‘বাবা আমি চাকরি পেলে তোমাকে আর কষ্ট করা লাগবে না’ সেই সুমন আর নেই

| আপডেট :  ১৭ জুলাই ২০২১, ০২:২০ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৭ জুলাই ২০২১, ০২:২০ অপরাহ্ণ

করোনায় আক্রান্ত হয়ে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমন হোসেন মারা গেছেন৷ সংসারে অভাব-অনটনের মধ্যেই পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন সুমন৷ হাতে টাকা না থাকায় ছেলেকে ভর্তি করতে জমি বিক্রি আর বন্ধক রাখেন বাবা৷ ছেলেকে ঘিরেই ছিল বাবা-মায়ের স্বপ্ন৷ পড়াশোনা শেষ করে বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করবে-এমন স্বপ্ন ছিল সুমনের৷ কিন্তু করোনার থাবায় সে স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।

আজ শনিবার সকাল ১১টায় ঝিনাইদহে নিজ বাড়িতে সুমনের দাফন সম্পন্ন হয়৷ মোবাইল ফোনে সুমনের বাবা আমির হোসেনের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের৷আমির হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার আর কিচ্ছু নেই। তাকে ছাড়া কী করে বাঁচবো৷ আমাদের আশা-ভরসা ছিল সুমন। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করিয়েছি৷ বাবা-মায়ের আগে, সন্তানের চলে যাওয়া যে কত কষ্টের, তা বলে বোঝাতে পারবো না৷’

সুমন হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন৷ করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে বাড়িতে ছিলেন সুমন৷ পরিবার সূত্রে জানা যায়, পড়াশোনা শেষ করে সুমনের ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার স্বপ্ন ছিল৷ এজন্য সরকারি চাকরির পড়াশোনা করতেন।
সুমনের বাবা কৃষি কাজ করেন৷ নিজে পড়াশোনা না জানলেও ছেলেদের পড়াশোনা করে মানুষ করতে

সংগ্রাম করেছেন তিনি৷ সুমনের বাবা আমির হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়ি আর জমি মিলে এক বিঘা পরিমাণ আছে৷ ছেলেকে ভর্তি করতে জমি বিক্রি আর বন্ধক দিয়েছি৷ ভাবলাম ছেলে চাকরি পেলে সংসারের অভাব দূর হবে৷’
তিনি আরও জানান, সুমন আমাকে আশ্বাস দিয়ে বলতো ‘বাবা আমি চাকরি পেলে তোমাকে আর কষ্ট করা লাগবে না৷’
সুমনের ছোট ভাই সুজন হোসেন এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী৷

জানতে চাইলে সুজন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ভাইয়ার স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষ করে ম্যাজিস্ট্রেট হবে৷ আমাকে সব সময় ভালো করে পড়াশোনা করার পরামর্শ দিতো৷
সুমনের অসুস্থতার খবর বিভাগের শিক্ষকরা জানতে পারেন তার মৃ্ত্যুর দুদিন আগে৷ বিভাগের উদ্যোগে কিছু আর্থিক সহায়তা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন ড. ফারহানা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সুমনের অসুস্থতার সম্পর্কে প্রথমে আমরা অবগত ছিলাম না৷ দুদিন আগে আমাদের জানানো হয়৷ এতো কম সময়ে বিভাগের উদ্যোগে সামান্য কিছু অর্থ সংগ্রহ করেছি৷’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সুমনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা যায় কি-না, সে ব্যাপারে বিভাগ এবং হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব৷’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমাদের একজন শিক্ষার্থী মৃত্যুবরণ করেছে৷ এটি আমাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক৷’

সুমনের পরিবারের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করলে তিনি আরও বলেন, ‘আমি সমাজের সবার প্রতি আহ্বান করবো যে, এ ধরনের সংগ্রামী পরিবারের পাশে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই যেন দাঁড়ায়৷ এটি মানবিক এবং সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ৷’