আওয়ামী লীগ সরকার কি জামাতি কাউকে নিয়োগ দেবে: ঢাবি উপাচার্য

| আপডেট :  ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ

সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে দলীয় বিবেচনায় উপা’চার্য নিয়োগ দেওয়ার বি’ষয়টি৷ উপা’চার্য দলীয় না হলে ক্ষ’তি কী? দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া উপা’চার্যদের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কি ভালো চলছে? এসব নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপা’চার্য অধ্যাপক মোহাম্ম’দ আখতারুজ্জামান৷

ডয়চে ভেলে : ১৯৭৩ সালের এ্যাক্ট অনুযায়ি ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়৷ এখানে উপা’চার্য নিয়োগের জন্য সিনেট তিনজনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করে৷ সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি একজনকে নিয়োগ দেন৷ এটাই নিয়ম৷ কিন্তু অনেক সময় এটা মানা হয় না৷ সবসময় এটা মানতে স’মস্যা কোথায়?

অধ্যাপক মোহাম্ম’দ আখতারুজ্জামান: যেটি ঘটে, যখন অন্তবর্তীকালীন অবস্থা তৈরি হয় তখন স’রকারকে তথা চ্যান্সেলর হিসেবে রাষ্ট্রপতিকে পদক্ষেপ নিতে হয়৷ তখন তিনি কাউকে নিয়োগ দেন৷ পরে বিশ্ববিদ্যালয়কে যেটা করতে হয়, সেটা সিনেটের মাধ্যমে একটা প্যানেল তৈরি করতে হয়৷ সুতরাং যেটা হয়, সেটা অন্তবর্তীকালীন একটা ব্যবস্থা৷ এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া৷ বিশেষ পরিস্থিতিতে তো উপা’চার্য নিয়োগ দিতে হবে৷

এই চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বাকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপা’চার্য নিয়োগের কোন সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধিবিধান নেই৷ ফলে স’রকার ইচ্ছে মতো দলীয় শিক্ষককে উপা’চার্য নিয়োগ দেয়৷ এতে নানা ধরনের সং’কটের সৃষ্টি হয়৷ এই পরিস্থিতির উত্তরণে স্থায়ী কোন সমাধান আছে কি-না?

একেবারে কোন আইন নেই সেটা না, সেখানেও আইন আছে৷ বিশ্ববিদ্যালয় যে আইন দ্বারা পরিচালিত হয়, সেই আইনের মধ্যেই উপা’চার্য কীভাবে নিয়োগ হবে সেটার কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে৷ সে মোতাবেকই স’রকার ব্যবস্থা নেয় এবং রাষ্ট্রপতি উপা’চার্য নিয়োগ দেন৷ সবচেয়ে বড় কথা হল, উপা’চার্যও তো একজন শিক্ষক৷ প্রথমত তিনি একজন অধ্যাপক৷অনেকেই মনে করেন উপা’চার্যকে যেহেতু প্রশাসনিক কাজ করতে হয় তাই শুধু ভালো শিক্ষাবিদ দিয়ে কাজ নাও হতে পারে৷ সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রীও এমনটি বলেছেন৷ এটা কী আসলে ঠিক?

উপা’চার্যকে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কাজের একটা সমন্বয় করতে হয়৷ কাজের ধরনের মধ্যে উপা’চার্যদের কাজ অন্য প্রশাসকদের চেয়ে ভিন্ন৷ এখানে যে প্রশাসন, সেই প্রশাসনে থাকবে একাডেমিক ছোঁয়া৷ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ধরনের পদক্ষেপ আছে, অনেক ধরনের পদ আছে যেগুলো আবার অন্যত্র নেই৷ সে কারণেই শিক্ষা ব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসন এই দু’টো সমন্বয় হলো বিশ্ববিদ্যালয়৷

বুয়েটে তো দীর্ঘ সময় ধরে জ্যেষ্ঠতা মেনে উপা’চার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু সেখানে তো তখন কোন সং’কট হয়নি? অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এভাবে উপা’চার্য নিয়োগ দিলে স’মস্যা কী?

এটি একটি ভিন্ন দিক, ভিন্ন কথা৷ উপা’চার্য নিয়োগ দেওয়া হবে একজন শিক্ষাবিদকে, অধ্যাপককে সেটিই তো প্রত্যাশিত৷ উপা’চার্য তো বড় কথা নয়, বড় কথা হল তিনি একজন অধ্যাপক৷ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান যারা হন, তারা তো সিনিয়রিটির ভিত্তিতে নিয়োগ লাভ করে থাকেন৷ সেটা তো অন্য একটা রুটিন কাজ৷ কিন্তু এটা তো উপা’চার্য৷ এখানে নিয়োগে ভিন্নতা থাকাই বাঞ্ছনীয়৷

গত তিন দশক ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয় শিক্ষকেরাই উপা’চার্য হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন৷ ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ভালো ফলের চেয়ে রাজনৈতিক আদর্শকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ বর্তমানে শিক্ষকতার চেয়ে শিক্ষকদের কাছে রাজনীতি মূখ্য হয়ে উঠেছে৷ এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য কী বিঘ্নিত হচ্ছে না?

দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পেলে তো স’মস্যা হবেই৷ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই চরিত্র নেই৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ লাভ করেন মেধায়৷ ঢালাও ভাবে দায়িত্বহীন কথা বলা যাবে না৷ একজন ভালো ছাত্র, যিনি ভালো ফল করেন তিনিই নিয়োগ লাভ করেন৷ কী বিবেচনায়, সেটির সঙ্গে আমরা পরিচিতও নই৷ এই ধরনের ধারণার সঙ্গে আমার পরিচিতি ঘটার দুর্ভাগ্য হয়নি৷ মেধাবীরাই এখানে নিয়োগ লাভ করেন৷ কখনও কখনও ব্যতিক্রম ঘটেনি সেটা বলাও কঠিন৷

দলীয় শিক্ষক উপা’চার্য হওয়ার ফলে স’রকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের নেতারা বে’পরোয়া হয়ে উঠেন৷ হলগুলোতে তাদের একছত্র আধিপত্য থাকে৷ সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক ক্ষেত্রেই নি’র্যাতিত হন৷ মুক্ত জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে এই ধরনের পরিবেশ বা’ধার সৃষ্টি করে কি-না?

যখন তিনি নিয়োগ লাভ করবেন তখন তিনি উপা’চার্য হয়ে যাবেন৷ তিনি তো একজন অধ্যাপক, তিনি তো একজন শিক্ষক৷ নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি তো কোন দলের না৷ এই ধারণাটাই পোষণ করতে হবে আমাদের৷ এমন ভাবার কোন কারণ আছে কি যে, আওয়ামী লীগ স’রকার জামাতি একজন নিয়োগ দেবেন? পৃথিবীর কোথাও কী এটা আছে? ফলে কথাগুলো দায়িত্বশীভাবেই বলতে হবে৷ তিনি যখন নিয়োগ লাভ করবেন তখন তার কাছে সকলেই সমান৷

বর্তমানে শিক্ষক রাজনীতি না করা কোন শিক্ষাবিদকে উপা’চার্য করা হয় না৷ রাজনীতি করা শিক্ষককে উপা’চার্য করলে লাভ কী?

এটি ভিন্ন৷ প্রত্যেক মানুষই রাজনীতিমনস্ক থাকবেন৷ আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এটিকে আরো বেশি উৎসাহিত করে থাকি৷ আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলেই রাজনীতিমনস্ক থাকবেন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এটি শিক্ষা দেয়৷ আমাদের শিক্ষকেরা মুক্তমনে ভিন্ন ভিন্ন দর্শন-মতামত পোষণ করেন৷ তারা ব্যাখা দেন, বিবৃতি দেন৷ ফলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ৷ যখন তিনি একাডেমিক দায়িত্ব পালন করবেন তখন তিনি নিরপেক্ষ থাকবেন৷ প্রশাসন যখন চালাবেন তখন সেটিও নিরপেক্ষ৷ তবে মূল্যবোধ, ধর্ম দর্শন, সামাজিক দর্শন, রাজনৈতিক দর্শন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে গভীরভাবে থাকবে৷

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপা’চার্যকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছেন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপা’চার্যেরা৷ এতে কী সাধারণ শিক্ষার্থীদের নায্য দাবি দলীয় উপা’চার্যদের কারণে উপেক্ষ’তি হলো না?

কাউকে সমর্থন দেওয়ার বি’ষয়টি আমার জানা নেই৷ যখন যে কথা বলবেন, তখন তারা বলবেন, কোথাও যেন অচলাবস্থার সৃষ্টি না হয়৷ যেন অবিচার না হয়৷ কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে সেটা যেন সুষ্ঠু ত’দন্তের মাধ্যমে, আলোচনার মাধ্যমে সেটির সুরাহা করা হয়৷ কোন ধরনের স্থবিরতা না ঘটে এই ধরনের বক্তব্য থাকাই তো বাঞ্ছনীয়৷

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপা’চার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনটি আসলে উপযুক্ত পদ্ধতি বলে আপনি মনে করেন?

এটি গবেষণার দাবি রাখে৷ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় যেটি দরকার, সেখানে শিক্ষার পরিবেশ থাকবে, গবেষণার পরিবেশ থাকবে৷ সেখানে একাডেমিক, প্রশাসনিক মূল্যবোধ থাকবে৷ উপা’চার্য যিনি হবেন তিনি এসবকিছুর সমন্বয় করবেন৷ সূত্রঃ ডয়চে ভেলে