এসপি কার্যালয়ের সামনে কনস্টেবলের ২ সন্তানকে ফেলে গেলেন মা

| আপডেট :  ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:১৭ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:১৭ পূর্বাহ্ণ

ঝালকাঠিতে আরাফ ও আয়ান নামের ১৬ মাসের জমজ দুই সন্তানকে এসপির কার্যালয়ের সামনে ফেলে রেখে গেছেন পুলিশের এক কনস্টেবলের সাবেক স্ত্রী। শিশু দুটিকে ঝালকাঠি থানার নারী ও শিশু ডেস্কে এনে রাখা হয়েছে। দুই শিশুকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে থানা পুলিশ। পুলিশ কনস্টেবল পিতা সন্তানদের ভরণপোষণ ও চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন না করার অভিযোগে রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে শিশুদের সেখানে ফেলে রেখে যান মা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিশু দুইটির বাবা ইমরান হোসেন, কাঁঠালিয়া থানা পুলিশের কনস্টেবল পদে কর্মরত আছেন। বর্তমানে এক মাসের প্রশিক্ষণের জন্য জামালপুরে অবস্থান করছেন। তার বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার মালুহার গ্রামে। ২০১৯ সালের মে মাসে এক তরুণীকে বিয়ে করেন। এরপর দাম্পত্য কলহের জেরে চলতি বছরের মার্চ মাসে স্ত্রীকে তালাক নোটিশ পাঠান ইমরান। তালাক নোটিশ পেয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা করেন। স্ত্রীর দাবি, তালাক নোটিশ পাঠানোর আরও আগে থেকে তার এবং সন্তানদের কোনও ভরণপোষণ দিচ্ছে না ইমরান।

প্রত্যক্ষদর্শী ও এসপি কার্যালয়ের সামনের চায়ের দোকানি মাহফুজ মিয়া বলেন, ‘বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এক নারী তার দুই শিশু সন্তানকে এসপি অফিসের চেক পোস্টের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সামনে রেখে যান। যাওয়ার সময় সে বলে যায়, তোমাদের সন্তান তোমাদের কাছেই থাক। পরে শিশু দুইটিকে সন্ধ্যায় ঝালকাঠি সদর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের কান্নায় থানার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।’

শিশু দুইটির মা মোবাইল ফোনে বলেন, ‘গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে আরাফ ও আয়ান ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে। আজ সকালে চিকিৎসকরা তাদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলেন। এতে প্রায় ছয় হাজার টাকার প্রয়োজন ছিল। বিষয়টি ইমরানকে জানানো হলে, টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। তাই বাধ্য হয়ে শিশু দুটিকে নিয়ে পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিনের সাক্ষাতের জন্য যা-ই।

কিন্তু প্রধান ফটকের সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ইমরান মিয়া ও মো. সুমন নামে দুই পুলিশ সদস্য আমাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে শিশু সন্তানদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে রেখে চলে এসেছি।’তিনি আরও বলেন, ‘বাচ্চাদের লালনপালন করতে আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু ওদের লালনপালনের খরচ আমি কীভাবে বহন করবো? আমারতো সে সামর্থ্য নেই।’

কনস্টেবল ইমরান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘প্রতি মাসে সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য আমি তিন হাজার টাকা তার (সাবেক স্ত্রী) ব্যাংক হিসেবে পাঠাই। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী তাদের খোঁজখবর নিয়ে থাকি। কিন্তু মা হয়ে সে কীভাবে সন্তানদের এসপি কার্যালয়ের সামনে ফেলে গেল?’ ঝালকাঠি সদর থানার ওসি মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘শিশুদের দাদা-দাদিকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে রাতে শিশু দুইটিকে নিয়ে গেছে। আমরা দুই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’