সংসদে তুলোধুনো স্বাস্থ্যমন্ত্রী

| আপডেট :  ৩ জুলাই ২০২১, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৩ জুলাই ২০২১, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা হয়েছে সংসদে। স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম, অক্সিজেন সংকটসহ কোভিড চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তুলোধুনো করেছেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সদস্যরা। তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নির্লজ্জ আখ্যায়িত করে তার পদত্যাগ দাবিও করেন। শনিবার (৩ জুলাই) সংসদের চলতি অধিবেশনের সমাপনী দিনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এ দাবি করেন তারা।

বিএনপির গোলাম মুহম্মদ সিরাজ আলোচনার সূত্রপাত ঘটান। গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, বগুড়া এখন কোভিডের হটস্পট। গত তিনদিনে সেখানে ২৪ জন মারা গেছেন। সেখানে হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলা সংকট। সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নেই। জেলার তিনটি কোভিড হাসপাতালে করোনা রোগীতে ঠাসা।

জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করে বলেন, সেদিন সংসদে আমি সার্জিক্যাল মাস্ক কেনা নিয়ে কথা বলেছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেটা তদন্ত করবেন। বিষয়টি দেখবেন। কিন্তু তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বললেন, ‘এটি সত্য নয়’। এজন্য আজকে আমি তথ্য-প্রমাণ নিয়ে এসেছি। সংসদীয় কমিটি বিষয়টি আলোচনা করেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। সত্য বিষয়টি এড়িয়ে না গিয়ে উনার তদন্ত করা উচিৎ ছিল। তাই আমার দাবি এ বিষয়ে তদন্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, করোনা অত্যন্ত মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। সব জায়গায় সেনাবাহিনী নামিয়ে এটা প্রতিরোধ করতে হবে। পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, জিজ্ঞেস করলেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন সব দিচ্ছি। কিন্তু কোথাও কিছু নেই। এভাবে আমরা একটা বছর সময় নষ্ট করেছি। আমাদের সংসদ সদস্যকে দায়িত্ব দিলে অর্থ দিলে আমরা সব কিছু ঠিক করে দিতে পারতাম। কিন্তু আমাদের ওপর দায়িত্ব নয়। দায়িত্ব আমাদের ওপরে। তারা তো দুদিন পরে চলে যায়। জবাবদিহিতা তো তাদের নেই।

তিনি বলেন, আইসিইউ বেড আছে। কিন্তু প্রশিক্ষিত ডাক্তার নার্স নেই। অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। অধিকাংশ রোগী অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছেন। বিভিন্ন ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয় কিন্তু কোনও তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আজ পর্যন্ত আমাদের সামনে আসেনি। মানুষের জীবনের কি কোন দাম নেই? করোনাতো এখন সারা বিশ্বেই রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসায় কি ধরনের অনিয়ম মানা যায়?

এসময় তিনি বলেন, সাতক্ষীরায় অক্সিজেনের অভাবে ৭ জন কোভিড রোগী এক ঘণ্টার মধ্যে ছটফট করতে করতে মারা গেছেন। আগের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হকের বাড়ি সেখানে। সেখানকার হাসপাতালটি ফাইভ স্টার মানের হওয়া উচিত ছিল। মন্ত্রীরা যান, মন্ত্রী আসেন। কিন্তু নিজের এলাকাটাও ঠিক রাখতে পারেন না।

এদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে কি মানুষ? বুঝলাম না। উনার লজ্জা-শরম কিছু নাই, নৈতিকতা নাই, উনার পদত্যাগ করা উচিত। আমি উনার পদত্যাগ দাবি করছি।

মুজিবুল হক বলেন, এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংসদে আমেরিকার সাথে তুলনা করলেন। আমেরিকায় যে সংখ্যায় মানুষ মারা যায়, তার তুলনায় আমাদের দেশে অনেক কম মানুষ মারা যায়। মনে হয় এটা উনার ক্রেডিট, যে উনার কারণে মানুষ মারা যায় না এবং তিনি এও বললেন গত এক বছরে তিনি অনেক কাজ করেছেন। কোন দুর্নীতি হয়নি, অনেক কাজ করেছেন। কাজটা উনি করেছেন।

তিনি বলেন, আজ দেখা গেল দেশের ৩৭টি জেলায় অক্সিজেনের কোন ব্যবস্থা নাই। মানুষ মারা যাচ্ছে অক্সিজেনের অভাবে। হাসপাতালে যেয়ে অক্সিজেনের জন্য মানুষ লাইনে আছে ৫ জনকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে তো ২০ জন রোগী লাইনে আছে। শুধুমাত্র অক্সিজেনের কারণে ছটফট করে মানুষ মারা যাচ্ছে। এই যে এতো লোক মারা যাচ্ছে আজ পর্যন্ত দেখলাম না আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসাতালের ভেতরে গিয়ে দেখলেন। উনি ঘরের ভেতর বসে জুম মিটিং করেন।

তিনি বলেন, নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কোভিডের মধ্যে তার ফ্যামিলি নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে খেতে গেছিল সেজন্য ওই দেশে দাবি ওঠার পর উনি পদত্যাগ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তিনি ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য অনেক সফলতা অর্জন করেন। আনন্দে আত্মহারা হয়ে তার অফিসের সহকারীকে তিনি একটি চুমু খেয়েছিলেন এজন্য তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে, আর্জেন্টিনাতেও একই ঘটনা। আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে কি মানুষ? বুঝলাম না। উনার লজ্জা-শরম কিছু নাই, নৈতিকতা নাই, উনার পদত্যাগ করা উচিত। আমি উনার পদত্যাগ দাবি করছি।