আব্বু কখন কথা বলবে: কবরের পাশে অবুঝ ছেলের আহাজারি

| আপডেট :  ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ

মা’দক কারবারির ছু’রিকাঘা’তে নি’হত এএসআই পেয়ারুল ইসলাম কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামের শিক্ষক আব্দুর রহমান মিন্টুর ছেলে। মা গৃহিণী। চার ভাইবোনের মধ্যে পেয়ারুল ইসলাম সবার বড়। বৈবাহিক জীবনে দুই ছেলে সন্তানের বাবা তিনি। বড় ছেলে হাম্মামের ৬, আর ছোট ছেলে আব্রাহামের বয়স মাত্র ২ বছর।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের হারাগাছ থানায় কর্মরত ছিলেন পেয়ারুল ইসলাম। গত ২৪ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় হারাগাছ থানাধীন সিগারেট কোম্পানির বাজারে ইয়া’বা বিক্রির সময় মা’দক বিক্রেতা পারভেজ রহমান পলাশকে আ’টক করেন তিনি। আট’ক অবস্থায় মা’দক কা’রবারি পলাশ সাথে থাকা ধা’রা’লো ছু’রি দিয়ে অত’র্কিতভাবে পেয়ারুলের বুকে এ’লোপা’তাড়ি কো’প দেয়। এতে তিনি গু’রুত’র জ’খম হন।

পরে হারাগাছ থানার ওসি শওকত আলী দ্রুত আশ’ঙ্কাজ’নক অবস্থায় এএসআই পেয়ারুলকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে আইসিইউতে থাকা অবস্থায় গতকাল শনিবার সকাল সোয়া ১১টায় প্রাণ হা’রান তিনি। আজ রোববার পেয়ারুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পেয়ারুলকে হারিয়ে পরিবারের সবাই অ’সুস্থ হয়ে মান’সিকভাবে ভে’ঙে পড়েছেন। পেয়ারুলের মা ‘আল্লাহ্-আল্লাহ্’ ছাড়া আর কিছুই বলছেন না। স্ত্রী হেনা খাতুন বারবার জ্ঞা’ন হা’রিয়ে ফেলছেন। শিশুছেলে হাম্মাম (৬) বারাবার বাবার কবরের পাশে গিয়ে বলছে ‘আব্বু আর কথা বলে না, আব্বু কখন কথা বলবে।’

কথা হয় হ’ত্যাকা’ণ্ডের শি’কার পিয়ারুলের বাবা আব্দুর রহমান মিন্টুর সাথে। ছেলের হ’ত্যাকা’রীর ফাঁ’সি দা’বি করে তিনি বারবার কা’ন্নায় ভে’ঙে পড়েন। তিনি বলেন, এ হ”ত্যাকা’ণ্ড’ পরিকল্পিত হতে পারে। হ’ত্যাকা’ণ্ডে’র সাথে আরও কেউ জ’ড়িত থাকতে পারে। তাদের খুঁজে বের করা প্রশাসনের দায়িত্ব। যারা আমার ছেলের অবুঝ সন্তানদের এতিম করলো, বাবা-মায়ের কোল খালি করে দিলো, তাদের কঠিন থেকে কঠিনতর শা’স্তি হওয়া দরকার। আর এ শা’স্তি আমি দেখে যেতে চাই।

এর আগে গতকাল শনিবার বিকেল ৪টায় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে জানাজা নামাজের আগে পিয়ারুলকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। তার ক’ফিনে ফুল দেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আব্দুল আলীম মাহমুদ, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, পুলিশ ট্রেনিং কমান্ডেন্ট বাসুদেব বণিক, রংপুর জেলা পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার, পিবিআই পুলিশ সুপার জাকির হোসেন, সিআইডির অতিরি’ক্ত পুলিশ সুপারসহ আরএমপির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এছাড়া জানাজায় অংশ নেন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শাফিয়ার রহমান শফি ও সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তিসহ পুলিশ সদস্যবৃন্দ। পরে গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া গ্রামে এএসআই পেয়ারুলের ম’রদে’হবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি পৌঁছলে হৃদ’য়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।

ওইদিন রাত সাড়ে ৯টায় চন্দ্রপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন রাজারহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ সোহরাওয়ার্দী বাপ্পী, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার আলতাফ হোসেন, হারাগাছ থানার ওসি শওকত আলী ও রাজারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ রাজু সরকারসহ কয়েক হাজার মুসল্লি।

জানাজা নামাজে অংশ নেয়া মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে হারাগাছ থানার ওসি শওকত আলী নিহত এএসআই পেয়ারুলের বী’রত্বের কথা বর্ণনা করেন এবং তার পরিবারের প্রতি গভী’র দুঃখ ও স’মবেদ’না প্রকাশ করেন। শেষে তাদের মসজিদের পাশেই তার দাফন সম্পন্ন হয়।