জর্ডানের বাদশাহকে সরাতে নেতানিয়াহুর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন সালমান!

| আপডেট :  ১৫ জুন ২০২১, ০৩:১৬ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৫ জুন ২০২১, ০৩:১৬ অপরাহ্ণ

জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহকে ক্ষমতাচ্যুত করার কথিত ষ’ড়যন্ত্র সম্পর্কে আরও একঝাঁক নতুন তথ্য সামনে এসেছে। এতে বলা হচ্ছে, ওই ষ’ড়যন্ত্রের নামভূমিকায় ছিলেন সদ্য ক্ষমতাচ্যুত ই’সরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জা’মিন নেতানিয়াহু, ট্রা’ম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, জর্ডানের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং সৌদি যুবরাজ মোহাম্ম’দ বিন সালমান।

গত সপ্তাহে মা’র্কিন দৈনিক দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে ডেভিড ইগনেশিয়াসের লেখা একটি কলামে চমকপ্রদ এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
গত এপ্রিলে জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষ’ড়যন্ত্রে জ’ড়িত থাকার অ’ভিযোগে ব’ন্দি হন দেশটির যুবরাজ হামজা বিন হুসেইন। এ ঘটনায় জর্ডানের একটি ত’দন্ত প্রতিবেদন এবং সাবেক মা’র্কিন প্রে’সিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রা’ম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতির বি’ষয়ে জ্ঞানসম্পন্ন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপের ভিত্তিতে ষ’ড়যন্ত্রতত্ত্বের নতুন তথ্য ফাঁ’স করেছেন ইগনেশিয়াস।

তিনি জানিয়েছেন, ই’সরায়েল-ফিলিস্তিন সং’কট সমাধানে ডোনাল্ড ট্রা’ম্পের তথাকথিত ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চু’রি’র ঘোরবি’রোধী হওয়ার কারণেই জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষ’ড়যন্ত্র করা হয়। ট্রা’ম্পের ওই পরিকল্পনায় দ’খলকৃত পূর্ব জেরুজালেমকে পুরোপুরি ই’সরায়েলি ভূখণ্ড দেখানো হয় এবং জেরুজালেমের বাইরে আবু দিস নামে ছোট একটি গ্রামকে ভবি’ষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে প্রস্তাব করা হয়।

ওই পরিকল্পনায় জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরের অংশবিশেষ এবং গাজা উপত্যকা নিয়ে নামমাত্র একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছে, যাদের নিজস্ব কোনো সে’নাবা’হিনী থাকবে না। এছাড়া, জর্ডানি বা হাশেমীদের হাত থেকে পবিত্র আল-আকসা মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও পুরোপুরি কেড়ে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল ট্রা’ম্পের ‘শতাব্দীসেরা চুক্তি’তে।

তবে ট্রা’ম্প প্রশাসন ওই পরিকল্পনার মূল অংশ ঘোষণার আগেই বাদশাহ আব্দুল্লাহ এর তীব্র প্র’তিবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘‘জেরুজালেমের বি’ষয়ে আমি কখনোই অবস্থান বদলাব না… সে যে যা-ই বলুক না কেন। জেরুজালেম এবং পবিত্র স্থানগুলোতে আমাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব রয়েছে।… বিদেশ থেকে আমার ও’পর চা’প রয়েছে। তবে আমার কাছে এটি একটি ‘লাল রেখা’।’

প্রায় একই সময় পৃথক আরেকটি সাক্ষাৎকারে আরও জো’রালো আপত্তি জানান বাদশাহ আব্দুল্লাহ। তার কথায়, ‘‘একজন হাশেমী হিসেবে আমি কীভাবে জেরুজালেম ছাড়তে পারি? অসম্ভব।… মানুষজন ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’ বা একটি বিকল্প স্বদেশের কথা বলছে। কীভাবে? আমাদের কি কিছুই বলার নেই?’’

ইগনেশিয়াসের দেয়া তথ্যমতে, পরিকল্পনায় বা’ধা হয়ে দাঁড়ানোয় জর্ডানের বাদশাহকে হটাতে নেতানিয়াহু এবং যুবরাজ সালমানের সঙ্গে জোট বাঁধেন ট্রা’ম্পের জামাতা ও প্রধান উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার।

মা’র্কিন গো’য়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র এক সাবেক কর্মকর্তার মতে, ‘‘ট্রা’ম্পের একটা বিশ্বাসই তৈরি হয়ে গেছিল যে, জর্ডানের বাদশা তার ‘শান্তিপ্রক্রিয়ার’ অন্তরায়।’’

ওয়াশিংটন পোস্টের ওই লেখকের মতে, ট্রা’ম্প, নেতানিয়াহু ও সালমান জর্ডানের বাদশাহকে হটাতে প্রকাশ্যে কিছু করেননি, তবে তাদের কর্মকাণ্ড বাদশাহকে দুর্বল করে তোলে এবং তার শ’ত্রুদের উৎসাহিত করে।

কলামে বলা হয়েছে, বাদশাহ আব্দুল্লাহকে হটাতে সৌদি যুবরাজ সালমান ও কুশনারের সহযোগিতায় একটি চতুর অ’ভিযান চালান নেতানিয়াহু। ই’সরায়েলি গো’য়েন্দা সংস্থা মোসাদ ও শিন বেট সিকিউরিটি সার্ভিসের প্রতিনিধিরা সরাসরি বাদশাহর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।

এ বি’ষয়ে সাবেক এক মা’র্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তার ভাষ্য, ‘এটি (ষ’ড়যন্ত্র) আমাদের নয়। এসেছে আমাদের সামনে থেকে।’ যার অর্থ- নেতানিয়াহুই ছিলেন ওই ষ’ড়যন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু।সূত্র: মিডল ইস্ট মনিটর