মুরাদরা রাজনীতির অভিশাপ- দল থেকেও বাদ দিন

| আপডেট :  ৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল কামরুননাহার মুকুলের অডিও ফাঁ’স হলে গোটা দেশ একজন শিক্ষকের নোং’রা, অশালীন কথাবার্তা শুনে স্তম্ভিত হয়েছিল। কলতলার ভাষাকে হার মানানো এমন ভাষা ব্যবহারে অভ্যস্ত একজন নারী আর যা-ই হোন দেশসেরা একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল পদ দূরে থাক শিক্ষকতা পেশায়ও থাকতে পারেন না। সে সময় তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে গণমাধ্যমে তুমুল বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। সবকিছু একে একে ন’ষ্টদের দ’খলে চলে যাওয়ায় আমরা একটি বি”কৃত লোভ-লালসাকবলিত সমাজে বসবাস করার সুবাদে দেখলাম নির্লজ্জের মতো কামরুননাহার মুকুলের মতো নোং’রা ভাষা ব্যবহারে অভ্যস্ত একদল নর-নারী তার পাশে দাঁড়িয়ে গেলেন। তার পক্ষে সাফাই গাইলেন। এমন নোং’রা ভাষায় যারা অভ্যস্ত তাদের পক্ষে এমন শিষ্টাচারবিবর্জিত অশালীন ভাষার একজন শিক্ষকের পাশে দাঁড়ানো বিচিত্র কিছু নয়।

লোভ-লালসা চরিত্রহীনতা বি”কৃতি সমাজের এক কুৎসিত কদর্য গা ঘিন ঘিন করা ভ’য়ংকর চিত্রপট। এ চিত্রপট যারা দিনে দিনে তৈরি করেছেন তারা এ নিয়ে গর্ব করেন। এ নিয়ে তাদের লাজলজ্জা গ্লানি বলে কিছু নেই। মূল্যবোধ আদর্শ নীতি-নৈতিকতা এক কথায় নির্বাসনে দিয়ে, সমাজটাকে তারা আধুনিকতার নামে মধ্যবিত্তের রক্ষণশীলতার দুর্গ ভে’ঙে দিয়ে, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসনকে পদদলিত করে গভীর অন্ধকারে টেনে নিচ্ছেন। মা’দকের আগ্রাসন থেকে যৌ’নবি”কৃতির চ’রম লাম্পট্য এখানে গ্রাস করেছে। ভিকারুননিসার প্রিন্সিপালের বি’রুদ্ধে শিক্ষা ম’ন্ত্রণালয় ত’দন্ত কমিটি করলেও আজ পর্যন্ত ত’দন্ত শেষ হয়নি।

যেন তাকে বহাল তবিয়তে রাখার ব্যবস্থা। সর্বশেষ মহামান্য হাই কোর্ট ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ত’দন্ত রিপোর্ট জমা দিতে চূড়ান্ত নির্দেশ দিয়েছে। ব্যক্তিজীবনে এই শিক্ষিকা প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক স’শস্ত্র ক্যাডারকে। জীবনের পরতে পরতে যখন যাকে ব্যবহার দরকার তখন তাকে ব্যবহার করেই ফায়দা হাসিল করে নিজের আখের গুছিয়েছেন। এ ধরনের মানুষ কেবল শিক্ষাব্যবস্থা বা সমাজের জন্যই অশুভ নয়, একটি জবাবদিহিমূলক গণমুখী স’রকারের জন্যও ভারী বোঝা। কিন্তু দু’র্নীতির অর্থের লেনদেন এতটাই শক্তিশালী যে, এদের রক্ষা করতে শাসক দলের অনেকেই তৎপর হয়ে যান প্রকাশ্যে।

ভিকারুননিসার প্রিন্সিপালের কথা থাক। পদত্যাগী প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের কথায় আসি। তিনি ডাক্তার হয়েছিলেন মানুষ হতে পারেননি! এমপি-মন্ত্রী হয়েছিলেন একজন আদর্শিক রাজনৈতিক কর্মী হতেও পারেননি! কথায় কথায় বাবা মতিউর রহমান তালুকদারের স’ন্তান বলে দম্ভ দেখাতেন। বাপের সুনাম রাখা দূরে থাক প্রমাণ করেছেন পরিবার থেকেও পাঠ নেই। নটর ডেম কলেজে পড়েছেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়েছেন, একজন উন্মাদ মাতাল যৌ’নবি”কৃত ন’ষ্ট অসভ্য হয়ে বের হয়েছেন। তিনি ধর্মপ্রা’ণ মানুষের মনে আ’ঘাত দিয়ে উন্নাসিক আচরণ করেছেন, তিনি রাজনীতির ভাষা জানেন না, শেখেননি প্রতিপক্ষকে সমালোচনার কৌশল! কলতলার খিস্তি শিখে বেড়ে উঠেছেন তাই কন্যাসম জাইমাকে নোং’রা গালি দিয়েছেন।

পিতৃতুল্য বীর মুক্তিযো’দ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নোং’রা আ’ক্রমণ করেছেন। ঢাবির ছাত্রীদের নোং’রা মন্তব্য করে জানান দিয়েছেন তিনি কতটা অন্ধকার জগতের মানুষ। ঢাকা ক্লাবের সদস্যদের মা তুলে গা’লিগা’লাজ করে জানিয়েছেন মাকে সম্মান করার শিক্ষাও তিনি পাননি। নায়িকা মাহির সঙ্গে যেভাবে কথা বলেছেন গা ঘিন ঘিন করে বমি আসে! বুঝিয়েছেন তিনি আজন্ম কুৎসিত কদর্য এক যৌ’নবি”কৃত অমানুষ। ডা. মুরাদ হাসান রাজনীতির অভিশাপ, সমাজের অভিশাপ। বাইরে মানুষের আদল ভিতরে পশুর বাস! তার শা’স্তির দন্ড আরও পাওনা বাকি। কেবিনেটকে অভিশাপ ও কলঙ্কমুক্ত করতে তাকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন। দল ও সং’সদ থেকেও তাকে বিদায় জানাতে হবে। তার সীমাহীন অসভ্যতা নোং’রামি ও ঔদ্ধত্যের বি’রুদ্ধে গণমাধ্যম দায়িত্বশীল ভূমিকাই নেয়নি, প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন কঠিন পদক্ষেপ। গণমাধ্যমকেও আজ নিজেদের দিকে তাকাতে হবে, প্রশ্ন করতে হবে তার এত কর্মকান্ড নিয়ে কোথাও কেউ কেন একটি প্রতিবেদনও করতে পারেনি?

একটা বানর একটা বাগান ন’ষ্ট করতে যথেষ্ট। মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা স’রকারের বিস্ময়কর উন্নয়নের বাংলাদেশে আজ সব ইমেজে আঁচড় বসিয়ে স’রকারকে বি’তর্কি’ত করতে একজন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান যে যথেষ্ট গত কিছুদিন ধরে তার লাগামহীন কথাবার্তা ও উন্নাসিক দাম্ভিক আচরণে প্রমাণ করে দিয়েছেন। যেভাবে একের পর এক বি”কৃত অশালীন বক্তব্য আর অস্বাভাবিক আচরণে ভাইরাল হয়েছে তাতে নিজেকেই মাটিতে শুইয়ে দেননি, স’রকারকেও ঝাঁকুনি দিয়েছেন। ধর্মানুরাগী মু’সলমানদের আবেগ-অনুভূতিতে আ’ঘাত তথা সংবিধানবি’রোধী বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় এসে তিনি থেমে যাননি। যেন বিতর্কের কাঙাল হয়ে পড়েন।

তার পিতা জামালপুর জে’লা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান তালুকদার মুক্তিযু’দ্ধের একজন সংগঠক ছিলেন। আদর্শ পিতার সুস’ন্তান না কুস’ন্তান- তার কর্মকান্ডে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা একজন পোড় খাওয়া আওয়ামী লীগ নেতার স’ন্তান হিসেবে ডা. মুরাদ হাসানকে দলের মনোনয়ন দিয়ে এমপি বানিয়েছিলেন। তার আচরণের কারণে এক দফা তাকে বাদ দিতে হয়েছে। আবার এমপি বানিয়ে প্রথমে স্বা’স্থ্য প্রতিমন্ত্রী করলেও সেখানে তাকে বেশিদিন রাখা যায়নি। মিডিয়াবান্ধব তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের অধীনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী করেন। কিন্তু ডা. মুরাদ হাসান প্রমাণ করেছেন পোড় খাওয়া আওয়ামী লীগের স’ন্তান হলেই রাজনীতিতে সফল হওয়া যায় না। পরিপক্বতা অর্জন করতে না পারলে ভদ্র, বিনয়ী না হলে, অর্বাচীন নাবালক হয়েই থাকতে হয়।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগারদের স’ন্তান হিসেবে মুজিবকন্যা যাদের দলের পদ থেকে নানা দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাদের অনেকে সফল হলেও কেউ কেউ অর্বাচীন নাবালকের মতো দল ও স’রকারের ইমেজ ন’ষ্ট করছেন। লোভ-লালসা দম্ভ উন্নাসিকতা একেকজনকে মাটিতে পা ফেলতে দেয়নি। চিরকাল যে দল ক্ষমতায় থাকবে না এবং জনগণকে অসন্তুষ্ট করে যে রাজনীতি সুখকর হয় না এই শুভবুদ্ধির উদয়ও তাদের হচ্ছে না। ডা. মুরাদ হাসানের নোং’রা আ’ক্রমণাত্মক ভাষার ছোবল থেকে তার পিতার বয়সী বীর মুক্তিযো’দ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও রেহাই পাননি। রাজনীতিতে মতের দ্বিমত থাকলে প্রতিপক্ষের সমালোচনা করা যায়, তাই বলে শালীনতার সব পর্দা ছিঁড়ে ফে’লে নয়। নোং’রা, অশালীন, অশোভন ভাষা প্রয়োগ করে নয়। নোং’রা, কুৎসিত গালি দিয়ে নয়। এ শিক্ষা কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মীকে তার নেতৃবৃন্দও দেন না।

বক্তৃতা একটা আর্ট, যা মানুষকে টানে। পা’গলের চি’ৎকার নয়, উন্মাদের প্রলাপ নয় যে, লোকে হাসবে বা জনগণ ক্ষু’ব্ধ হবে। অথচ ডা. মুরাদ হাসান ঔদ্ধত্য নিয়ে মি’থ্যাচার করে বলেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে যখন যা তা বলছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে যখন রাজনীতিতে একটি ইস্যু তৈরি হয়েছে এবং কখনোসখনো উ’ত্তেজনাও তৈরি হচ্ছে ঠিক তখন তার নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে ডা. মুরাদ হাসান যে নোং’রা ভাষায় কথা বলেছেন সেটি একজন সুস্থ মানুষের ভাষা হতে পারে না। একজন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর ভাষাও হতে পারে না। আর একজন প্রতিমন্ত্রী এমপির ভাষা হলে দলীয়ভাবে তার জন্য শা’স্তি অনিবার্য হওয়া উচিত। এটা ভদ্রলোকের ভাষা নয়। এটা কলতলার খিস্তিখেউর।

একজন প্রতিমন্ত্রীর ভাষা এমন হলে তার স’রকার, রাজনৈতিক দল ও মন্ত্রিসভার বি’রুদ্ধে গণঅসন্তোষ সৃষ্টি করতে সময় নেবে না। এ ধরনের মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলা হবে এমনটিই প্রত্যাশিত ছিল। প্রধানমন্ত্রী তা-ই করেছেন। এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু স’রকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুর জাতির বে’দনাবিধুর আগস্ট হ’’ত্যাকান্ডের মীরজাফর খু’নি মোশতাকের ডান হাত ছিলেন। এরশাদের তথ্যমন্ত্রী চীনপন্থি আনোয়ার জাহিদ ঝাড়ুদার মন্ত্রী হয়েছিলেন। ওদের বিশ্বাসঘা’তকতা ও নির্লজ্জতার পর ডা. মুরাদ হাসান ছাড়া এমন বি”কৃত অশোভন নোং’রা মা’নসিকতার ও নারীবিদ্বেষী মন্ত্রী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আসেনি। পদত্যাগী প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির টেলি কথোপকথনের অডিও ফাঁ’স হয়েছে যেখানে কান রাখা দায়। পরিবারের সবাই মিলে একজন মন্ত্রীর ভাষ্য শোনার উপায় ছিল না।

তরুণ প্রজন্ম দেখছে একজন প্রতিমন্ত্রী কত নিম্নরুচির হতে পারেন! নায়ক ইমনের মোবাইলে নায়িকা মাহিকে যে নোং’রা কদর্য ভাষায় মুরাদ কথা বলেছেন তা জঘন্য ও ভ’য়ংকর। এমন মানুষ আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী একটি রাজনৈতিক দলের মন্ত্রিসভায় দূরে থাক, সাধারণ সদস্য পদেও থাকতে পারেন না। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় মন্ত্রিত্বের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে যা খুশি তা করে বেড়ানোর এখতিয়ার তাকে সংবিধানও দেয়নি। তার আচার-আচরণ ও কথাবার্তা সংবিধানেরও চ’রম ল’ঙ্ঘন। এই প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান সম্প্রতি ঢাকার শাহবাগ এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী সামাজিক ক্লাবে চ’রম অশোভন আচরণ করেছেন। তার এ আচরণের প্র’তিবাদে সদস্যরা মুখর হয়ে উঠলে তাকে সেখান থেকে বের করেই দেওয়া হয়নি, ক্লাবে নি’ষিদ্ধও করা হয়েছে! আওয়ামী লীগ ও স’রকারের বি’রুদ্ধে তার কর্মকান্ড চ’রম অসন্তোষ তৈরি করছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, মুরাদের বক্তব্য দল ও স’রকারের বক্তব্য নয়। এটা তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। তিনি এ বি’ষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। ওবায়দুল কাদের কথা রেখেছেন। আমরা আশা করতেই পারি, এ ধরনের শিষ্টাচারবহির্ভূত, শালীনতার সীমানা ল’ঙ্ঘনকারী অসভ্য, অভদ্র ব্যক্তিকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভা থেকে বিদায় দিয়ে ক্ষান্ত থাকবেন না। দল থেকেও বিদায় জানিয়ে সারা দেশের নেতা-কর্মীকে সজাগ ও সতর্ক করে দেবেন। অপরিপক্ব দাম্ভিকদের পতন অনিবার্য।

সারা দেশে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও তাদের কর্মীরা তৃণমূলে স্বতন্ত্র পরিচয়ে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য পদে প্রার্থী হচ্ছেন। অনেক জায়গায় বিজয়ী হচ্ছেন। ১৫ বছর ধরে বিএনপি ক্ষমতায় নেই। এলাকায় তাদের মন্ত্রী-এমপি নেই। দলীয়ভাবে তারা নির্বাচনও করছে না। কিন্তু তাদের প্রার্থীরা অনেক জায়গায় বিজয়ী হচ্ছেন, অনেক জায়গায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করছেন। ক্ষমতানির্ভর আওয়ামী লীগ ১৩ বছরে ক্লান্ত হয়েছে নাকি ক্ষমতার দম্ভে আকাশে উড়ছে, নাকি দলাদলি কোন্দলে সংগঠনকে এতটাই দুর্বল ও গণবিচ্ছিন্ন করেছে যে তিন ধাপে সম্পন্ন ইউপি নির্বাচনে ২ হাজার ১৯০টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থীরা ৮৭১টিতে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করেছেন। বাঘা বাঘা মন্ত্রী, এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতাদের এলাকায়ও এ পরাজয় দেখতে হয়েছে। বি’দ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা, কোথাও বা বিজয় ছি’নিয়ে আনা, কোথাও বা সহিং’সতায় র’ক্তাক্ত করার ঘটনা ঘটেছে। প্রান্তিক পর্যন্ত এটা দৃশ্যমান হয়েছে যে তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতারা ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানের হিসাবে এতটাই ব্যস্ত যে না দল গুছিয়েছেন না জনগণকে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার বিশাল উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ তুলে ধরে গণসম্পৃক্ত করে তুলেছেন। কোনো কোনো জে’লায় অতিশয় দুর্বল নেতৃত্ব কখনো কমিটি বাণিজ্য কখনো বা নির্লজ্জ মনোনয়ন বাণিজ্যে অভিশপ্ত হয়েছেন। মাঝখানে ইউপি নির্বাচনে নৌকার মাঝিরা করুণ পরাজয় বরণ করেছেন। অনেক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা প্রতিদ্ব’ন্দ্বিতা দূরে থাক জামানত হা’রানোরও রেকর্ড গড়েছেন। সুনামগঞ্জ জে’লা সদরের নয়টি ইউনিয়নের একটিতেও আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়নি। ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি চারটিতে বিজয়ী হয়েছে। জাতীয় পার্টির লাঙ্গল নিয়ে দুটিতে ও সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী একজন বিজয়ী হয়েছেন। একটিতে ৫৭ ভোটে হেরেছেন। চারটিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছেন। আওয়ামী লীগের এক বি’দ্রোহী জিতলেও জামানত হা’রিয়েছেন চারটিতে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছেন দুটিতে। নেতৃত্ব সেখানে সাংগঠনিক কর্মকান্ডের বদলে নিজেদের আখের নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। সংগঠন ও নেতৃত্ব তৈরি করতে চ’রমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। বিগত জে’লা কমিটি নিয়েই রয়েছে হাজারো বিতর্ক। একই ছায়া সারা দেশেই পড়েছে। ঝিনাইদহে তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী দ্বিগুণ ভোট পেয়ে নৌকা প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন। বিএনপি এটি নিয়ে স’রকারি দলকে আ’ক্রমণ করতে গিয়ে শামসুজ্জামান দুদুর মতো নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ হিজড়াদের কাছে হেরে যায়! পশ্চিমা দুনিয়ায় ওরা মানুষ বলে সম্মানের সঙ্গে স্বীকৃত। এ দেশেও তাদের সব নাগরিক অধিকার দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের তাচ্ছিল্য একজন রাজনীতিবিদের জন্য দেউলিয়াত্ব ছাড়া কিছু নয়। হীন মা’নসিকতারও বহিঃপ্রকাশ। এ মা’নসিকতা থেকে বের না হলে মানবিক রাজনীতি দেশে কোনো দিন আলোর মুখ দেখবে না।

যাই হোক, আওয়ামী লীগের জন্য আগামী দিনের নির্বাচন ও ক্ষমতার রাজনীতি সামনে রেখে আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির পথে ইউপি নির্বাচনসহ সামগ্রিক পরিস্থিতির চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করে সংগঠনকে সারা দেশে কীভাবে গণমুখী পরিচ্ছন্ন ইমেজের নেতৃত্বে সাজানো যায়, কীভাবে বিতর্কের বাইরে থাকা ক্লিন ইমেজের জনপ্রিয় প্রার্থীদের ভোটযু’দ্ধে নামানো যায় এবং কীভাবে দলকে একদিকে সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালীকরণ এবং অন্যদিকে জনগণকে সম্পৃক্ত করবে সে উদ্যোগ নেওয়ার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আওয়ামী লীগের সব থেকে বড় শক্তি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার মতো স’রকার-প্রধানের বিশাল উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ ও জনপ্রিয়তা। এর ও’পর ভর করে এ চ্যালেঞ্জে নেতৃত্ব কীভাবে উত্তরণ ঘটাবেন সেটিই দেখার অপেক্ষা সামনে। তার আগে দল ও স’রকারের বোঝা হয়ে যারা দাঁড়িয়েছেন তাদের বি’রুদ্ধে ক’ঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে বা অপসারণ করে ইমেজ পুনরুদ্ধার করার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা দেশজুড়ে আজ সবাই আওয়ামী লীগ। চাটুকার, সুবিধাবাদিতে ভরে গেছে দল। দুঃসময়ের পথের সাথীরা ছিটকে পড়েছে। সুসময়ের ভ’য়ংকর বন্ধুরা জুটে গেছে। একখানা দেয়াল তুলে দিয়েছে তেলের নহর বইয়ে দিয়ে।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।
সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন