দুই হাত ছাড়াই অদম্য মাদ্রাসাছাত্র বেলাল

| আপডেট :  ১৪ আগস্ট ২০২১, ০৭:১১ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৪ আগস্ট ২০২১, ০৭:১১ পূর্বাহ্ণ

বলা হয়ে থাকে ইচ্ছেশক্তি থাকলে মানুষ অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারে। জয় করতে পারে যেকোনো প্রতিবন্ধকতা। আর এই কথারই অনন্য উদাহরণ বেলাল হোসেন আকন। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের উমিদপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে তিনি।

জন্মের পর থেকেই তার দুই হাত নেই শারীরিক আকৃতিও আর দশ জনের মতো নয়। তবু সমবয়সীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলছেন ফুটবল, বাইছেন নৌকা। করছেন পড়াশোনা। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে উড়িয়ে দিয়ে প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর ভরপুর আত্মবিশ্বাসে পথ চলছেন তিনি।

বেলাল ২০১৮ সালে উমিদপুর দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৮৫ এবং ২০২০ সালে নাওভাঙা ফাজিল মাদরাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় জিপিএ ৪.১৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এখন নাওভাঙা মাদরাসাতেই ফাজিল (ডিগ্রি) প্রথম বর্ষে পড়ছেন বেলাল। খেলাধুলায়ও মুগ্ধ করছেন সবাইকে। এরই মধ্যে ফুটবল খেলে আশপাশের এলাকায় সুনাম অর্জন করেছেন তিনি।

বেলালের বন্ধু নাঈম বলছিলেন, ‘হাত না থাকার বিষয়টি জীবনের কোনো কাজে বেলালকে পিছিয়ে রাখতে পারেনি। অন্যান্য ছেলে-মেয়েদের মতো সেও খেলাধুলাসহ সব প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।’

পড়াশোনায়ও বেলাল সবার সঙ্গে সমানতালে প্রতিযোগিতায় থাকতে পারেন বলে জানান নাওভাঙা সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হাবিবুর রহমান। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘পড়াশোনায়ও খুব ভালো সে। হাত না থাকার কারণে পা দিয়ে লিখলেও তার লেখা খুবই সুন্দর। শ্রেণিকক্ষে তার জন্য আলাদা বেঞ্চ বানিয়ে দেয়া হয়েছে। মাদরাসার পক্ষ থেকে ওর জন্য সব সুবিধা দেয়া হয়।’

প্রতিবেশী আবদুর রহমান বলেন, ‘বেলালকে ছোট থেকেই দেখে আসছি, খুব নম্র-ভদ্র একটা ছেলে। হাত নেই তাই পায়ে মোবাইল বেঁধে চলাফেরা করে। গান-গজল গাওয়া, খেলাধুলা, নৌকা চালানো, নামাজে ইমামতি করা, স্মার্টফোন চালানো—সব কাজই করতে পারে সে।’

বেলালের বড় ভাই নেছার উদ্দিন জানান, তার ছোট ভাই বেলালের জন্ম ২০০০ সালের ১৯ জানুয়ারি। জন্ম থেকেই দুটি হাত নেই তার। ১৫ বছর বয়সের পর উচ্চতাও তেমন একটা বাড়েনি। বেলালের উচ্চতা এখন তিন ফুট দুই ইঞ্চি।

প্রকৃতির খেয়ালে শারীরিক গঠনে দুর্বলতা থাকলেও বেলাল এটাকেই পরিণত করেছেন শক্তিতে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘জন্ম থেকেই নিজের শারীরিক অক্ষমতাকে শক্তিতে রূপান্তর করে জীবনের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। ছোটবেলা থেকে নিজের ইচ্ছাশক্তি, চেষ্টা আর মায়ের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা পেয়ে হাত না থাকলেও সব ধরনের কাজ শিখতে পেরেছি।’

বেলালের স্বপ্ন, পড়াশোনা করে তিনি শিক্ষক হবেন, শিশুদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়াবেন। তিনি বলছিলেন, ‘পড়াশোনা শেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা আমার স্বপ্নপূরণে এগিয়ে দিতে পারে।’

বেলালের বিষয়ে তার বাবা বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দেখে জন্মের পর প্রতিবেশীরা বিভিন্ন কথা বললেও তা কানে তোলেননি তিনি। বরং চার সন্তানের মধ্যে বেলাল সবার ছোট এবং কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকায় বাকি তিন সন্তানের চেয়ে বেশি ভালোবাসায় মানুষ করার চেষ্টা করছেন।