যেসব বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলেন মুফতি ইব্রাহিম

| আপডেট :  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৪:০২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৪:০২ অপরাহ্ণ

ফতি ইব্রাহীমকে আটক করা হয়েছে। তাকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর লালমাটিয়ার জাকির হোসেন রোডের বাসা থেকে তাকে আটক করে ডিবির একটি দল। মুফতি ইব্রাহীমকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার। তবে কী কারণে তাকে আটক করা হয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।

কে এই মুফতি ইব্রাহীম?
কালের কণ্ঠের এক সাক্ষাৎকারে ইব্রাহিম বলেছিলেন, আমি আসলে একা। আমি সারাজীবন একা একজন মানুষ। আমি কোনো দলে নাই, রাজনীতি করি নাই কখনো। যদি এক কথা বলি আমি একজন কিতাবি মানুষ। আমার দাদা ছিলেন নোয়াখালীর আলিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল। কলকাতা আলিয়ার বড় ডিগ্রিধারী। হাটহাজারী মাদরাসার উৎপত্তি হয়েছে আমার নানাকে দিয়ে। আমার নানা সারাজীবন হাটহাজারী মাদরাসার মজলিসে শুরা সদস্য ছিলেন। আমার মামা মুফতি আব্দুল মুইযকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্রথম খতিব হিসেবে নিয়োগ দেন। লালবাগ মাদরাসার মুফতি ছিলেন মামা। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতাপরবর্তী সময় মামাকে নিয়ে এসে বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব হিসেবে নিয়োগ দেন। স্বাধীন বাংলার বায়তুল মোকাররমের প্রথম খতিব তিনি। আমরণ খতিব ছিলেন বায়তুল মোকাররমে। বায়তুল মোকাররমের বর্তমান খতিব সালাহুদ্দিন সাহেব ইনি আমার বাবার ছাত্র ছিলেন। খুবই প্রিয় ছাত্র ছিলেন। আমরা ৩০o বছর থেকে ধর্মীয় শিক্ষা, ধর্মীয় দাওয়াত এসব কাজে নিয়োজিত আছি।

তিনি বলেন, আমার নিজের গড়া মাদরাসায় সময় দেই। গাজীপুরে একটা মাদরাসা আছে। দক্ষিণখানে নির্মাণাধীন মাদরাসা রয়েছে। আমার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে, তিনটা শাখা। এভারোস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। যেখানে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ছেলেমেয়েরা পড়ে।

তাঁর যেসব বক্তব্যে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়- বেশ কয়েকটি বিষয় সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত হয়, যেসব মুফতি ইব্রাহিম বিভিন্ন সভা ও ওয়াজ মাহফিলে বলেছিলেন। কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালেও একই কথা বলেন। মুফতি ইব্রাহিমের বিতর্কিত সেই বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো-

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও ইতালির মামুন
মামুন মারুফ ইতালিতে থাকে, সে বাঙালি কিন্তু ইতালিপ্রবাসী। আমি তো তাঁকে চিনি না। আমার ভক্ত আছে এ দেশে ১০-১৫ কোটি। আমি ২০ বছর ধরে মিডিয়াতে কাজ করি। বিটিভিসহ দেশের প্রায় সব টেলিভিশনেই কথা বলেছি। সে কারণে বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষই আমাকে চেনে, মামুনও চেনে। মামুন আমার ফোন নম্বর যোগাড় করেছে বহু কষ্টে। আমি তো সবার ফোন ধরি না। পরে আমার পিএস সাহেবকে দিয়ে বহু কষ্টে আমার সাথে যোগাযোগ করেছে।

ফেব্রুয়ারি নাগাদ সে স্বপ্ন দেখেছে, করোনাভাইরাস তাকে নানান কথা বলেছে। আমরা তো স্বপ্নের কথা বুঝতে পারি সেটা মেকি, বানোয়াট না আর্টিফিসিয়াল। তার স্বপ্নটা শুনে মনে হলো সে সাদামাটা টাইপের একটা ছেলে। তার স্বপ্নটা সত্য হওয়ার সম্ভাবনাই আমার কাছে নাইন্টি নাইন পার্সেন্ট মনে হলো। আমি দেখলাম এতে খারাপ কিছু নাই, স্বপ্নকে সামনে রেখে জাতিকে যদি সতর্ক করা যায় তাহলে এতে তো ক্ষতি কিছু নাই। আমরা তো ভালো যে মানুষকে আগেভাগেই ইনফর্ম করছি। যখন কেয়ামত ঘনিয়ে আসবে মোমিনের স্বপ্ন মিথ্যা হবে না। স্বপ্ন যে কোনো মানুষই দেখতে পারে সে মুমিন হোক বা না হোক।

q7+6=13 সূত্র
এইটা একটা জটিল বিষয়। এইটার আলোকে ও (মামুন) চেষ্টা করতেছে কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা যায় কি না। 1 মানে আল্লাহ এক। এক আল্লাহর প্রতি ফেইথ থাকতে হবে। ফেইথ যদি না থাকে ঈমান যদি না থাকে তাহলে কোনো কিছুই কাজে আসবে না। অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার প্রতি অবিচল থাকতে হবে। q মানে কোরআন। q7 হলো কোরআনের সুরা ফাতিহার ৭টি আয়াত। এই ৭ টি আয়াত তো এম্নিই শেফা, ৭ বার সুরা ফাতিহা পড়লে যেকোনো রোগব্যাধি থেকে এম্নিতেই মুক্তি আসে। এইটা বিশাল একটা সূত্র। এর অনেক ব্যাখ্যা আছে। আমাকে সে (মামুন) যে কথাগুলো বলেছে তা প্রত্যেকটি সায়েন্টিক বলে মনে হয়েছে। আমরা তো ওষুধ কম্পানিও না, সেইটা বানানোর মতো ক্ষমতাও নাই। সে যদি পারে ব্যক্তিগতভাবে তাহলে উপকার করার চেষ্টা করবে, এই আরকি…

পাপিয়াদের করোনা আক্রমণ করবে

সৌদি আরবে তাদেরই হয়েছে যারা অশালীন, ওখানের ভেতরের অবস্থা তো খুবই খারাপ। আমি যাই তো দেখেছি। দুবাইকে দেখলে তো মনে হয়না ওটা কোনো মুসলিমের দেশ। কী হয় না সেখানে? ইরানে তো ম্যাসাকার অবস্থা, ৫ জন মন্ত্রীও তো মনে হয় মারা গেছে। ওয়ার যেহেতু আল্লাহর ধর্মকে বিকৃত করেছে। আমি বলেছি আমাদের দেশে দেরি করে আসবে। আমাদের মতো কাউকে আক্রমণ করবে না। করোনা আক্রমণ করবে পাপিয়ার মতো মানুষদের। আমাদের ভয়ের কিছু নেই। মামুন স্বপ্নে জানতে পেরেছে আমাদের দেশের যারা অসৎ কাজ করে, নেশা করে ঘুষ খায়, দুর্নীতি করে তাদের ধরবে করোনা। যুগে যুগে এসব অপরাধ যারা করে তাদের ওপরই গজব এসেছিল।

শেকসপিয়ার এর আসল নাম শেখ জুবায়ের
একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়- মুফতি ইব্রাহিম বলছেন, ‘শেকসপিয়ারের আসল নাম শেখ জুবায়ের। তিনি অ্যারাবিয়ান।’ এই ভিডিওটি দেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে। বিষয়টি আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ভিডিওতে মুফতি ইব্রাহিমকে দেখা যায় একটি ওয়াজ মাহফিলে বক্তৃতা করছেন। এ বিষয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কাজি মুফতি মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সেটি সম্ভবত ১০-১২ বছর আগের। আমি মাহফিলে যে বক্তব্য দিয়েছি, সেটি বলেছিলেন গাদ্দাফি। উনি বলেছিলেন আরবের যেসব পরিবার হিজরত করেছিল তাদেরই বংশধর। আমি গাদ্দাফির বক্তব্যেই শুনেছি।’

তিনি বলেন, ইংরেজদের নামের পরিবর্তনের ধারায় শেকসপিয়ার নামটিও পরিবর্তন হয়েছে। যেমনটা পরিবর্তন হয়েছে ইসহাক থেকে আইজাক, ইবনে সিনা, এবেসিনা, ইউসুফ থেকে যোশেফ।