আমি বিড়িখোর বোনকে ওদের জিম্মায় রেখে নিজেই উলটোপথ ধরিলাম, দেখলাম বইনে …

| আপডেট :  ১৮ আগস্ট ২০২১, ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৮ আগস্ট ২০২১, ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ণ

আমার বিড়ি বা কয়েল বা যেকোন ধোয়ায় খুশখুশে কাশির মতো হয়। আগে এতটা না থাকলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে এ সমস্যা। এ কারনে রাস্তাঘাটে ভীষণ বিরক্ত হই। কারন বাংলাদেশের নব্য স্টাইল হল চ্যাঙড়া, বুড়ো, ছুড়ো সবাই বিড়ি একটা হাতের মাঝে ঝুলিয়ে হাটা দেয় আর ধোঁয়া পেছনে ছাড়তে ছাড়তে যায়। এদের দেখলেই আমার কাশি শুরু হয়, আর সেই ধোঁয়া নাকে আসার পর আমি যক্ষা(!) রোগীর মতো কাশতেই থাকি।

তো রাস্তাঘাটে আমজনতা সবাইকে আমি বিড়ি না খাওয়ার পরামর্শ দিতে দিতে চলাফেরা করি, রিকশা ওয়ালা ভাড়া বাড়ায়ে দেয়ার কথা বললে বিড়ি না খাওয়ার শর্তে ভাড়া বাড়ায়ে দেই। জ্ঞান দেই আপনি নিজের ক্ষতি করেন, মাইনষেরও ক্ষতি করেন ব্লা ব্লা। ইয়াং পোলাইপাইন, শিক্ষিত পোলাপাইন হলে বকাঝকা করি, শিক্ষিত হয়ে লাভ কি হল যদি নিজেই নিজের ও চারপাশের ক্ষতি করতে থাকো!!এ তো এত সুক্ষ্ম বিষ, একদিনে বোঝা যাবে না, শেষদিন এলে বোঝা যাবে, আর কিছুই করার থাকবে না!!!

মাঝে মাঝে কয়েকজনকে মনে মনে থ্রেটও দেই, আপনি যদি অনুমতি ছাড়াই আমার মুখের উপর বায়বীয় পদার্থ (বিড়ির ধোয়া) দেন, আমি তাইলে আপনার মুখে তরল পদার্থ (থুতু) দিয়ে দেব, ইট মারলে পাটকেল টাইপ ব্লা ব্লা (এইটা মনে মনে ভাবি, এখনও প্রকাশ করি নাই) এইটাই বিড়িখোরদের প্রতি আমার নীরব ও সরব প্রতিবাদ।

আজ সকালে ঢাবির কাজের ফাঁকে বিরতিতে কিছুটা জিরিয়ে নিচ্ছিলাম মলচত্বরে। উদ্দেশ্য ছিল ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য এতবছর পর কিছুটা আনন্দচিত্তে অবলোকন করবো সাথে প্রিয় স্মৃতিচারণ। ঢাকা শহরে বিড়ির ধোয়া খুউবই স্বাভাবিক ঘটনা। খুশ খুশ কাশি দিতে দিতেই তাকালাম ধোয়াদানকারী ব্যক্তির দিকে, উদ্দেশ্য বলি ভাই দূরে গিয়্যা খান, আমার সমিস্যা হচ্ছে। তাকিয়ে দেখি সে ভাই নয়, বইন। বইনে আমার বিপুল উৎসাহে বিড়ি টানিচ্ছে আর আমার উপরে ধোঁয়া ছাড়িচ্ছে। আমি কিছু বলার আগেই সেখানে দুটো প্রভুভক্ত কুকুর এসে হাজির হয়ে বইনের মুখের দিকে তাঁকায়ে চিল্লাফাল্লা শুরু করে দিল। আমি বিড়িখোর বোনকে ওদের জিম্মায় রেখে নিজেই উলটোপথ ধরিলাম, দেখলাম বইনে ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে কুকুরের তাড়া খেয়ে পলায়ন করিতেছে।

কিছু দৃশ্য স্মৃতিতে যুক্ত হল, শয়তানের প্রিয় বস্তু হল ধোয়া, কুকুর শয়তান দেখে চিৎকার করে, শয়তান সময়ে অসময়ে বায়ু/ধোয়া ত্যাগ করতে করতে পলায়ন করে– এসবই যেন সাক্ষাৎ দেখিলাম

গল্প শেষ, সমাপ্তিতে বলতে চাই, বিড়ির ধোয়া সত্যিই আমাদের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আর সুন্দর জীবনের জন্য ক্ষতিকর। আর দু আঙুলে বিড়ি টেনে ধোয়া ছাড়ার মাঝে সত্যিই কোন স্মার্টনেস নেই। ওটা সম্পূর্ণই অজ্ঞতা, হত্যা আর আত্মহত্যার পরিচায়ক। একজন শিক্ষিত মানুষ বিড়ির কাছে নত হওয়া মানে তার শিক্ষা তাকে উন্নত হতে সাহায্য করতে পারে নি, তাই বোধদয় আসেনি আজও।

বিড়িতে হয়তো আপনার কিছুই হবে না, কিন্তু অনেকের জন্য মৃত্যুর কারন হয়ে যাবে। আমার ফলোয়ার্স, ফ্রেন্ডস দের কাছে অনুরোধ, শুধু নিজে না, চারপাশের সবার জন্যই বিড়ির ধোয়ামুক্ত জীবন গড়ি, আমাদের পরিচিত স্মোকারদেরকে অনুরোধ করি ছেড়ে দেয়ার, মানুষ চাইলে সব পারে, সেখানে শুধু ধোয়া খাওয়া ছাড়তে পারবে নাহ, তাই হয়!!!

বিঃদ্রঃ বিশ্ববিদ্যালয় এখন যেহেতু বন্ধ, বইন অবশ্যই বহিরাগত ছিল।
Ritu Kundu(Reverted) সূত্রঃ নয়া দিগন্ত