এক বিবৃতিতে যেভাবে পাল্টে গেল পরিস্থিতি, নতুন ইউএনও পাচ্ছে বরিশাল

| আপডেট :  ২৩ আগস্ট ২০২১, ০৩:৫৯ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৩ আগস্ট ২০২১, ০৩:৪৬ পূর্বাহ্ণ

বরিশালে ইউএনওর বাসভবনে হা’মলা ও সং’ঘর্ষের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সিটি মেয়রকে প্রথমে গ্রে’প্তার, পরে বরখাস্ত করা হবে—স’রকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে এই পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন থেকে ক’ঠোর ভাষায় একটি বিবৃতি প্রকাশের পরই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বিবৃতিতে মেয়রকে ‘রাজনৈতিক দু’র্বৃত্ত’ উল্লেখ করায় ক্ষু’ব্ধ হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহলও। এখন সেই বিবৃতিকে কেন্দ্র করে স’চিবালয়সহ সারা দেশের মাঠ প্রশাসনের সর্বত্র আক্ষেপের সুর শোনা যাচ্ছে। গতকাল রবিবার রাত ১২টার দিকে সব শেষ খবরে জানা গেছে, গতকাল রাতে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে।

গতকাল আট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার নিয়ে নিয়মিত মাসিক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদস’চিবের সভাপতিত্বে বিভাগীয় কমিশনারদের বাইরে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ স্থানীয় স’রকার, জননিরাপত্তা বিভাগ, জনপ্রশাসন, স্বা’স্থ্য, শিক্ষাস’চিবসহ কয়েকজন সিনিয়র স’চিব উপস্থিত ছিলেন। বরিশালের ঘটনার পর বিবৃতির ঘটনাটি ওই বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে কেউ কেউ বিবৃতির ভাষা কড়া হলেও তা এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজন ছিল বলেও মত প্রকাশ করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, ওই রকম ভাষায় বিবৃতিটি না দিলেই বরং প্রশাসনের জন্য ভালো হতো। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

ওই বিবৃতির ভাষার বি’ষয়ে দুই দিন রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষ থেকে সমালোচনামূলক কোনো মন্তব্য না এলেও গতকাল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বিবৃতিটি ‘চটজলদি হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন। আর স্থানীয় স’রকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম আশা প্রকাশ করেন, ঘটনাটি ভু’ল বোঝাবুঝি থেকে হয়েছে, দ্রুতই এটা মিটে যাবে।

কমিশনারদের বৈঠক শেষে সিনিয়র স’চিবরা মন্ত্রিপরিষদস’চিবের কক্ষেও কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ইউএনওর ও’পর হা’মলা কোনো ব্যক্তি বা অফিসারের ও’পর হা’মলা নয়, এটা স’রকারের ও’পর হা’মলা। হা’মলার ঘটনার ভিডিও থাকায় সেটার গ্রহণযোগ্যতা ছিল প্রশ্নাতীত। তাই এ বি’ষয়ের আগে থেকেই স’রকারপ্রধান মেয়রের বি’ষয়ে ক্ষু’ব্ধ ছিলেন। তাঁকে গ্রে’প্তারের পর বরখাস্ত করা হবে, তাও প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। কিন্তু অ্যাসোসিয়েশনেরর পক্ষ থেকে বিবৃতিটি প্রকাশ হওয়ার পর রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। যা পুরো ঘটনাকে প্রশাসনের বিপক্ষে নিয়ে গেছে।

গতকাল দিনভর স’চিবালয়ে একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে তাঁরাও বিবৃতির কারণে ঘটনার বল রাজনৈতিক পক্ষের ঘরে চলে গেছে বলে মনে করেন তাঁরা। জনপ্রশাসনের একজন যুগ্ম স’চিব বলেন, বরিশালের ঘটনার পর থেকে সদ্য সাবেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পর্যন্ত ইউএনওর পক্ষ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। পুরো বি’ষয়টিই অফিসারের পক্ষে ছিল; কিন্তু ওই ভাষায় বিবৃতি দেওয়ার কারণে সেটা নেতিবাচক প্রভাব ফে’লেছে। গতকালের কমিশনার বৈঠকেও এ বি’ষয়ে আলোচনা উঠলে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেছেন, এই বিবৃতি সংগঠনের বৈঠকের পর গেছে। তাই এটা কারো ব্যক্তিগত বিবৃতি নয়, সংগঠনের বিবৃতি। এ বি’ষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে স’রকারের একজন সিনিয়র মন্ত্রী কালের কণ্ঠকে বলেন, বরিশালে অন্য অনেক বি’ষয়েই মেয়রের ও’পর স’রকারের শীর্ষ পর্যায় ক্ষু’ব্ধ ছিল। এই ঘটনা সেটা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তবে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ও রকম ভাষায় বিবৃতি না দিলেই পারতেন।

গতকালের প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকে বরিশালের ঘটনায় তাঁদের বিবৃতিগত অবস্থান থেকে পেছানো হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। তবে স’রকারের প্রধানের পক্ষ থেকে কোনো নিদের্শনা এলেই শুধু তাঁরা সেটা বিবেচনা করবেন। অন্যদিকে মাঠ প্রশাসনের জুনিয়র কর্মকর্তাদের কার্যক্রমে পরিপক্বতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ কারণে ইউএনও পর্যায়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম করা হচ্ছে বলে বৈঠকে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন ম’ন্ত্রণালয়ের সিনিয়র স’চিব কে এম আলী আজম। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জনপ্রশাসনস’চিব বৈঠকে জানান, এসি ল্যান্ড থেকে সরসরি উপজে’লা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে যাতে নিয়োগ দেওয়া না হয় সেই ব্যবস্থা করছে তাঁর ম’ন্ত্রণালয়। এর পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, এসি ল্যান্ড হিসেবে কাজ করার পর অন্তত দেড় বছর জে’লা প্রশাসনে কাজ করতে হবে। এতে একদিকে মাঠ প্রশাসনে কর্মকর্তার সং’কট কমবে, অন্যদিকে তুলনামূলক দক্ষ’তা নিয়ে উপজে’লা প্রশাসনের প্রধান হিসেবে যোগ দিতে পারবেন কর্মকর্তারা।

এর আগে দিনাজপুরের এক ইউএনওর ও’পর হা’মলার পরিপ্রেক্ষিতে আরো অভিজ্ঞ অফিসারদের ইউএনও হিসেবে নিয়োগ দেওয়া উচিত কি না সেই প্রশ্ন উঠেছিল। এদিকে বরিশাল সদরে নতুন ইউএনও নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় প্রশাসন ক্যাডারের কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদি কেউ এই সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করেন তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বি’রুদ্ধে বিভাগীয় মা’মলার সিদ্ধান্তও হয়েছে।

গতকাল স’চিবালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সবার কাজেরই একটা সীমারেখা আছে। কাজ করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে এদিক-সেদিক হতে পারে। তবে কোনো ঘটনাই স’রকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নেই। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল বরিশাল সদরে নতুন ইউএনও যেকোনো সময় নিয়োগ হতে পারে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমান ইউএনওকে বিভিন্ন কাজে আ’টকে রাখা হয়েছিল। নতুন কেউ নিয়োগ পেলেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত বুধবার রাতে বরিশাল সদর উপজে’লা পরিষদ চত্বরে ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে সদর উপজে’লা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান শোভনের সঙ্গে স’রকারি বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সমর্থক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সং’ঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মা’মলা হয়েছে। অন্যদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সাদিক আবদুল্লাহকে রাজনৈতিক দু’র্বৃত্ত উল্লেখ করে তাঁকে গ্রে’প্তারের দাবি জানায়। সূত্রঃ কালের কণ্ঠ