সেই মোল্লা ওমরের ছেলে তালেবানের নেতৃত্বে

| আপডেট :  ১৬ আগস্ট ২০২১, ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৬ আগস্ট ২০২১, ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ

আন্তর্জাতিক: আড়াই দশক আগে মোল্লা ওম’রের নেতৃত্বে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা নিয়েছিল। কিন্তু বিদেশি সৈন্যদের আ’ক্রমণে পাঁচ বছরের মধ্যে ক্ষমতা হারায় তালেবান। মা’র্কিন নেত্বতৃধীন বাহিনীর কাছে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ২০ বছর পর আবার আফগানিস্তানের ক্ষমতা নিতে যাচ্ছে তালেবানের নতুন নেতৃত্ব।

রোববার রাতে রাজধানী কাবুল দ’খলের মাধ্যমে পুরো আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তালেবান বাহিনী। প্রায় দুই দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর শত শত বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে গড়ে তোলা আফগান বাহিনী কোনো প্রতিরোধই সৃষ্টি করতে পারেনি। তালেবানের নতুন শীর্ষ নেতাদের মধ্যে প্রয়াত মোল্লা ওম’রের ছেলে মোল্লা ইয়াকুবসহ আরও বেশ কয়েকজনের নাম গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।

হায়বাতুল্লাহ আখু’ন্দজাদা: তালেবানের বর্তমান শীর্ষনেতা হিসেবে ৬০ বছর বয়সী হায়বাতুল্লাহ আখু’ন্দজাদাকে মনে করা হয়। তিনি ‘বিশ্বাসীদের নেতা’ হিসাবে বাহিনীতে পরিচিত। রাজনৈতিক, সা’মরিক, ধর্মীয় যে কোনো বি’ষয়েই তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ২০১৬ সালে তৎকালীন নেতা মোল্লা মানসুর আখতার যুক্তরাষ্ট্রের ড্রো’ন হা’মলায় নি’হত হওয়ার পর আখু’ন্দজাদা নেতৃত্বে আসেন।

এর আগে আখু’ন্দজাদা বড় ধরনের নেতা ছিলেন না, মূলত ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ হিসেবেই বাহিনীতে ছিলেন। ২০১৬ সালের আগে ১৫ বছর তাকে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুচলাক শহরের একটি মসজিদে তাকে ইমামতি করতে দেখেছেন অনেকে। মোল্লা বারাদার: তালেবানের উৎসভূমি কান্দাহার রাজ্যের বাসিন্দা মোল্লা বারাদার। তালেবান বাহিনী প্রতিষ্ঠায় তারও রয়েছে অবদান।

গত শতকের ৭০ এর দশকে সোভিয়েত বাহিনীর বি’রুদ্ধে যু’দ্ধ করেই বারাদারের লড়াইয়ের হাতেখড়ি। জনশ্রুতি আছে, সোভিয়েত বাহিনীর বি’রুদ্ধে তিনি মোল্লা ওম’রের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন। ২০০১ সালে তালেবানের পতনের পর দলটির যে ক্ষুদ্র দল তৎকালীন আফগান প্রে’সিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে সমঝোতা করতে চিঠি দিয়েছিল, সেই দলে বারাদারও ছিলেন বলে মনে করা হয়।

২০১০ সালে পাকিস্তানে গ্রে’ফতার হয়ে কা’রাগারে ছিলেন বারাদার। কিন্তু ২০১৮ সালে কাতারে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে আলোচনা গতিশীল করতে ওয়াশিংটনের চাওয়ায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরে তালেবানের রাজনৈতিক শাখার প্রধান হিসেবে দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন বারাদার। চুক্তিপত্রে তালেবানের পক্ষে সইটিও তিনি করেন।

সিরাজউদ্দিন হাক্কানি: সোভিয়েতবি’রোধী লড়াইয়ের ‘মুজাহিদ’ নেতা জালালুদ্দিন হাক্কানীর ছেলে হলেন সিরাজউদ্দিন হাক্কানি। তিনি একইসঙ্গে তালেবানের উপপ্রধান, আবার হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান। বলা হয়, আফগানিস্তানে সোভিয়েত অ’ভিযানের সময় যুক্তরাষ্ট্রই এই হাক্কানি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল এবং সোভিয়েত বাহিনীর উপর দুর্ধর্ষ নানা হা’মলায় জড়িয়ে আছে এই উপদলের নাম। পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ন্যাটোবাহিনীর ও’পরও সমানে হা’মলা চা’লিয়েছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক।

মোল্লা ইয়াকুব: তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওম’রের ছেলে মোল্লা ইয়াকুব বর্তমানে তালেবানের উপপ্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন। তার বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। তিনি বাহিনীর সা’মরিক শাখার প্রধানের দায়িত্বও পালন করেন। যু’দ্ধের কৌশল ঠিক করা, অ’ভিযান পরিচালনা করা তার কাজের অংশ। বাহিনীতে শ্রদ্ধার পাত্র মোল্লা ইয়াকুব, তা অনেকটা তার প্রয়াত বাবার কারণে। যে কারণে দলে বিভেদ কিংবা কোন্দলের সময় ঐক্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়ান তিনি।

শের আব্বাস স্তানিকজাই: দুই দশক আগে তালেবানের স’রকারের উপমন্ত্রী ছিলেন শের মোহাম্ম’দ আব্বাস স্তানিকজাই। তিনি গত এক দশক ধরে কাতারের দোহায় থাকছেন। সেখানে তালেবানের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনয় তালেবানের প্রতিনিধি দলে ছিলেন তিনি। তালেবানের হয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালান তিনি।

আব্দুল হাকিম হাক্কানি: নানা আলোচনায় তালেবানের নেতৃত্ব দেন আব্দুল হাকিম হাক্কানি। দলের ধর্মীয় কাউন্সিলের প্রধান তিনি। বলা হয়, নিজের বাহিনীতে আখু’ন্দজাদা যাকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেন, সে হলেন হাকিম হাক্কানি।

তালেবানের জন্ম অর্ধ শতক আগে সোভিয়েতবি’রোধী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। বলা হয়, সোভিয়েতের বি’রুদ্ধে যু’দ্ধ করতে তালেবান গড়ে তোলায় ভূমিকা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের, আর তাতে সহায়তা করে পাকিস্তান। তালেবানের প্রতিষ্ঠাও হয়েছিল পাকিস্তান সীমান্তবর্তী শহরে। সোভিয়েত সৈন্যদের আফগানিস্তান ত্যাগের পর আফগানিস্তানে গোত্রে গোত্রে কোন্দলের মধ্যে ১৯৯৬ সালে মোল্লা ওম’রের নেতৃত্বে তালেবান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দ’খল করে।

এক চোখ ন’ষ্ট থাকা মোল্লা ওমর পরে আল কায়দার শীর্ষনেতা ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দিয়ে নিজেদের বি’পদ ডেকে আনেন। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হা’মলার পর ন্যাটো নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী আ’ক্রমণ শুরু করে আফগানিস্তানে। তাতে ক্ষমতা হা’রিয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়ে দলটি। এরমধ্যে শুধু আত্মঘা’তী কিংবা আচমকা হা’মলার মাধ্যমেই তাদের অস্তিত্বের খবর পাওয়া যেত। ২০১৩ সালে মোল্লা ওম’রের মৃ’ত্যু হলেও তা দুই বছর গো’পন ছিল।