একটি লেগুনা ন’ষ্ট হয়ে কদমতলীর একটি গ্যারেজে পড়ে আছে। সেটি মেরামত করে চা’লানো যাবে। কারণ এর চালক অ’সুস্থ হয়ে গ্রামে চলে গেছেন। শেষ পর্যন্ত কদমতলীর ভু’লুর গ্যারেজে গিয়ে পাই সেই লাল পা-দানির লেগুনা।

আমি বুঝতে পারছিলাম র’হস্য উদঘাটনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। এরপর সেই লেগুনার মালিককে খুঁজে বের করি। তার কাছে জানতে চাই, এর আগে কে চা’লিয়েছিল এ লেগুনা। ঠিকানা নিয়ে জানতে পারি, ফরহাদ নামে সেই চালক মাদারীপুর শ্বশুড়বাড়িতে রয়েছেন। এরপর ২৪ জানুয়ারি রাতে টিম নিয়ে চলে যাই মাদারীপুর। পেয়েও যাই চালককে। কিন্তু চালক তথ্যপ্রমাণ দিয়ে বলতে থাকেন, ২১ জানুয়ারি তিনি লেগুনা জমা দিয়ে চলে এসেছিলেন। প্রযুক্তিগত ত’দন্তেও তার কথার প্রমাণ মেলে। এতে র’হস্য উদঘাটনে হতাশ হয়ে যাই।

পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, তার ডিসি স্যার, এসি স্যার আর ওসি স্যার তাকে নানাভাবে দিকনির্দেশনা আর সাহস দিয়ে চলছিলেন। ফের লেগুনার হেলপার সেজে যান কদমতলীর ভু’লুর গ্যারেজে। জানতে পারেন ২২ জানুয়ারি রাতে লেগুনাটি নিয়েছিলেন মঞ্জুর নামে এক চালক। তার হেলপার ছিলেন আবদুর রহমান।

র’হস্য উদঘাটন হলো যেভাবে:
এসআই বিল্লাল বলেন, দুইজনের নাম জানলেও তাদের কোনো মোবাইল নম্বর বা বাসার ঠিকানা পাচ্ছিলাম না। গ্যারেজ থেকে বলা হয়, ওই দুইজন বিভিন্ন স্ট্যান্ডে আর বিভিন্ন গ্যারেজে থাকেন। কিন্তু দুই-তিনদিন ধরে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর ফের আমি হেলপার সেজে অন্য সহকর্মীদের মাধ্যমে মঞ্জুর নামের ওই চালককে খুঁজতে থাকি। একপর্যায়ে জানতে পারি, মঞ্জুরের হেলপার রহমান এখন বাসে হেলপারি করেন। শেষপর্যন্ত তাকে আ’টক করা গেলেও মঞ্জুরকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না।

তবে, আ’টকের বি’ষয়টি গো’পন রেখে রহমানকে মূলত চোখে চোখে রাখা হচ্ছিল এবং তার মাধ্যমে মঞ্জুরকে খোঁজা হচ্ছিল। এরপর সাইনবোর্ড স্ট্যান্ডে কাকতালীয়ভাবেই পাওয়া যায় মঞ্জুরকে। তাদের দুইজনের তথ্যের ভিত্তিতে গ্রে’ফতার করা হয় রিপন আর রুবেল নামে আরও দুইজনকে। ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে পরিচয় লুকিয়ে করি হেলপারি।

আ’টকদের তথ্যমতে, ফ্লাইওভারের ও’পরের ম’রদেহটি ছিল মাছ বিক্রেতা মহির উদ্দিনের। তাকে সাদ্দাম মার্কেট এলাকা থেকে লেগুনায় তুলে ফ্লাইওভারের ও’পরে নিয়ে এসে তার কাছ থেকে পাঁচ হাজার ৯০০ টাকা ছি’নিয়ে নেন আ’টকরা। এরপর তাকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলা দেন। যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, খুব অল্পসময়ের মধ্যে ক্লু-লেস এ হ’’ত্যাকাণ্ডের আ’সামিদের গ্রে’ফতার করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। শিগগিরই এ মা’মলার অ’ভিযোগপত্র আ’দালতে উপস্থাপন করা হবে।